বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রমজানে কী করব কী করব না

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। কোরআন নাজিলের মাস। আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস। গোনাহ ছেড়ে দেওয়ার মাস। ক্ষমা লাভের মাস। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার মাস। দেহমন শুদ্ধ ও পবিত্র করার মাস। এ মাসের চাঁদ উঠতেই ঘোষণা হতে থাকে, ‘ওহে কল্যাণ অন্বেষী! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করো, নেকির পথে তুমি আরও বেগবান হও। ওহে অকল্যাণের পথিক, তুমি নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও।’ -জামে তিরমিজি : ৬৮২

পবিত্র এ মাস আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা ইমানদারদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন, যা ইসলামের মৌলিক একটি স্তম্ভ। ইমান ও ইহতিসাবের (সওয়াবপ্রাপ্তির আশায়) সঙ্গে সিয়াম সাধনা বান্দার গোনাহ মাফ করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান এবং ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াবের প্রত্যাশা রেখে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার আগের গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮

রমজানের প্রতিটি ইবাদত, প্রতিটি মুহূর্ত বিশেষ মর্যাদা ধারণ করে। এ মাসের নামাজ- রোজা, সাহরি-ইফতার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তেলাওয়াত-মোনাজাত সবকিছুর রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এর প্রতিটি আমল বান্দাকে তাকওয়ার সোপানে উন্নীত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য ত্বরান্বিত করে। অতএব রোজার সঙ্গে সঙ্গে তারাবির প্রতি যতœবান হওয়া, তাহাজ্জুদের অভ্যাস করা এবং সাহরির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। খেয়াল রাখা, রোজা যেন আমার জন্য ঢাল হয়। আমার কোনো ত্রুটির কারণে যেন এ ঢাল বিদীর্ণ না হয়।

আল্লাহর হুকুম পালনের স্বাদ উপভোগের সময় ইফতারের মোবারক মুহূর্ত। একটু আগে বা পরে খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা শুধু আল্লাহর ভালোবাসার জন্য। এটা এক অপার্থিব মুহূর্ত। এমন বরকতময় মুহূর্তে জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতে জবানকে সতেজ রাখা কাম্য। এভাবে রমজানজুড়ে ক্ষণে ক্ষণে ও নানা মুহূর্ত ও সময়ে রয়েছে বরকত ও রহমতের সময়। সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

রমজান মাসে ইতিকাফের প্রতি মনোযাগী হওয়া। এটা ছিল নবীজির দায়েমি (সর্বদার) আমল। শেষ দশকে তা সম্ভব না হলে অন্তত বেজোড় রাতগুলোয় কিংবা যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব। হাজার রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় বিভোর থাকা গোটা রমজান। বিশেষ করে শেষ দশক, যে দশকে নবী কারিম (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। মনে রাখা নবীজির সেই কথা, ‘এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত। তাতে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকল সে যেন সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। আর কেবল অভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে।’ -ইবনে মাজাহ : ১৬৪৪

রমজান ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার মাস। এ মাসে মুমিনরা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন। খোঁজ-খবর নেবেন আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং অভাবী ভাইবোনের। নেক ও কল্যাণের পথে আরও ধাবিত হওয়া। যাদের ওপর ওয়াজিব সদাকাতুল ফিতর, তারা তা পৌঁছে দেবেন গরিবের দুয়ারে সসম্মানে।

জাকাত রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো আমল নয়। তার পরও অনেকে এ মাসে জাকাত আদায় করেন। এটা একটি স্বতন্ত্র ফরজ ইবাদত। জাকাত প্রদান কোনো লোকদেখানো বা বাহাদুরির বিষয় নয়। সুতরাং এটা নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো, প্রচারণা কাম্য নয়। আর জাকাত শাড়ি-লুঙ্গিতে পরিণত করে বিতরণ করাও ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ সতর্কতা কাম্য।

ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। এ সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা। দিনগুলো দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, তওবা-ইস্তেগফার, নফল নামাজ ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা। গল্পগুজব পরিহার করা। ডিভাইসের অনর্থক ব্যবহার বন্ধ রাখা।

বরকতময় এ মাসে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়, এমন সব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা উচিত; এবং এখন থেকে সারা জীবনের জন্য বর্জন করা উচিত। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়।

রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পণ্য মজুদকরণ, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি অসাধুতা অত্যন্ত গর্হিত মানসিকতার পরিচায়ক। সহমর্মিতার মাসে এ ধরনের অন্যায় বড় ধরনের জুলুম। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।

ঈদকে সামনে রেখে যে শপিং-সংস্কৃতি সমাজে চালু হয়েছে তা খুবই উদ্বেগের কথা। ঈদের কেনাকাটায় নারীদের অংশগ্রহণ, ঈদ উপহারের সংস্থানে হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করা, সময়ের অপচয়, কেনাকাটায় বাহুল্য ইত্যাদি নিয়ে ইসলামের আলাদা আলাদা বিধান রয়েছে। রমজানে সেগুলো পরিপালনে মনোযোগী হওয়া চাই।

আফসোসের কথা হলো, যেখানে রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে এবং নবী কারিম (সা.) যখন কোমর বেঁধে ইবাদতে মশগুল হতেন, পরিবারের লোকদের সজাগ করতেন তখন তার উম্মত কেনাকাটায় ব্যস্ত! এ অবস্থার পরিবর্তন কাম্য।

রমজানজুড়ে এই হাদিস স্মরণে রাখা, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি একবার মিম্বরে আরোহণ করলেন। প্রথম ধাপে উঠে বললেন, আমিন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে উঠেও বললেন, আমিন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন (কী বিষয় আল্লাহর রাসুল!) আপনাকে (এভাবে) আমিন বলতে শুনলাম। তখন নবীজি বললেন, আমি যখন মিম্বরে আরোহণ করলাম তখন হজরত জিবরাইল আগমন করলেন এবং বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যে রমজান মাস পেল, আর রমজান গত হয়ে গেল কিন্তু তার গোনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমিন। তারপর বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যে তার মা-বাবাকে অথবা কোনো একজনকে পেল অথচ তারা (মা-বাবা) তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না (তাদের সেবার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না) আমি বললাম, আমিন। তৃতীয় বার বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হলো- আর সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না। বললাম, আমিন। -আল আদাবুল মুফরাদ

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION