শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যে কারণে ১৪ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হতে পারে

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

কোভিডজনিত লকডাউনের সময় বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা দারিদ্র্য নিয়ে জরিপ ও গবেষণা করেছে। তাদের মোদ্দাকথা ছিল, লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, যাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কোভিডজনিত বিধিনিষেধ এখন আর কোথাও নেই বললেই চলে। পৃথিবী একভাবে কোভিডমুক্ত হয়েছে। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে বিশ্বের ১৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কাতারে নেমে যেতে পারে। নেচার এনার্জি জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

টানা কয়েক বছর জ্বালানির দাম কম থাকার পর ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পশ্চিমারা রাশিয়ার জ্বালানিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তরতর করে বাড়তে শুরু করে জ্বালানির দাম। তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে ১৩৯ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। বৃদ্ধি পায় এলএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম।

নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বিশ্বের ১১৬টি দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে মডেলিং করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, বৈশ্বিক পরিসরে পারিবারিক জ্বালানির ব্যয় ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া দেশে দেশে সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও পারিবারিক ব্যয় গড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা
অর্থনীতিবিদেরা বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্ন ও সীমিত আয়ের পরিবার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেলেও এই শ্রেণির মানুষের আয় বাড়ে না। প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

বলা হয়েছে, জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে নিম্ন ও সীমিত পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়। ফলে যেকোনো সময় তারা দরিদ্রের কাতারে নেমে যেতে পারে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতেও মানুষ জ্বালানির উচ্চ দামের কারণে ভুক্তভোগী হয়। কিন্তু এই ধাক্কা মোকাবিলা করার সক্ষমতা তাদের আছে।

দেখা গেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট বা মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন করেছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলো জনগণের পাশে দাঁড়াতে তেমন কিছু করেনি। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত। যেসব দেশ বিপদে পড়ে আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে, তারা শর্ত পূরণে জ্বালানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারে বাধ্য হচ্ছে। এসব দেশের সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করতে তেমন কিছু করছে না, করার উপায়ও নেই। কারণ, তাদের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত কম। আবার ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে এসব দেশের আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে দাম। সে কারণে এসব দেশের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উলি শান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘জ্বালানির উচ্চ দামের কারণে পারিবারিক অর্থনীতি দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, জ্বালানির দাম বাড়লে পরিবারের জ্বালানি ব্যয় সরাসরি বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদনে জ্বালানির যে ব্যবহার হয়, তাতে এগুলোর দামও বেড়ে যায়। বিশেষ করে খাদ্যের দাম, যার কারণে মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়’।

বিশ্লেষকেরা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো খাদ্য। খাদ্যের দাম বাড়লে তাই এসব মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না।

শান আরও বলেন, ‘জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অরক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্বালানি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। এমনকি অনেকে চরম দরিদ্রদের কাতারে নেমে যাবে’।

জ্বালানির দামের সঙ্গে আরও অনেক কিছুর দাম জড়িয়ে আছে—বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে শিল্প ও খাদ্য উৎপাদন—কোথায় নেই তার ব্যবহার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, গত এক বছরে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ১ শতাংশ, মাখনের দাম ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ, আটার দাম ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, রুটির দাম ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, চিনির দাম ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, দুধের দাম ১১ শতাংশ, মুরগির দাম ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাজ্যের। গত বছর দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে তাদের মতো উন্নত দেশেও অনেক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। শীতকালে কীভাবে ঘর গরম রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ। শেষমেশ এবার শীত তেমন একটা না পড়ায় এবং ইউরোপের গ্যাসের মজুত বৃদ্ধি পাওয়ায় অত সমস্যা হয়নি। কিন্তু এই অনিশ্চয়তা তাদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতার সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

এ বছরও বাড়তি থাকবে
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য উৎপাদকেরা বলেছেন, চলতি বছর খাদ্যের দাম কমার সম্ভাবনা তো নেই, বরং বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। নেসলে, ইউনিলিভার ও প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতি হয়তো মূল্যস্ফীতির চূড়া পেরিয়ে গেছে। কিন্তু জ্বালানি ও খাদ্যের দাম আরও দুবছর বাড়তি থাকবে।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিনির্ভরশীলতার কারণে কোটি কোটি মানুষ এভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে মত দেন তাঁরা। সূত্র:প্রথম আলো।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION