শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইয়াবা পাচারকারীরাই মানব পাচারকারী

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
বেশি লাভের আশায় কক্সবাজার ও টেকনাফের অনেক ইয়াবা কারবারি এখন মানব পাচারে যুক্ত হয়েছে। গভীর রাতে সাগর দিয়ে পাচার করা হচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুদের। আবার কাউকে কাউকে বিমানেও পাচার করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবই টার্গেট করে পাঠানো হচ্ছে তাদের। মানব পাচার নিয়ে সম্প্রতি তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে পুলিশ ৬৫টি দালাল চক্র সক্রিয় বলে উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।

পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী বা মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে মহেশখালীর কুতুবজুমসহ বিভিন্ন গোপন আস্তানায় একত্র করে পাচারকারী চক্র। তাজিয়াকাটা ঘাট থেকে রাতেই যাত্রা করে বঙ্গোপসাগরের উখিয়ার সোনারপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া শীলখালী, নোয়াখালীপাড়াসহ এসব স্থান থেকে বোটে ওঠানো হয়। গভীর সাগরে অপেক্ষমাণ বিভিন্ন দেশের জাহাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বোটগুলো। প্রতিটি বোটে পাচারকারী চক্রের অন্তত ১০ জন করে সদস্য থাকে। যাদের কাজ হচ্ছে হুমকি দিয়ে ও মারধর করে বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও জিম্মি করে রাখা। অনেক সময় বোট ডুবে গেলে তারা সাঁতরে মাছ ধরার ডিঙিনৌকায় আশ্রয় নেয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে কুতুবজুমের তাজিয়াকাটা বসতি গড়ে নূর ওরফে বার্মাইয়া নূরের পরিবার। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ইয়াবা পাচারে সক্রিয়। নূরের নেতৃত্বেই তার চার ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের রয়েছে মিয়ানমার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। মিয়ানমারে থাকা আত্মীয়দের মাধ্যমে ইয়াবা এনে ইয়াবার সাম্রাজ্য গড়েছে চক্রটি। ভাড়া করা বোটের মাধ্যমে ইয়াবার চালান এনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। এই চক্রের সক্রিয় নেতৃত্বে রয়েছে মো. নূর, তার ভাই মো. সেলিম, তাদের দূরসর্ম্পকীয় ভাগিনা মো. সোহেল। কুতুবজুম পশ্চিম পাড়ার বাদশা মেম্বারের ছেলে আবদুর রহিম, তার ফুফাতো ভাই লুতু মিয়া জড়িত। এখন তারা ইয়াবা কারবার ছেড়ে মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এ চক্রটি ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ বছর ধরে তারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। মূলত নূরের পরিবার রোহিঙ্গা হওয়ায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের বহু আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজন রয়েছে। এই সুযোগ ব্যবহার করে তারা মানব পাচারের কারবার করছে। নূরের ভাই মো. সেলিম ক্যাম্পে গিয়ে স্বজনদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে। মহেশখালীর কুতুবজুমের ওই চক্রে নূর, তার ভাইসহ অন্তত ১০ জন সক্রিয়। তা ছাড়া উখিয়ার সোনাপাড়ায় রয়েছে পাঁচজনের একটি চক্র। আর উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে ২০ জনের বেশি। পাশাপাশি টেকনাফের রয়েছে কয়েকজন। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে রয়েছে অন্তত ২০ জন। তারা জাহাজ সরবরাহসহ সবকিছু বিষয় ম্যানেজ করে। কিছুদিন আগে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর থেকে চক্রের প্রধান হোতা নূরসহ অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে বোটের মালিক কুতুবজুমের মৌলভী গফুরকে এলাকায় দেখা যায়।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কক্সবাজারে এক সরকারি সফরকালে মানব পাচারের দালাল চক্র ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের প্রতিবেদনে টেকনাফ ও কক্সবাজারে মানব পাচারে সক্রিয় ৬৫টি দালাল চক্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি চক্রে ১৫ থেকে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছেন। চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকার একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্য পেয়ে থাকেন। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ মানব পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হলেও পাচারকারী চক্রের বিস্তৃতি রয়েছে মহেশখালী থেকে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত।

মহেশখালীতে পাচারকারী চক্রের প্রধান ‘ঘাঁটি’ হচ্ছে কুতুবজুম ইউনিয়ন। কয়েক বছর ধরে এসব চক্র পাচারে সক্রিয়। গত দুই মাসে চক্রগুলো কয়েকটি চালান পাচার করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর দালাল হিসেবে কাজ করছে ১৬ নম্বর ক্যাম্পের মো. সায়ীদের ছেলে রোহিঙ্গা মো. রফিক ও বাদশা মিয়ার ছেলে হারুনের নেতৃত্বে অন্তত ৫০ জন। চক্রের সদস্যরা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও বাহারছড়া উপকূল দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ মালয়েশিয়ায় পাচার করছেন। দালালচক্রের নেতৃত্বে আছেন শাহপরীর দ্বীপের ধলু হোসেন ও শরীফ হোসেন। অদৃশ্য কারণে ধলু ও শরীফ সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। টেকনাফের সাবরাং এলাকার আকতার কামাল, সাঈদ কামাল, মোয়াজ্জেম হোসেন; রামুর কালিমারছড়ার মোহাম্মদ হোসেন; শাহপরীর দ্বীপ মাঝরপাড়ার জায়েত উল্লাহ, সাব্বির আহাম্মদ, সাজেদা বেগম, আব্দুল্লাহ, ইউনুচ, কলিম উল্লাহ, আব্দুস শুক্কুর, ঘোলাপাড়ার শামসুল আলম, কবির আহমদ, হাজিপাড়ার মুজিব উল্লাহসহ অন্তত ২৫০ জনের নাম এসেছে। কক্সবাজার এলাকায় দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নরসিংদীর মো. শাহজালাল, নুর মোহাম্মদ প্রকাশ ইমরান, জিয়াউর রহমান; নারায়ণগঞ্জের রফিকুল ইসলাম, শহিদ উল্লাহ, আবদুস সাত্তার; চুয়াডাঙ্গার মো. আকিম, মো. কাশেম, আকিল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জের সাত্তার মোল্লা; কুড়িগ্রামের মো. সালাম, সাতক্ষীরার আশরাফ মিয়া; বগুড়ার সাহাব উদ্দিন; যশোরের আবুল কালাম; মেহেরপুরের আহাম্মদ উল্লাসহ অন্তত ১৫০ জন। চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে নিয়ে টেকনাফের দালালদের হাতে তুলে দেন। এরপর ছোট ছোট ট্রলারে মাছ ধরতে যাওয়ার অজুহাতে রোঙ্গিাদের সঙ্গে তাদেরও পাচার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, ‘কুতুবজুমকেন্দ্রিক মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে এটা ঠিক। মূলত চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারী চক্রগুলোই মানব পাচারে সক্রিয়। কম ঝামেলায় বেশি টাকা আয়ের লোভেই ইয়াবা ব্যবসীয়রা শুষ্ক মৌসুমকে কেন্দ্র করে মানব পাচারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিষয়টি আমি বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে জানিয়েছি। ইয়াবা ও মানব পাচার রোধে আমার যা সহযোগিতা করা দরকার, প্রশাসন চাইলে আমি করব।’

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ইয়াবা কারবারিরা এখন মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ইয়াবা কারবারের চেয়ে মানব পাচার করতে পারলে অর্থ পাচ্ছে বেশি। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিও অনেকাংশে কম। কক্সবাজার ও টেকনাফে মানব পাচারের ঘটনা বেশি। এ নিয়ে পুলিশের একটি সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দালাল চক্রের নাম উঠে এসেছে।

ভয়েস/আআ/সুত্র:দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION