বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: দায়-দায়িত্ব কি র‍্যাব-পুলিশের নাকি সরকারি নীতির?

বিবিসি বাংলা, ঢাকা :

বাংলাদেশে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যার ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায় কি বাহিনীগুলোর নাকি সরকারের নীতির?

 

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোন বাহিনীই বিচার বহির্ভূত হতাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু মূলত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এসব ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

তারা মনে করেন, সরকারগুলো এই ইস্যুতে রাজনৈতিক নানা বক্তব্য দিলেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কখনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে সরকার এসব অভিযোগ মানতে রাজি নয়।

পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ইস্যু আবার আলোচনায় এসেছে।

মানবাধিকার কর্মি নূর খান লিটন বলেছেন, এখন যেহেতু সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং তাতে পুলিশ সদস্য জড়িত, তাই তদন্তসহ সব ক্ষেত্রে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মুল কারণের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন ক্যাম্পেইন দেখে মনে হচ্ছে, এটাই মনে হয় বাংলাদেশে প্রথম বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং এটাই শেষ ঘটনা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা যেটা, যদি ২০০২ সাল থেকে আমরা বিবেচনায় আনি তাহলে দেখবো যে প্রায় চার হাজার মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।”

নূর খান লিটন আরও বলেছেন, “২০০২ সাল থেকে এপর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো, সেনা বাহিনী ক্লিন হার্ট অপারেশনের সময় যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে র‍্যাব, পুলিশ- কোন বাহিনীরই এই অভিযোগ থেকে সম্ভবত মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।”

“সব সময়ই আমরা লক্ষ্য করেছি যে একই ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্রের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। প্রচ্ছন্নভাবে রাজনৈতিক সমর্থনের কারণেই কিন্তু বাহিনীগুলো এসব ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।”

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০০২ সালে অপরেশন ক্লিন হার্ট নাম দিয়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে ৩৯জন নিহত হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকার তাতে দায়মুক্তি দিয়েছিল।

নূর খান লিটন বলেছেন, একটা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অপরাধ দমনের টার্গেট নিয়ে অপারেশন ক্লিন হার্ট নামের সেই অভিযান চালানো হয়েছিল। ফলে সরকারের নীতি অনুযায়ী তখন ঘটনাগুলো ঘটেছিল বলে তারা মনে করেন।

মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি সরকারের সময়ই র‍্যাব গঠন করা হলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনেক ঘটনা ঘটে। তখন বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এর বিরোধীতা করেছিল।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনী অঙ্গীকারেও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার কথা বলেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ র‍্যাবের হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে গেছে ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, গণতন্ত্র দূর্বল হলে এবং জবাবদিহিতা না থাকলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যায় না।

“এখন বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে সাধারণ জনগণ আতংকে রয়েছে।এটা অচিরেই বন্ধ করা দরকার। আমি মনে করি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেছেন, “সরকারের ভিতরে জবাবদিহিতার অভাব আছে। সরকারের জবাবদিহিতার অভাব মানে আমি বলছি, বাহিনীগুলোরও জবাবদিহিতার অভাব আছে। সরকারের জবাবদিহিতা না থাকলে কোন ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা থাকে না। সেটাই মুল সমস্যা হচ্ছে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনীর হাতে প্রায় চার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনীর হাতে প্রায় চার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

রাজনৈতিক দিক থেকে বা সরকারের পক্ষ থেকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকার কারণে বাহিনীগুলোতে সাহস যোগায় এ ধরণের অপরাধ করার ক্ষেত্রে। বিশ্লেষকরা এমনটা মনে করেন।

তারা বলেছেন, বাহিনীগুলো অনেক সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিযোগীতায় নামে। অনেক সময় বাহিনীর অনেক সদস্য চাঁদাবাজি বা অর্থ আদায়ের জন্য বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ারকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। সেখানে বিশ্লেষক এবং মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের সদিচ্ছার অভাবকেই বড় ঘাটতি হিসাবে দেখেন।

তবে সরকারের আইন মন্ত্রী আনিসুল হক এমন অভিযোগ নাকচ করেছেন।

তিনি বলেছেন, “এ রকম হত্যাকাণ্ড যদি হয়ও যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা যে বাহিনীরই হোক না কেন, তাদের বিচারের দোরগোড়ায় সোপর্দ করা হয়েছে। এবং তাদের আদালতে বিচারের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে, যেমন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা। এখন সিনহার ঘটনার ক্ষেত্রেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত হচ্ছে। এখান থেকে যেটা প্রমাণ হয়, তা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের এ রকম বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করার যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে।”

আইন মন্ত্রী আরও বলেছেন, “একটা কালচারকে আমরা বন্ধ করতে চাই। সেজন্য আমরা প্রত্যেকটা ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, যে সব ঘটনা আলোচনায় আসে, সেগুলো ছাড়া বেশিরভাগ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আসলে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে-তা কখনই প্রকাশ করা হয়নি। সূত্র:বিবিসি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION