শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
১০ কৃষক অপহরণ মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু গ্রেফতার নৌকা তল্লাশি করে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ নৌকা জব্দ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে যা জানালেন প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ দুর্নীতি: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চুক্তি ১৪ লাখ টাকায়, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ , অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা চুয়েট যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী দৌলতদিয়ায় শুটিং করাটা জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আরও ৩ দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি কক্সবাজার থেকে বিজিপির ২৮৮ সদস্যকে মিয়ানমারে ফেরত

কোনো কাজ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক রাজিয়াল্লাহু আনহু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি নামাজ শুরু করি আর আমার ইচ্ছা থাকে তা দীর্ঘ করার। এ অবস্থায় যখন কোনো শিশুর কান্না শুনি, আমি নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কারণ আমি জানি, তার কান্নায় তার মায়ের কী কঠিন কষ্ট হয়।’সহিহ বোখারি : ৭১০

নামাজ অবস্থায় কোনো শিশুর কান্না শুনতে পেলে তার মায়ের কষ্ট হয় বিবেচনা করে নবী করিম (সা.) নামাজ সংক্ষেপ করে দিতেন। নামাজ ছিল নবী করিম (সা.)-এর সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজে আমার নয়ন জুড়ায়।’ নামাজ দ্বীনেরও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কোরআন মজিদে সবচেয়ে বেশি হুকুম নামাজ কায়েমেরই দেওয়া হয়েছে। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় এ বিধান পালনে রত থাকা অবস্থায় শিশুর কান্না শুনে তা সংক্ষেপে শেষ করার দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় নবী করিম (সা.) অন্যের আবেগ-অনুভূতির কতটা মূল্য দিতেন এবং অন্যের কষ্ট-ক্লেশের প্রতি কেমন লক্ষ রাখতেন।

ভাবে নিজ আমল এবং ওই আমলের ব্যাখ্যা দ্বারা নবী করিম (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিচ্ছেন কীভাবে অন্যের আবেগ-অনুভূতি ও সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। নিজ ইচ্ছাপূরণই বড় কথা নয়। এমনকি সেই ইচ্ছা যদি ইবাদত-বন্দেগি-সংক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রেও অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি।

আমরা জানি, কোনো মানুষ একা এক ব্যক্তি মাত্র নয়। কোনো না কোনোভাবে অন্যের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছেই। একদম একা যখন সে নয়, তখন নিজ ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও একান্তই তার একার বিষয় ভাবার সুযোগ নেই। তার পরও অধিকাংশ লোক নিজ ইচ্ছাকে একান্তই নিজের বিষয় হিসেবে দেখে। যখনই তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগে, তা পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। চিন্তা করে না তার ইচ্ছাপূরণের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না? তার হয়তো ইচ্ছাপূরণ হয়ে যাবে। ইচ্ছাপূরণজনিত তৃপ্তিবোধ হবে। এর পাশাপাশি যাদের সঙ্গে সে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত, তাদের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হবে, তাতে তাদের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, অন্ততপক্ষে মানসিক কষ্ট স্বীকার করতে হবে তা ভাবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করছে না। এভাবে অনেক অবিবেচক মানুষ দ্বারা সংশ্লিষ্টজনরা সমানে অন্যের ইচ্ছাপূরণের নির্যাতন ভোগ করছে। ঘরে-বাইরে এর দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই।

ঘরে স্বামীর ইচ্ছা হলো মেহমান খাওয়াবে। ইচ্ছা যখন জেগেছে, তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সুতরাং সে বন্ধুদের দাওয়াত করে ফেলল। খুব ভালো কথা। মেহমান খাওয়ানো সওয়াবের কাজ। কিন্তু বিষয়টা যেহেতু তার ও মেহমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর আয়োজনে ঘরের অন্যদেরও সংশ্লিষ্টতা আছে, তাদের মানসিক ও কায়িক পরিশ্রমের বিষয় আছে, তখন তার উচিত ছিল ইচ্ছাপূরণে নেমে পড়ার আগে ঘরের লোকদের মতামত জানতে চাওয়া। কিন্তু সে তা জানতে চায়নি। এটা সাক্ষাৎ নির্যাতন।

উচ্চ আওয়াজে গান বাজানোর ইচ্ছা আজকালকার তরুণ-তরুণীরা নানা উপলক্ষে পূরণ করে থাকে। শান্তিকামী মানুষের পক্ষে তাকে অত্যাচার বললে বোধ হয় কমই বলা হবে। নিরীহ জনগণ সে অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য। এভাবে পরিবার, সমাজ ও অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্র মানুষ অন্যের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রণায় কাতর হচ্ছে। এগুলো সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক নয়। অন্যের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে আপন ইচ্ছাপূরণে ব্যাপৃত হওয়া শুধু শান্তিই বিঘিœত করে না, এতে নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষার মর্যাদাও ক্ষুণœ হয়। নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষা তো এটাই যে, ‘নিজ ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রে অন্যের সুবিধা-অসুবিধার মর্যাদা দাও। তা পার্থিব ইচ্ছাপূরণের বেলাতেই নয়, এমনকি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও।’ তিনি তো শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজকেই এর দৃষ্টান্ত বানিয়েছেন।

বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, সাধারণ মানুষের যত দুঃখ-কষ্ট তার সিংহভাগই সরকারি-বেসরকারি ক্ষমতাধরদের ইচ্ছাপূরণের খেসারত। যত দিন না তাদের ইচ্ছাপূরণের প্রতিযোগিতা কমবে, সাধারণ জনগণের তত দিন খেসারত দিয়েই যেতে হবে। আল্লাহর ভয় যাদের নেই, তাদের ইচ্ছাপূরণের দৌড়ঝাঁপ যে লাগামহীন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দ্বীন ও ইসলামের সংশ্লিষ্টতা যেখানে আছে, সেখানে যদি একের ইচ্ছাপূরণ অন্যের পক্ষে অত্যাচারে রূপ নেয়, নিঃসন্দেহে তা আক্ষেপের বিষয়।

যে হাদিস সামনে রেখে আলোচনা শুরু করেছি তা যখন নামাজের মতো মহান ইবাদতে আপন ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণের সবক দেয়, তখন অন্যসব দ্বীনি ক্ষেত্রেও যে ইচ্ছার প্রয়োগে সাবধানী হতে হবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই সাবধানতা যে যথেষ্ট অবলম্বন করা হচ্ছে, তা কি শক্ত করে বলা যাবে?

ইচ্ছা হলো একটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করব। অমনি নেমে পড়লাম। মনে চাইল একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করি। ব্যস কাজ শুরু করে দিলাম। চিন্তা করলাম না এখানে মসজিদ বা মাদ্রাসার আদৌ প্রয়োজন আছে কী নেই। কিংবা একটির বর্তমানে বিনা প্রয়োজনে আরেকটির প্রতিষ্ঠা এলাকার মানুষের ভেতর বিভক্তি সৃষ্টির কারণ হবে কি না? কোনো কিছুই ভাবা হয় না। ইচ্ছা যেহেতু জেগেছে তা পূরণ করতেই হবে।

যেকোনো ভালো কাজ সুচিন্তিতভাবে করাই বাঞ্ছনীয়। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) চাইলেন সবটা সম্পদ দান করে দেওয়ার অসিয়ত করবেন। কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ইচ্ছাপূরণ করতে দিলেন না। তিনি বললেন, তাহলে অর্ধেকের অসিয়ত করি? তাও নিষেধ করলেন। শেষে বললেন, তিন ভাগের একভাগ? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তিন ভাগের একভাগ? তাও তো বেশিই। তবুও তিনি এটা অনুমোদন করলেন। সেই সঙ্গে বললেন, তোমার ওয়ারিসরা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে, তার চেয়ে বরং তাদের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যাওয়াই শ্রেয়। এ হাদিসও শিক্ষা দেয় দ্বীনি কাজও শুধু ইচ্ছাবশেই করতে যাওয়া সমীচীন নয়। তা করতে হবে সুচিন্তিতভাবে।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক/muftianaet@gmail.com

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION