শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় বাড়লেই হোটেল-মোটেলে শুরু হয় গলাকাটা বাণিজ্য। কে কত বেশি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যেন দেখার কেউ নেই। হোটেল ভাড়া নিয়ে কোন তালিকা না থাকায় অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে করে ঠকছে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা। একারণে আগামী কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজারে চলতি পর্যটন মৌসুম শুরু হয় বিশ্ব পর্যটন দিবসকে ঘিরে। গত ৩ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত ৭ দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের সমাপ্তি ঘটে। মেলা উপলক্ষে হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ ছাড় ঘোষণা দিলেও তা মানতে রাজি নই পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। মেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পর্যটনের ভরা এই মৌসুমে আবাসিক হোটেল ও রেস্তোঁরাগুলো গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করেছে। আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম ভাড়ার তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ হোটেল তা মানছে না। তারকামানের হোটেলের পাশাপাশি নিম্নমানের হোটেল গুলোও রুমের ভাড়া বাড়িয়েছে যেনতেনভাবে। হোটেল মোটেল জোনের অধিকাংশ হোটেল ৫শ’ থেকে এক হাজাট টাকা মুল্যের রুমে ভাড়া বৃদ্ধি করে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং ২ থেকে ৩ হাজার টাকা মূল্যের রুম ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা চেয়ে নিচ্ছে। শুধু তা নয়, রুম নিতে হলে দুই রাতের জন্য নিতে হবে, এক রাতের জন্য তারা রুম ভাড়া দেয় না বলে সাফ জানিয়ে দেন অনেকে।
রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসা ফাহিম চৌধুরী কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন- ‘টানা ছুটি কাটাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। অনেকদিনের পরিকল্পনা ছিল কক্সবাজার সৈকত ঘুরে বেড়ানোর। অবশেষে আমরা তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হোটেল ভাড়া বেশি হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেছি।’
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক আনোয়ার হালিম কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আমরা ঢাকা থেকে কয়েকজন বন্ধু কক্সবাজার এসেছি। এখানে এসে শহরের গণপূর্ত ভবনের পাশে গড়ে উঠা গ্রীণ কক্স এবং কক্স হিলটপ হোটেলে রুম ভাড়া নিতে গেলে তারা প্রতি রুম সাড়ে ৮ হাজার টাকা শুনে চমকে যাই। আমরা সবাই ছাত্র, এত টাকা আমাদের নেই। ফলে রুম না নিয়ে চলে যায় অন্য হোটেলে। সেখানে সীমিত মূল্যে রুম নিয়েছি (৪ হাজার টাকা) এক রাতের জন্য। রুমের গুণগতমান তেমন ভালো নেই’।
অভিসার নামের একটি আবাসিক হোটেলের ২ হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া উঠেছে ৭/৮ হাজার টাকা। পর্যটকদের অভিযোগের ভিত্তিতে হোটেলটির এক্সিকিউটিভ জসিম উদ্দিনের সাথে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি একটি কক্ষের একদাম ৬ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান। ছাড়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন-‘এসময়ে কোন ছাড় নেই।
অবশ্য, অতিরিক্ত দামের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন হোটেল অভিসারের ম্যানেজার লিটন পাল।
তিনি কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, আমাদের হোটেলে রুমের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং সর্বনি¤œ ২ হাজার ২৫০ টাকা। এখানে অতিরিক্ত দাম নেয়ার কোনো মানে হয় না। আমরা পর্যটক বান্ধব। আর এক রাতের জন্য রুম বুকিং নেয়া হয় না বিষয়টিও সঠিক নয়। তবে সামনে (আজ) শুক্রবার থাকায় ক্ষতি এড়াতে দুই রাতের জন্য রুম প্রয়োজন এমন পর্যটককে প্রাধান্য দিয়েছি আমরা।’
এসব হোটেল-মোটেলের মত কক্সবাজারে আরো বেশ কয়েকটি আবসিক হোটেল ও রেস্তোঁরায় এমন গলা কাটা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘হোটেল রুমের ভাড়া অতিরিক্ত না নেয়ার জন্য আগে থেকে বলা আছে। হোটেল অভিসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোন ধরণের রুমের দাম তারা বেশি চেয়েছে তা দেখার পর পরবর্তী মন্তব্যসহ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুম বিল্লাহ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘যারা অতিরিক্ত দামে হোটেল রুমের ভাড়া নিয়ে পর্যটন খাতকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে তাদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভয়েস/আআ