বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কেন ভাঙছে সমুদ্র সৈকত?

আবদুল আজিজ:
ভেঙ্গে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সম্প্রতি সৈকতের ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সৈকতের লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্ট সহ একাধিক স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণীয় সৈকতের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, কেন ভাঙছে সমুদ্র সৈকত? এ ভাঙন থেকে উত্তোরণের উপায় কি? এনিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের ভূ-তাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: জাকারিয়া বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল। মুলত: বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকে। প্রকৃতিক নিয়মে সমুদ্র একদিকে ভেঙ্গে, অন্যদিকে ভরাট হয়। এটি সমুদ্রের নিয়ম। কিন্তু, এবছর সমুদ্র উপকূল বেশী ভাঙছে এবং ভেঙ্গে যাওয়ার চিত্রটি বেশী।’

মো: জাকারিয়া বলেন, ‘মৌসুম ভিত্তিদ সাগরের পানি বা ঢেউ সব সময় পরিবর্তন হয়। পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র ভাঙতে পারে। সাগরের ¯্রােত ও ঢেউয়ের গতিপথ পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের ভাঙন হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভুমন্ডলীয় কারণে এখন বেশীরভাগ সমুদ্র ভাঙছে। শুধু সমুদ্রের লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্ট নয়, সৈকতের অন্যান্য এলাকায়ও ভাঙছে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা ইনষ্টিটিউটের (ইনষ্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স) সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিও কারণে ঘনঘন নি¤œচাপ সৃষ্টি হচ্ছে। একারণে বড় বড় পানির ঢেউ উপকূলে শক্তিশালী হয়ে আছড়ে পড়ছে। ফলে সমুদ্র সৈকতে ভাঙন হতে পারে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সমুদ্র ঢেউগুলো অনেক শক্তিশালী। এছাড়াও মনুষ্যত্ব অত্যাচারে সাগরে ভাঙন হতে পারে। কারণ, সমুদ্র উপকূলে শীত মৌসুমে বালি জমা হয়, আর বর্ষার মৌসুমে বালি সরে যায়। কিন্তু, কক্সবাজার সৈকতে যেহেতু বেশী পর্যটক শীত মৌসুমে আসে, সেহেতু সমুদ্রে বালি জমা হতে দেয় না। ফলে প্রাকৃতিকভাবে যে বালু জমা হওয়ার কথা তা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘সৈকত ভাঙনরোধে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রক্ষায় পরিবেশবিজ্ঞানী, সমুদ্রবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সমন্বিতভাবে শক্তিশালী ও টেকসই উপায় বের করতে হবে। আমি বলব, কক্সবাজারের উপকূল রক্ষায় সমুদ্রের স্রোত ও ঢেউয়ের প্রকৃতি ও ভূগঠনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে জৈবপ্রকৌশল শক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। একই সাথে সমুদ্রপাড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে পরিবর্তন আনতে হবে। সৈকতকে প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সৈকত সুরক্ষায় পর্যটন ও পর্যটকদের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। তা না হলে আগামীতে পর্যটন শিল্প থেকে শুরু করে দেশের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গত সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে কক্সবাজারে সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমে ভাঙছে পর্যটন সৈকত লাবনী ও সুগন্ধা সহ  কক্সবাজার সৈকত বালিয়াড়ি। অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত সৈকত হারাচ্ছে তার চিরচেনা সৌন্দর্য। ভাঙ্গনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সৈকতের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেট।

সাগরের জোয়ারের পানির ভাঙন তীব্র ভাঙনের এ পরিস্থিতিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় সাগরের ভাঙ্গনরোধে তাৎক্ষণিক বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন কবির বিন আনোয়ার।

সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে একনেকে ৩,১৪০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প জমা দিয়েছি। নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ হবে। তখন হয়তো সাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে কক্সবাজার।

এদিকে, সৈকতের শক্তিশালী ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত সৈকত এলাকা ভেঙ্গে তছনছ হয়েগেছে। বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বালু সরে গেছে। এই ভাঙনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ভাঙ্গনের কবলে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি, ঝাউগাছ। ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙ্গন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত চলে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও টিওব দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ঢেউয়ের আঘাতে লাবণী পয়েন্টের বেশ কয়েকটি জিও ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে। ওই এলাকার ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কও নদীতে তলিয়ে গেছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION