বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পেঁচারদ্বীপে এবার আগুন দিয়ে প্যারাবন নিধন

হিমছড়ির পেঁচারদ্বীপে প্যারাবনে আগুন-ছবি: কক্সবাজার ভয়েস

বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের পর্যটন স্পট পেঁচারদ্বীপে এবার আগুনে পুড়িয়ে প্যারাবন নিধনে নেমেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে প্যারাবনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ। পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।

এর আগে কিংশুক ফার্মস লি: নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্কেভেটর দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরীর ২০ হাজারের অধিক গাছ কেটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পরে পরিবেশবাদিদের চাপের মুখে প্যারাবন নিধন আপাতত বন্ধ থাকলেও স্থানীয় আরেক প্রভাবশালী এবার আগুন লাগিয়ে দেয় প্যারাবনে। এতে অন্তত বিশাল প্যারাবন পুড়ে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় হারুন বিন হাসেম, সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন ও আমীর হোসেনের নেতৃত্বে প্যারাবনে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কের রামুর খুনিয়াপালংয়ের পেঁচারদ্বীপের জাদুঘর এলাকায় এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এতে নির্বিচারে কাটা পড়ছে বাইন ও কেওড়া গাছ সহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক গাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে জীববৈচিত্র্যসহ পাখির আবাসস্থল। ইতিমধ্যে প্যারাবন দখল করে দেয়া হয়েছে সীমানা পিলার। এভাবে আনুমানিক কিংশুক ফার্মস ২০ একর এবং হারুন-কামাল সিন্ডিকেট ৫ একর প্যারাবনে জবরদখল ও ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকান্ড চালিয়েছে। গত এক সপ্তাজ পুর্বে একই এলাকায় প্যারাবন কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, জোয়ার-ভাটা বন্ধে বাঁধ তৈরী, স্কেভেটর দিয়ে মৎস্য চাষের জন্য খাল খননসহ ২০ হাজারের অধিক গাছ কেটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সেখানে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানিয় বসবাসকারী ও পরিবেশবাদী নেতারা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচারদ্বীপের জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ভরাখালে প্রায় ২০ বছর পুর্বে প্যারাবন সৃজন করেছিল উপকূলীয় বনবিভাগ। উক্ত এলাকায় ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। জায়গাটি সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের ছিল। কিন্তু এখন এটি বন্দোবস্তমূলে খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তি মালিকানার কথা বলে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্রয় করার কথা বলে স্থানিয় হারুন বিন হাশেম ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন কামাল দ্বীর্ঘদিন ধরে প্যারাবন কাটা শুরু করে। গত ২ মার্চ প্যারাবনে সীমানা পিলার দিয়ে স্থায়ীভাবে দখল করে নেন। এর পর পুরোদমে প্যারাবন কাটা শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে হারুন বিন হাশেম নিজে উপস্থিত থেকে স্থানিয় জাগির হোসেনকে দিয়ে প্যারাবনে কেটে ফেলা গাছের ঢাল পালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এভাবে প্যারাবনে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

স্থানীয় জাগির হোসেন স্বীকার করে কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, এলাকার কিছু মানুষ লাকড়ির জন্য কিছু গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এর কিছু ঢালপালা ও কিছু ঝোপঝাড় পরিস্কার করার জন্য আগুন দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন বিন হাশেম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, সেখানে তার কোন জমি নেই। প্যারাবনে সীমানা পিলার দিয়ে দখল করে গাছ কাটার বিষয়ে ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার বিষয়েও তিনি জড়িত নন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, স্থানিয় মানুষের কিছু বাড়ি ভিটা এটর্নি পাওয়ারমুলে হারুন বিন হাশেম ব্যক্তি মালিকানার দাবী করে আসছিল। সমস্যা দেখা দিলে সিমানা পিলার দেয়ার সময় সেখানে গিয়ে দেখে আসি। প্যারাবনের কিছু অংশ কেটে ফেলেছে দেখেছি। তবে কে বা কারা কেটেছে জানা নেই। প্যারাবনে আগুন দেয়ার ব্যাপারেও খবর পাইনি।

খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) আবছার কামাল কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জমিতে সীমানা পিলার দেয়ার কথা শুনেছি। সেখানে প্যারাবন কাটা ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানিনা। খবরাখবর নিয়ে জানাতে হবে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষন পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, দিন দুপুরে যেভাবে প্যারাবন দখল, হাজার হাজার গাছ নিধন করে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তা আরো উদ্বেগজনক। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান পরিবেশবাদী এ নেতা।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: হাফিজুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, উক্ত এলাকায় কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্যারাবন কাটা, প্যারাবনের ভিতরে সীমানা দেয়াল দেয়া ও স্কেবেটর দিয়ে মাটি কেটে পরিবেশের ক্ষতি করার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর উত্তর পাশে প্যারাবন কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION