বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কলাতলীতে অফিস আছে, কার্যক্রম নেই!

আবদুল আজিজ:
অফিস আছে, কর্মকর্তা-কর্মচারি আছে। সরকারি বেতন-ভাতা ও নানা সুবিধা সবই আছে। নেই শুধু কার্যক্রম। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনষ্টিটিউটের কক্সবাজার উপ-কেন্দ্র। কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলীতে অবস্থিত এই বন গবেষণা কেন্দ্রটি এখন অঘোষিত পর্যটক ভাড়ার রিসোর্টে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বন গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ধরণের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এখন শুধু পর্যটক ভাড়ার ধান্দায় ব্যস্ত কর্মকর্তারা। তবে, দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, মাত্র ৫ বছর ধরে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। তবে রিসোর্ট হিসাবে ভাড়া দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

গত ১৯৯৩ সালে কক্সবাজারের শহরের হোটেল-মোটেল জোনের প্রাণকেন্দ্রে আড়াই হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বন গবেষণা উপ-কেন্দ্রটি। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনষ্টিটিউটের আওতায় প্লান্টেশন ট্রায়াল ইউনিট হিসাবে এ অফিস কাজ শুরু করে। দ্বিতল বিশিষ্ট উপ-কেন্দ্রটিতে একজন সাব-ষ্টেশন কর্মকর্তা, বনমালি ও কর্মচারি রয়েছে। প্রথম দিকে গবেষণার কিছুটা কার্যক্রম ছিল, কিন্তু এখন নেই। কক্সবাজার জেলার বনাঞ্চলের পাশে গড়ে উঠা স্থানীয়দের বসত-ভিটার আঙ্গিনায় গাছের চারা রোপন, নার্সারির মাধ্যমে বন সৃজনের মাটি ও পানি পরিক্ষা সহ মহেশখালীর শাপলাপুর ও টেকনাফে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে গবেষণার কাজ শুরু হয়। বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর পুরো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে বন্ধ হয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। বছরের পর বছর ধরে এভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

উপ-কেন্দ্রে কার্যক্রম না থাকার কথা স্বীকার করে উক্ত অফিসের সাব-ষ্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘এক সময় পুরোদমে কার্যক্রম ছিল। এখন মাত্র ৫বছর হল কোন কার্যক্রম নেই। সরকারি কোন প্রকল্প না থাকলে আমাদের করার কিছুই থাকে না। শুধু এই উপ-কেন্দ্র নয়, কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও চকরিয়াতে আরও দুটি উপ-কেন্দ্র রয়েছে। সেখানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে কারও বেতন ভাতা বন্ধ নেই বলেও জানান’।

পর্যটকদের কাছে রুম ভাড়া দেয়ার কথা অস্বীকার করে আব্দুল হান্নান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন,‘এই ভবনে যে রুম গুলো রয়েছে, সেগুলো শুধু অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভিজিটে আসলে অবস্থান করেন। এর বাইরে নয়। ফলে পর্যটকদের রুম ভাড়া দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক হোটেল মালিক ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পর্যটনের ভর মৌসুমে বন গবেষণার উপ-কেন্দ্রটি পর্যটকদের দখলে চলে যায়। এটি অঘোষিত হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে পরিণত হয়। অসাধু কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান ও তার কর্মচারিরা এসব কক্ষ গুলো পর্যটকদের ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অনেকেই অলস সময় পার করছেন। উপ-কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ধরণের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের কলাতলী পর্যটন জোনের পাহাড়ের পাশে গড়ে উঠেছে বন গবেষণা উপ-কেন্দ্রটি। দ্বিতল ভবনটির নিচে খালি পড়ে থাকলেও দ্বিতীয় তলায় একটি সম্মেলন কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ ও তিনটি রেষ্ট রুম রয়েছে। নেই কোন গবেষণার কাজে নিয়োজিত কোন যন্ত্রপাতি। সু-স্বজ্জিত রুম গুলো পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত এক বৃদ্ধ। সেই রুমগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সরকারি কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা গবেষণার কাজ বা সরকারি সফরে আসলে ওই রুম গুলোতে অবস্থানের কথা রয়েছে। কিন্তু, রুম গুলো তাদের বঞ্চিত করে পর্যটকদের ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়াও উপ-কেন্দ্রটির সরকারি জমি আড়াই হেক্টরের কথা বলা হলেও এক হেক্টর জমিও চোখে পড়েনি। পার্শ্বে কলাতলী বিট কার্যালয়ে একটি সিপিজি অফিসের পরিত্যক্ত সেমি পাকা টিনসেট অফিস রয়েছে। অন্যান্য জমিগুলো দখলে চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। এভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে বন গবেষণার উপ-কেন্দ্রটির কার্যক্রম চলে আসলেও দেখার কেউ নেই।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION