শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

দস্তারবন্দির মাহাত্ম্য

ধর্ম ডেস্ক:
হাফেজ-মাওলানা ও কারিদের শিক্ষাগ্রহণ শেষে মাথায় পড়িয়ে দেওয়া হয়-সম্মাননাসূচক পাগড়ি। এটা যতটা না কৃতিত্বের, সম্মাননার তার চেয়ে বেশি বরকতময়। শিক্ষার্থীদের পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানরকে বলা হয়-‘দস্তারবন্দি’ অনুষ্ঠান।

‘দস্তার’ অর্থ পাগড়ি। ‘বন্দি’ অর্থ বাঁধা। ফারসি ‘দস্তারবন্দি’ অর্থ পাগড়ি বেঁধে দেওয়া। মুসলিম ঐতিহ্যে দস্তারবন্দির প্রচলন দুই কারণে

ক. মৃত্যুবরণকারী নেতার উত্তরাধিকারীকে পাগড়ি বেঁধে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা।

খ. দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সমাপনকারীদের স্বীকৃতি ও মর্যাদাস্বরূপ পাগড়ি বেঁধে দেওয়া। একে ‘দস্তারে ফজিলত’ও বলা হয়।

এটা এক বিশেষ পাগড়ি, যা যোগ্যতার স্বীকৃতি, সম্মাননা ও দ্বীনি গুরুদায়িত্বের প্রতীক হিসেবে প্রদান করা হয়। পাগড়ি প্রদানের জন্য ‘দস্তারবন্দি সম্মেলন’ বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। আধ্যাত্মিক সাধনা সিদ্ধির পর শায়খের পক্ষ থেকে পাগড়ি-খিরকার প্রচলনও অনেক পুরোনো রীতি।

পাগড়ি পরিধান করা নবীদের সুন্নত। হজরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে অবতরণের সময় মাথায় পাগড়ি ধারণ করেছিলেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.) ওই পাগড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ষষ্ঠ হিজরিতে সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-কে দুমাতুল জান্দাল অভিযানের দায়িত্ব প্রদানের সময় তাকে ডেকে তার মাথায় নিজ হাতে পাগড়ি বেঁধে দেন।

দশম হিজরিতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে ইয়েমেন প্রেরণের সময় নিজ হাতে তার মাথায় পাগড়ি বেঁধে দেন। এ ছাড়া হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কাউকে শাসক বানিয়ে কোথাও পাঠতেন, তখন নিজ হাতে তার মাথায় পাগড়ি বেঁধে দিতেন। সর্বশেষ পাগড়ি বেঁধে দিয়েছিলেন হজরত উসামা (রা.)-এর মাথায়।

উপমহাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ ১৫ মহররম ১২৮৩ (৩০ মে ১৮৬৬ খ্রি.) সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের দস্তারবন্দির ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছরে ১৯ জিলকদ ১২৯০ শুক্রবার ‘জলসায়ে তাকসিমে ইনআম’ বা দস্তারবন্দি সম্মেলন হয়। প্রথমবারের মতো পাঁচজন ছাত্র নির্ধারিত সিলেবাসের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তারা হচ্ছেন মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি. মাওলানা আব্দুল হক পুরকাজুভি, মাওলানা ফখরুল হাসান গাঙ্গুহি, মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভি ও মাওলানা আবদুল্লাহ জালালাবাদী। তাদের সম্মান ও গুরুদায়িত্বের প্রতীক ‘দস্তারে ফজিলত’ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এ সম্মেলনে শীর্ষ আলেমরা অংশগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, মাওলানা মুহাম্মদ কাসিম নানুতভি, কাজি মুহাম্মদ ইসমাঈল মঙ্গলুরি, মুহাম্মদ হাশিম, হাকিম জিয়াউদ্দিন রামপুরি, খাজা আবুল হাসান দেহলভি, মুন্সি মুহাম্মদ হায়াত সাহেব-মুহতামিম নাজমুল আকবার প্রমুখ (রহ.) অন্যতম।

জুমার নামাজের পর মাওলানা মুহাম্মদ কাসিম নানুতভি (রহ.) এক পাণ্ডিত্যপূর্ণ সমাবর্তন ভাষণ দেন। এতে তিনি দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব-প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, শিক্ষা সমাপনকারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

দ্বিতীয় দস্তারবন্দি ২ জিলহজ ১২৯২ দারুল উলুম দেওবন্দের জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় দস্তারবন্দি ‘জলসায়ে তাকসিমে ইনআম ও দস্তার’ ১২৯৯ হিজরিতে অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সম্মেলন ৬,৭ ও ৮ রবিউল আওয়াল ১৩২৭ অনুষ্ঠিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের শতবার্ষিকী উদ্যাপন ও দস্তারবন্দি মহাসম্মেলন ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সম্মেলন।

খতমে বুখারির অনুষ্ঠান ও হাফেজদের পাগড়ি প্রদানে ‘দস্তারবন্দি’ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। দোয়া, দ্বিনি মেহনতের সওগাত ‘দস্তারবন্দি’ জানান দেয় নতুন আলেম, ইমাম তৈরির অমীয়বার্তা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION