শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সৈকতে বর্জ্য দানব

আবদুল আজিজ :
লোকমুখে ও গল্পের বইয়ে দৈত্য-দানবের লোমহর্ষক কাহিনী শুনেনি; এমন মানুষের দেখা মেলে না। এবার সেই দানবের চাক্ষুষ দেখা মিলল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব। যে দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় সৈকতের সীগাল পয়েন্টে প্রদর্শিত হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরী এ দানব ভাষ্কর্যের। আয়োজক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ। আর এটি আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীগাল পয়েন্ট; যেখানকার বালিয়াড়ীতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ভয়ংকর এক দানব। যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকি হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ এটি প্রথম দর্শনে ভয় বিরাজ করলেও কাছে যেতেই তা কেটে যাবে। আর জানবে দানবটির দেহাবয়বে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশের প্রধান স্বেচ্ছাসেবী সমন্বয়ক আকরাম হোসেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ী ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। আর প্রাণ-প্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরী দানব ভার্ষ্কয্যের প্রদর্শনীর মত ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের। গত প্রায় দুই মাস ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থেকে সংগ্রহ করেছে অনন্ত ১ হাজার বস্তা প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের কিছু পরিমান অংশ দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করেছেন এ ‘প্লাস্টিক দানব’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাষ্কর্য্য শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম) সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাষ্কর্য্য শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এ দানবটি দেখতে ভিড় করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন।
পরিবেশবাদীসহ সচেতন মহল বলছেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হবেন। বিদ্যানন্দের মত অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরণের কর্মকান্ডে এগিয়ে আসার আহবান তাদের।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় যে কোন মহৎ উদ্যোগে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারবেন চাল, ডাল, তেল, চিনি ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।
ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION