বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

চবি প্রশাসনে গণপদত্যাগের নেপথ্য কারণ কী?

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এখন তাদের হয়তো বোধোদয় হয়েছে যে উপাচার্যের স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষ। আমাদের তো থাকতে হবে। আমরা এই অন্যায় বা আইন লঙ্ঘনের সঙ্গে আর থাকব না। অথবা তাদের কারও কারও হয়তো চাওয়া-পাওয়ার হিসাবটা মিলে নাই। সর্বোপরি কারণটা ব্যক্তিগত নয় তা বলাই যায়।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একসঙ্গে ১৬ জনের পদত্যাগ ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পদত্যাগকারী শিক্ষকবৃন্দ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও এর পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, উপাচার্যের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল টিমের মনোমালিন্য চলছিল। এর জের ধরেই প্রক্টরিয়াল টিমের বড় একটি অংশসহ প্রক্টরের আস্থাভাজন শিক্ষকরা একযোগে পদত্যাগ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ সংক্রান্ত মতবিরোধ ও কয়েকটি বিষয়ে মতানৈক্যের জেরে চবি উপাচার্য প্রক্টর ও একজন সহকারী প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে বলেন। পরবর্তীতে প্রক্টর প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা তার আস্থাভাজনদের নিয়ে একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে একজন পদত্যাগ করতেই পারেন। কিন্তু যখন একসঙ্গে ১৬ জন একযোগে পদত্যাগ করেন তখন কারণটি যে কেবল ব্যক্তিগত নয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘যখন এমন গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটে তখন দু’টি বিষয় সামনে আসে। শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। সে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে।

‘এখন তাদের (পদত্যাগকারী) হয়তো বোধোদয় হয়েছে যে উপাচার্যের স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর ক’দিনই বা তিনি থাকবেন। আমাদের তো অনেক দিন থাকতে হবে। আমরা এই অন্যায় বা আইন লঙ্ঘনের সঙ্গে আর থাকব না। সেই কারণে তারা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। অথবা তাদের কারও হয়তো কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল কিন্তু সেই হিসাবটা মিলে নাই। সেটা থেকেও হতে পারে। পদত্যাগের কারণ কেবলই ব্যক্তিগত নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে এভাবে একযোগে পদত্যাগের কারণ কী তা জানতে চাইলে সদ্য প্রক্টরিয়াল টিম থেকে পদত্যাগকারী দুই শিক্ষক বলেন, গবেষণা কাজ ও নিজ পরিবারকে সময় দিতে পারছিলেন না তারা। এজন্য দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজ কাজে ফিরতে চান তারা।

সদ্য পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস লাবলু বলেন, ‘আমাদের পদত্যাগটা পূর্বপরিকল্পিত না। সকালে কথা হতে হতে একসঙ্গে অনেকের পদত্যাগের বিষয়টি ঘটে গেছে।

উপাচার্যের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ম্যামের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম মানেই আমাদের সুনাম। ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর এখন একেকজন একেক কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।’

পদত্যাগ করা প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, ‘প্রশাসনের দায়িত্ব পালন ছাড়াও আমি গবেষণা কাজ করি। আমার গবেষণা এবং একাডেমিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। আমি কাউকেই পদত্যাগ করতে বলিনি।

‘শিক্ষকদের নিজ নিজ স্বাধীনতা আছে। তারা হয়তো শুনেছেন যে আমি পদত্যাগ করব। তাই তারাও করেছেন। অনেকে হয়তো আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছিলেন। তাই তারাও এখন পদত্যাগ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি জাপান যাওয়ার আগে মৌখিকভাবেও উপাচার্যকে পদত্যাগের কথা বলেছিলাম। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছি।

‘আরেকটি বিষয় হলো, এখানে এই দায়িত্বে থেকে আমি যদি শিক্ষকদের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে না পারি, তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কাজ করতে না পারি তাহলে এখানে থেকে কী হবে?’

বিষয়টি নিয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মন্তব্যের জন্য একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল টিমের একটি বড় অংশসহ একাধিক পর্ষদের ১৮ পদে ১৬ জন পদত্যাগ করেছেন।রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।

তাদের মধ্যে প্রক্টরিয়াল টিমের পদ থেকে প্রক্টরসহ ছয় সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া, সহকারী প্রক্টর এস এ এম জিয়াউল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, রামেন্দু পারিয়াল, শাহরিয়ার বুলবুল ও গোলাম কুদ্দুস লাবলু।

এর বাইরে হল ও অন্যান্য পর্ষদ থেকে যারা পদত্যাগ করেন তারা হলেন- শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া, শাহজালাল হলের হাউজ টিউটর শাহরিয়ার বুলবুল, এ এফ রহমান হলের হাউজ টিউটর অনাবিল ইহসান, প্রীতিলতার হলের হাউজ টিউটর ফারজানা আফরিন, শহীদ আব্দুর রব হলের হাউজ টিউটর ড. এইচ এম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, শহীদ আব্দুর রব হল হাউজ টিউটর রমিজ আহমদ, শামসুন্নাহার হলের হাউজ টিউটর সাকিলা তাসমি, খালেদা জিয়া হলের হাউজ টিউটর শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা এবং আলাওল হলের সিনিয়র হাউজ টিউটর ঝুলন ধর।

এর বাইরে আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক পদত্যাগ করেন।ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানেই নতুন প্রক্টর নিয়োগ

এদিকে প্রক্টরের পদত্যাগের ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানেই নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।চবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ বলেন, ‘একজন প্রক্টর ও দুইজন সহকারী প্রক্টরকে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার। এর বাইরে দুজনকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের প্রভাষক রোকন উদ্দিন ও ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেসের প্রভাষক সৌরভ সাহা জয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION