বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
বাহাউদ্দীন বাহার:
সমুদ্র পাড়ের সমুদ্র কন্যা, স্বপ্নের রাজ্যে বিভোর, আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বেড়ে ওঠা আত্মপরিচয়ে নিজেকে সমাজের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রামী কন্যা রামিসা (ছদ্মনাম)।
রামিসা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাপিত জীবন জোয়ারে নিশ্বব্দে ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আজ নিজেকে নিয়ে অহংকার করে। এমনো হাজারো রামিসা সমাজে নিজেকে বলি দিলেছে। এমনই একজন রামিসার গল্পের কাহিনি।
আমি যখন ভার্সিটিতে পড়ি ১ম বর্ষে ঢাবি একজনের সাথে রিলেশন হয় তাও উনি কোচিং এ ক্লাস নিতেন আমাদের সেদিক দিয়ে পরিচয়।
উনি ছিলেন ১ ছেলে ৩ বোন খুবই গরীব পরিবার, বাড়ি বৃহত্তর কুমিল্লা। অনেক সময় আমার হাত খরচ থেকে উনাকে দিয়েছি। তবে আমাদের তেমন দেখা হয়নি, আমি চবিতে ভর্তির পর ২ বার এসে দেখা করেছিল। হলে ছিলাম ৩ মাস মত।
তখন থেকে উনার সাথে সম্পর্কের তেমন কথা হত না, পিটিআইতে খুব চাপ, তারউপর ফাইনাল পরিক্ষা।
এরমধ্য আমার ছোটভাই কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করে, উনার সাথে হলে উঠে কোচিং করার জন্য। ছিল ২/৩ মাস মত। আমার ছোটভাই উনার সম্পর্কে ভালো মতামত দেয়নি। সে নাকি সবসময় ফোনে কথা বলে, কয়েকটা সীম আছে, এই অনেককিছু।
আমি সরকারি একটা চাকরি তে থাকাকালীন অনেক প্রস্তাব আসে। আমার আব্বু আম্মুও চাইছে বিয়ে দিয়ে দিতে। তখন উনার কথা আমি বলি। আমার আব্বু রাজি ছিল কিন্তু আম্মু ভাইয়ের কথাশুনে সায় দিল না।
পরে চলতে লাগল, চাকরি, ভার্সিটি। একবছর শেষে গ্রামে চলে আসি। গ্রামে আমার আরও তিন চাচার পরিবার আছে। একচাচার বাসায় উঠলাম। আমাদের জায়গাটা খালি ছিল। তাতে আব্বু আম্মু আমার জন্য নতুন করে বাসা তৈরি করল। হঠাৎ আমার এক টিচার্স ছিল যে প্রাইমারী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি ভর্তি অবধি পড়িয়েছে। স্যারের অবদান বালিকা বিদ্যালয়ে আমি ঠিকেছিলাম। সে স্যার আমার জন্য প্রস্তাব আনল প্রবাসী। ভালোমন্দ না দেখে স্যারের কথায় আমার আব্বু আম্মু রাজি।
আমি চেয়েছিলাম বা যতটুকু তখন বুজতে শুরু করি। তখন মনে সে ছেলেটা গরীব তো কি হয়েছে, ভালো ঢাবি স্টুডেন্ট, জব হবেই। আর ওরকম দোষ সবারই থাকে পরে হয়ত ঠিক হবে। কিন্তু না আম্মু বলে ওদিকের ছেলে হবে না। স্যার যে প্রস্তাব আনে প্রবাসী দোকান আছে, অনেক টাকা পয়সা আছে।
আব্বু আম্মু রাজি হয়ে গেল। আমার মনের বিরুদ্ধে হওয়ায়, আমি কোন বন্ধু- বান্ধবীকেও বলি নি এবং কি কারও সাথে একটু শেয়ারও করিনি। এটা মনে করতাম বাবা- মা যা করবে হয়ত তো ভালোটা করবে। যেখানে স্যার আছেন। আর আমার বড় জ্যাঠা উনি ও ছিলেন সব কথাবার্তায়।
তখন আমি নিজের সাথে নিজে কি বলব একধরনে রাগ বা জিদ বলতে পারেন। আব্বু আম্মুর উপর ছেড়ে দিয়েছি তারা যা ভালো মনে করে তা হবে। একবার তারা দেখতে আসে তারপর ৫ দিন পর এ্যান্গেজমেন্ট হয় তারপর বিয়ে, ২০১২ তে। তখন ২য় বর্ষে অনার্স।
যে পরিবারের সাথে বিয়ে হয়, তারাও বড় পরিবার। ভাই বোন, শাশুর – শাশুড়ি আছে।
আর আমার পরিবার সম্পর্কেও তাদের ধারণা আছে। আমার পড়ালেখা ও জব সব মেনে নিয়েছে।
আমি বিয়ের পর শাশুর বাড়িতে ছিলাম ৩ মাস মত। চাকরি গ্রামের বেশীর ভাগ আমাকে গ্রামে থাকতে হতো। আর রায়নার আব্বু ৩ মাস পরে বিদেশে চলে যায় । এবং যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে হয়নি অবশেষে ওমরার ব্যবস্থা করে। আমি ও শাশুর ওমরা যায় এক মাসের।
তখন থেকে আমার প্রতি রায়নার আব্বুর আচরণ ভিন্ন অনুভব করি। আগের আন্তরিকতা আস্তে আস্তে কেমন যেন আগের মত ছিল না। আর আমি তখন থেকে… রায়না ৫ মাস। শরীরও ভালো ছিল না। এককথায় কোনভাবেই আমার একমাস ভালো কাটেনি। আম্মুর সাথে কথা বলতাম শুধু, আমার এখানে কিছু ভালো লাগছে না, তারপরও সব রোজা ও নামাজ আদায় করেছি। অবশেষে ফিরে আসি বাংলাদেশে। আসার পর কয়েকদিন পর আবার গ্রামে।
গ্রাম থেকে শ্বাশুর বাড়ী রায়নার ট্রিমেন্ট করতাম, কিন্তু কোন বোনরা আসত না বা সহযোগীতা করত না, আমার আম্মু আসত। রায়নার দাদুর বাড়ি এক পাহাড়ি গ্রামে। আম্মুই ডাঃ দেখাত আবার গ্রামে দিয়ে যেত। রায়নার বাবারও পরিবর্তন কিন্তু কি কারণে উওর জানা নেই। তখন আবার শুরু হল ২য় বর্ষ ফাইনাল। আমি যেখানে ৬ মাস ছুটি পাই সেখানে ২ মাস আগে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দেবর ছিল বাসা নিয়ে ওখানে চলে যায় পরিক্ষা দেওয়ার জন্য। আম্মু ছিল ও একটা মেয়ে ছিল সাথে। তখন আমার শশুরের বাধাঁ এত পড়ে কি হবে?
অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রাম, ভার্সিটি দৌরাদোরি কেন?
তখন আমার আব্বু কিছুটা বুঝেছিল কিন্তু আমাকে বুঝতে দেয় নি। আব্বু আম্মু বলত ওসব নিয়ে টেনশন করিস না তুই পরিক্ষা দে।
তারপর আমার ডেলিভারী ডেইট ছিল ডিসেম্বরের। ১২ তারিখ একটা শেষ পরিক্ষা ছিল। তার আগে আমার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। তা দেখে আম্মু বললো হাসপাতালে পাশাপাশি থাকতে। তারপর ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান কে বলে পরিক্ষা টা পিছিয়ে দেয়, এবং আমার ডেলিভারীর পর ডেইট দিবে বলে। তখন রায়নার আব্বু বলল শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে। আব্বু আম্মু বলল, প্রতিমাসে হাসপাতালে গিয়েছিলি তখন একটু খবর নেই নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলি খবর নিল না, দেখল না। এখন গিয়ে মরলেও খরব নিবে না। তার চেয়ে আমাদের চোখের সামনে থাকবি অনেক হাসপাতাল ও ডাঃ কোন সমস্যা হবে না।
একপ্রকার তাদের কথা না শুনে আমিও আব্বু আম্মুর উপর ভরসা করে বাবা মার সাথে থেকে যায়। রায়নার আব্বু কথাবার্তা কম বলত, তবে খরচ দিত। শাশুরবাড়ির কেউ তেমব খবর নিত না, দেরব টা মাঝে মাঝে নিত শরীরের কি অবস্থা।
কয়েকদিন পর ডিসেম্বরে শেষ দিকে সকালে আমার খারাপ লাগে, আব্বু গাড়ি ঠিককরে রেখেছিল সাথে সাথে আম্মু আব্বু আমাকে নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। যাওয়ার পথে রায়নার আব্বুকে কল দিয়ে জানাই। সে বাড়িতে বলে, এক ছোটবোন ও শাশুর আসে হাসপাতালে। সেদিন পুরো দিন গেল, রাত গেল অবশেষে রাত ১২:৩০ মি. রায়নার জন্ম হয়, অক্সিজেন দিতে হয় রায়ানকে। ছেলে হওয়াতে আমার শশুর খুশি হয়নি। রায়ানের আব্বু কতটুকু হয়েছে জানি না। আমি নতুনভাবে জন্ম নিলাম পৃথিবীতে। আম্মু আব্বু ছিল। তারপর দিন বিকালে আমার শাশুড়ি আসে রায়ানকে দেখতে।
তারপর ৩ দিন ছিলাম হাসপাতালে ছোটবোনটা ছিল তাদের আর কেউ ছিল না, আম্মু তো আছেই। তিনদিন পর আম্মু আমাকে জোর করে মার বাসায় নিতে চাইল কিন্তু তাদের কথাশুনে আমি আর যায়নি, শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। আমি কোন কিছু জানি না বা বুঝি না কিভাবে ছেলেকে লালন করব। নিজে নিজের কিছু করতে পারছি না। ছোট একটা মেয়ে ছিল ওকে নিয়ে নিয়ে যতটুকু করা যায় করছি, তখন শীতকাল। আমার শাশুড়ি ছিল একদিন আমার সাথে, আমি দরজা সবসময় বন্ধ করে রাখতাম রাতে। কয়েকদিন রায়ানের মেঝ ফুফি ছিল সেও দরজা বন্ধ করত। ১০/ ১৫ দিনের মাথায় খেয়াল করলাম রায়ানের বড় ফুপি থাকল আমার সাথে, রায়ান রাতে তেমন ঘুমাত না দিনেরবেলা ঘুমাত। তাই রাতে আমারও খুব কষ্ট হত। সেদিন কেন জানি রায়ানের ফুপি দরজা বন্ধ করেনি। উনি নিচে ফ্লোরে ঘুমাত, মাঝে রাতে হঠাৎ রায়ান কান্না করে উঠে আমি লাফ দিয়ে উঠে দেখি রায়ানের ফুপি জামিলের পাশে, কি করছে জানতে চাওয়ায় বলল রায়ানের গায়ে কাপড় ছিল তাই কাপড় দিয়েছে। আমার কেন জানি সন্দেহ হল উনাকে। রায়ানের কান্নাটা ছিল অন্যরকম। সকালেই আমি আম্মুকে ঘটনাটা বলি। তখন আম্মুরা কি বুঝল জানি না, বলল দরজা বন্ধ রাখতে আর রায়ানকে দেখতে যেন ঘুমিয়ে না পড়ি।
তারপর থেকে রায়ান রাতে ঘুমে চমকে ওঠে, কান্না করে। পেটও ভালো ছিল না। রায়ানের নাম রাখা ও মাথার চুল কাটা জন্য দিন ঠিক হয়, উনারা কেউ আব্বু আম্মুকে দাওয়াত দিল না। আব্বু আম্মু আমার ছোটভাইকে মিষ্টি ও কাপড়, কাথা ও নাপিত খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা পাঠায়, এরা উল্ঠো হেয় করে। আমার ছোট ভাই এক বন্ধুকে নিয়ে আসে খাবার খাইনি, নাস্তা করে চলে যায়।
কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য করি, আমি থাকলে শাশুর বাড়ির কেউ আমার সামনে কথা বলে না, ওরা নিজেরা নিজেরা কথা বলে। রাতে আমি শুয়ে পড়ি ওরা বসে বসে গল্প করে। আর ছেলে হওয়ায় নারাজ সবাই, কারন সম্পত্তিরর ভাগ নিবে। ওরা নিজেরা বলাবলি করে আমার সামনে। রায়ানের আব্বু মাঝেমধ্য কল দিলে কল করে না হয় করে না। রায়ান হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টে জানিয়ে দি, চেয়ারম্যান জানুয়ারীতে পরিক্ষার ডেইট দেয়। তা আমি রায়ানের আব্বুকে জানাই। সে বলে তোমার প্রস্তুতি তুমি নাও যখনের টা তখন দেখা যাবে। এরমধ্য রায়ান অসুস্থ হয় একদিন ওরা হাসাপাতালে যেতে বলে কিন্তু ওখানে কোন ঔষদ দেয় না। তাই আমি আম্মুর সাথে কথা বলে ছোটবোন একটা নিয়ে শহরে যায় ডাঃ দেখায় চলে আসি।
আছি আমার মত আমি কিন্তু যার সাথে সংসার করছি, তার কোন কথা বা সহযোগীতা বা পরামর্শ নেই। ছেলেকে নিয়ে একাকী চলছে। এর মধ্যে পরিক্ষা ও কাছাকাছি চলে আসল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব পরিক্ষা দিতে একথা শুনে শাশুর – শাশুড়ি ইচ্ছা কথা বলল। মানে আমি তাদের কথা মানছি না, শীতকাল বাচ্ছা নিয়ে বের হওয়া যাবে না ৪০ দিনের আগে তো কোথায়ও যাওয়া যাবে না আমার শাশুড়ির কথা। বড় বেন বলছে, বিয়ে হল, ওমরা করেছো, বাচ্চা এখন আর কিছু দরকার নেই। মেঝবোন বলল চাকরীও করতে হবে না, আমার ভাইয়ের তো কোন কিছুর অভাব নেই। যখন যা চাইবে পাবে। ছোট বাচ্ছা নিয়ে ওসব চিন্তা না করে ছেলের সেবা যত্ন কর।
এদের কথাশুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল। এরা তাহলে এতদিন বলতে পারেনি, এখন সুযোগ হয়েছে বলার। আর রায়ানের বাবাও দূরত্ব রেখেছে একারণে। আমার মাথায় কিছু আসছে না। আমি আব্বুর সাথে কথা বলি। এবং তাদের কথাগুলো শেয়ার করি। তখন আব্বু কান্না করে মোবাইলে বলছিল, আমি আগেই বুঝেছিলাম মা, তুকে বুঝতে দিই নাই। এরা এমনটায় করবে তোর সাথে। এরা তুকে দোষী বানানোর জন্য তোর ছেলেকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল মা। আরও অনেক কথা। আমি ও কান্না করছি, আব্বু ও। মোবাইল নিয়ে আম্মু বলে তুই কান্না করিস না। চুপ থাক। তুই বুঝেছিস এটা জানলে আরও ক্ষতি করবে।
পরে রায়ানের আব্বুকে বলি বিশ্বিবদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়ে, সে এককথা মায়ের কথার বাইরে বলতে পারবে না। বাবা – মা যেতে বললে যাবে। ২৫ তারিখ আব্বু আম্মু আসে রায়ানকে দেখতে। দেখে আম্মু বলে রায়ানের পা ২ টা বাকাঁ হয়ে গেল। আমি মালিশ করিনি তা জানিও না, মাথাটা টিক করেছি। শীতকাল ছিল ঠান্ডায় কুজো করে পা রাখতে রাখতে ২০/২৫ দিনে পা বাকাঁ। এটা আমি ও খেয়াল করিনি। এর ছোট ফুপি গোসল করাত তারাও বলেনি কোনদিন। আমার কাছে যায়তুন তৈল ছিল, আম্মু সাথে সাথে নিয়ে ঘন্টাখানেক মালিশ করল। একবারে কি হবে? এর পর আমার শাশুরের কাছে আব্বু বলল একদিনের পরিক্ষা, একটা দিন যেতে দিন। পরিক্ষাটা দিয়ে আমরা আবার বাড়িতে দিয়ে যাব। শাশুর বলে ছেলের সাথে কথা বলে জানাবে। আব্বু আম্মু র কথা রাখেনি, তারা মন খারাপ করে চলে গেল।
এরপর রায়ানের আব্বুর সাথে বেশ কয়েকবার কথাবলি ও বুঝায় আমি সব পরিক্ষা দিলাম একটার জন্য আটকে থাকব? রায়ান ও সুস্থ একদিন তো ব্যাপার। শেষে আবার চলে আসব। কিন্তু না সে উল্টো আমাকে বকা দিল এবং বলল বাবা যা বলে তা। তাদের বাইরে কোন কথা বলবে না। আমার শাশুকের বুঝায় বলি এবং হাতেপায়ে ধরেও বলেছি। কিন্তু না তারা কেউ রাজি নন।
২৬ তারিখ আব্বু আম্মু কে আসতে বলি আমি যাব পরিক্ষা দিতে, তারাও আসে মনে করেছে রায়ানের আব্বু রাজি হয়েছে। আব্বু আম্মু ও রায়ানের আব্বুকে কল দেয় কথা বলেনি। আব্বু আসার পর আমার শাশুরকে বলে কাল পরিক্ষা দিয়ে মা-ছেলেকে দিয়ে যাব। আমার শ্বশুর মসজিদে যাবে বলে ৪/৫ জন লোক নিয়ে আসে তা আমরা জানি না। আমরা বাড়ির ভিতের রুমে, আমি রেড়ি হয় ২/৩ কাথা ও আমার ২ টো জামা। আর কিছু না কারণ কাল তো চলেই আসব। শাশুড়ি ও বোনরা সবাই নারাজ। বের হব এমন সময় দেখি সামনের রুমে ৪/৫ লোক নিয়ে শ্বশুর বসে আছে। আমি গেলে কাগজে লিখে দিয়ে যেতে হবে। মানে ছেলেকে নিয়ে কথা না মেনে পরিক্ষা দিতে বাপের বাড়ি যাচ্ছি এমন একটা লিখা তাতে আমাকে সাইন করতে বলে। আব্বু আম্মু এসব দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলে আমিও অবাক। কি করা উচিৎ? চিন্তার বিষয়। আব্বু তাদের সামনে বলে, আমার মেয়ে চুরি করে আসেনি বা চুরি করে যাবে। আমি এসব লোকের কাছে মেয়ে দিলাম বা সম্পর্ক করলাম যার সাথে হৃদয়ের কোন সম্পর্ক নেই। আমার মেয়ে কি করে ২৬ দিন ছিল তাই আমি ভাবছি, মেয়ে যে আমার বেচেঁ আছে এটায় আলহামদুলিল্লাহ্। আব্বু বলল কর সাইন কর, তাদের নাতি যেহেতু আছে করে দে মা। তার জন্য করতে হবে। জানি না এ ঘরে আর আসতে পারব কিনা কিন্তু আমার মন বলছে এখানে তোর শান্তি হবে না। আব্বু মানুষগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনাদের মেয়ে নেই? আপনারা বিয়ে দেন নি?
সেদিন এমন একটা সময় ছিল- না পারছি পিছনে যেতে না পারছি সামনে যেতে। তখনও আব্বুর দিকে চেয়ে সাইন করে পিছনে আর তাকাইনি সিএনজি করে চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিয়া তে। পরের দিন পরিক্ষা দিয়ে বিকালে বের হয়। আগের দিন থেকে পরের দিন অবধি কোন বান্দা কল বা খবর নেই নি।
কিভাবে সে বাড়িতে যাব? আব্বু, আম্মু ও আমি অনেক ভেবে চিন্তে বাসায় চলে আসি। সেই ২৬ তারিখ আসা ছিল শেষ আসা।
২০১২ বিয়ে ২০১৩ তে রায়ানের জন্ম।
৪০ দিন পর রায়ানের আব্বু যোগাযোগ করেছিল, আমার দোষ আমি কেন যায়নি? কেন তাদের কথা অমান্য করেছি। তাদের কথা শুনি নি। আমি সংসার করতে চাই নি। বাবা-মার কথা শুনেছি। সেই থেকে আজ অবধি এভাবেই আছি হয়তো থাকবো।
এভাবেই হাজারো কর্মজীবি নারী এখনো সামাজিকতার যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে।
আমাদের গুনে ধরা মানসিকতা আজও সমাজে বিদ্যমান। আধুনিকতা মানে অশ্লীলতা নয়, সভ্যতা ও নিয়মের যাঁতাকলে এভাবেই যেন মেয়েদের স্বপ্নের অপমৃত্যু না হয়।
লেখক:
বাহাউদ্দীন বাহার
সাবেক ছাত্রনেতা ও মানবিক-উন্নয়ন কর্মী
baharcou2009@gmail.com