শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

 প্রবাসীদের টিকার নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

কয়েকদফা ঘোষণা দিয়েও প্রবাসীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার শুরু হয়নি। ঘোষণা দিয়ে প্রতিবারই হোঁচট খেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। নিবন্ধন ও টিকা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয় না থাকায় অসহায় অবস্থায় পড়েছে প্রবাসী মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে টিকার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয় ঘুরে ঘুরে হতাশ প্রবাসী কর্মীরা। সর্বশেষ বিদেশগামীদের জন্য দুধাপে নিবন্ধন করার ঘোষণা দিলেও সার্ভার জটিলতায় প্রথম দিনেই থমকে গেছে উদ্যোগ।

যত সংকট সংযোগে

জানা গেছে, অনেক দেশই কর্মীদের কর্মস্থলে ফিরতে হোটেলে কোয়ারেন্টিনের শর্ত দিচ্ছে। ফ্লাইটের টিকিটের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি, কোয়ারেন্টিনের এ খরচ প্রবাসীদের বাড়তি বোঝা।

অন্যদিকে কোয়ারেন্টিন খরচ বাবদ কোটি কোটি টাকাও চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ অনেক দেশেই টিকা দেওয়া থাকলে কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন পড়ছে না। যে কারণে প্রবাসী কর্মী ও জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে।

এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনে প্রবাসীদের টিকা প্রদানের আশ্বাস দেন। তবে নতুন সংকট দেখা দেয় নিবন্ধন নিয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিকাদান কর্মসূচির অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। নিবন্ধনের জন্য তারা সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি করেছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। বিশেষ ক্যাটাগরি ছাড়া ৪০ বছরের নিচে কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বেশিরভাগ প্রবাসী কর্মীর বয়স ২০-৪০ বছরের মধ্যে। বিদেশে থাকায় তাদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি। বিশেষ ক্যাটগরিতে ছাড় দেওয়া গেলেও নিবন্ধনের জন্য পরিচয়পত্রের বিষয়টি বড় সমস্যা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কর্মীদের দাবি ছিল পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করা। কিন্তু পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে তাদের ডাটা (তথ্য) পাওয়ার বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। সুরক্ষা অ্যাপকে পাসপোর্ট সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধন করা সময়সাপেক্ষ হবে বলে জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এজন্য বিকল্প পদ্ধতিও নিয়েছিলাম। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডাটাবেজে (বিএমইটি) দেড় কোটির বেশি প্রবাসী কর্মীর তথ্য আছে। এখানে সমস্যা হলো, এই ডাটা যে ফরম্যাটে আছে সেটাকে বদলে সুরক্ষা অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করাও সময়সাপেক্ষ। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে কর্মীদের নিবন্ধন করতে বলেছি। তথ্যগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে পাঠালে তারা সার্ভারে তা যুক্ত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।’

অগ্রাধিকারের পরও এতো ভোগান্তি!

১৭ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রাপ্তির তালিকায় বিদেশগামীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চীনের উপহার দেওয়া সিনোফার্মের টিকা তাদের দেওয়ার কথা। দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দেওয়া হবে এই টিকা। তবে ঘোষণা দিলেও নিবন্ধনের সমাধান না হওয়ায় ১৯ জুন থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। বরং কয়েকটি জেলার সিভিল সার্জন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, প্রবাসী কর্মীদের আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিবন্ধন করে আসতে হবে। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা ছুটে আসতে থাকেন ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। ঢাকায় এসেও কোন সমাধান না পেয়ে মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

সিভিল সার্জনদের এ কর্মকাণ্ড দায়িত্বজ্ঞানহীন উল্লেখ করে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। ২৪ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সিভিল সার্জনের বিভ্রান্তিকর একটি সার্কুলারের সূত্র ধরে বিদেশগামী কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে কর্মীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় হতে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, টিকার নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আগেই মঙ্গলবার (২৯ ‍জুন) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দেন, সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে প্রবাসী কর্মীদের। এ ঘোষণার পর সহস্রাধিক প্রবাসী ওই সাত কেন্দ্রে হাজির হন। কিন্তু সেখানেও দেওয়া হয়নি টিকা।

এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কিছু কর্মীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এনে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে। যদিও উদ্বোধনের পর আর কোনও প্রবাসী কর্মীকে টিকা দেওয়া হয়নি।

চাপ নিতে পারে না সার্ভার

পরে নতুন করে নিবন্ধনের ঘোষণা দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এবার বলা হয়, দুই ধাপে নিবন্ধন করতে হবে কর্মীদের। প্রথমে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে ও পরে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার (২ জুলাই) থেকে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন প্রবাসীরা। সেখানে নিবন্ধনের পর ৪-৫ জুলাই সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য দিতে হবে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়গুলোতেও সশরীরে নিবন্ধন করা যাবে। সেখানে দিতে হবে ২০০ টাকা।

এখানেও বিপত্তি। ২ জুলাই নিবন্ধনের প্রথম দিনেই সার্ভার জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়েন প্রবাসী কর্মীরা। অ্যাপে নিবন্ধন করতে না পেরে অনেকে চলে আসেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে। সেখানেও সার্ভার জটিলতায় নিবন্ধন করা যায়নি। লকডাউন ও বৈরী আবহাওয়ার মাঝে হাজার হাজার প্রবাসী জেলা জনশক্তি কার্যালয়গুলো থেকে ফিরে এসেছেন।

কয়েকটি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বললেন, সার্ভারের সমস্যার কারণে নিবন্ধন করাতে পারিনি। এতে তারা বিক্ষোভও করেছেন। কিন্তু সার্ভার কাজ না করলে নিবন্ধনা তো সম্ভব নয়।

প্রবাসী মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের নিবন্ধনকারীদের পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি)। তবে একসঙ্গে এক হাজারের বেশি আবেদন গ্রহণ ও যাচাইয়ের সক্ষমতা না থাকায় জটিলতা হচ্ছে। এ জটিলতা দূর করতে এনটিএমস’কে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারোয়ার আলম বলেন, ‘একসঙ্গে অনেকে নিবন্ধনের চেষ্টা করায় জটিলতা হয়েছে। ভেরিফিকেশনে সময় লাগছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’ সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION