মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

স্বাধীনতার চেতনা: অনিয়ন্ত্রিত অনিয়ম থেকে মুক্তির আশাবাদ

বদরুল ইসলাম বাদল,ফাইল ছবি

বদরুল ইসলাম বাদল:

মানব সভ্যতার ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য অজস্র মানুষ প্রাণ দিয়েছে। বিশ্বে এখনো বহু জাতি স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার বছর ধরে বাঙালীজাতি ভিনদেশীদের শাসনে শাসিত ছিল। সে সকল শাসকদের বৈষম্যমুলক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করে দীর্ঘদিন।যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের প্রান্তে এসে অনেকেরই প্রশ্ন, রক্তেকেনা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ কতটা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।সচেতন মহলের অভিমত যে, ভৌগোলিক স্বাধীনতার খোলসটা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নয়। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায়,”স্বাধীনতা হলো সামাজিক জীবনের তেমন পরিবেশ, যার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তিত্বের বিকাশের সব রকম সুযোগ অনায়াসে লাভ করে”।স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশের কিছু মানুষ মানষিক ভাবে স্বাধীন হতে পারে নেই ।আবার সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ থেকে হচ্ছে বঞ্চিত । রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাবে বেড়ে যাচ্ছে বৈষম্য,ধনী দরিদ্রের পার্থক্য।সকল জায়গায় গনতান্ত্রিক ধারা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দল গুলোতে মানা হচ্ছে না দলের নীতিমালা।

উপনিবেশিক প্রভুদের মতো রাজনৈতিক দলের মধ্যে কারণে অকারণে নেতাদের তোষামোদি, চামচামি সর্বত্র। সুবিধাভোগী একটি শ্রেণী রাজনৈতিক লেবাসে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে।নিয়ম-নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছাচারীতায় কলুষিত করছে রাজনৈতিক ধ্যান, ধারণা, চেতনা।স্বাধীনতার মূল চেতনায় আঘাত বন্ধ করা যাচ্ছে না।পৃথিবীর বহু দেশ রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কোন নাগরিকের দ্বিমত করার সুযোগ নাই।কারণ আইন আছে যে, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’। দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার এতদিন পরও সর্বজনীন গ্রহনযোগ্য স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা সম্ভব হয় নাই আমাদের দেশে।তাই বিতর্ক বন্ধ করা যাচ্ছে না । যে যার মতো করে ইতিহাস ব্যাখ্য করছে।অহরহ হচ্ছে।

অন্যদিকে যে স্বাধীনতার জন্য মানুষ প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে আমরা সেই চেতনায় আছি কিনা ? ঘুষ দেওয়া -নেওয়া বন্ধ হয়েছে কিনা , দ্রব্য মুল্যের ঊর্ধ্বগতি,শিক্ষিত বেকার, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, বিচারহীনতার সুরাহা হয়েছে কিনা?মাদক, কালোবাজারি বন্ধ করা যাচ্ছে কি?সন্ত্রাস, দখল -বেদখল বন্ধ হয়েছে কিনা,অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে কিনা?সকল নাগরিকদের চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা হয়েছে কিনা।সাধারণ জনগোষ্ঠী অভয় চিত্তে প্রশাসনের দোরগোড়ায় এসে নিজেদের সমস্যার এবং সমাধান নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে কিনা?আইনের সমঅধিকার পাচ্ছে কিনা।মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা বীর দর্পে রাজনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনতো হবার ছিল না। অনিয়ম সমূহ অনিয়ন্ত্রিত ভাবেই স্বাধীনদেশে চলছে। কবি নুরুল ইসলাম তার “একমুঠো স্বাধীনতা” কবিতায় যথার্থই বলেছেন ,

“অনিয়মের পাগলা ষাঁড় খেপেছে, ছুটেছে বেগে,
কারে বলিবো ওরে থামা, ধৈর্য্য ভেঙ্গে উঠো জেগে।
হায় স্বাধীনতা! তবে এর মানে অনিয়ম?
যা কিছু করিবো ভোগ, অন্যের বেরিয়ে যাবে দম”?

দেশে এখন “দখলবাজ”নামীয় হাওয়াই প্রতিষ্ঠান এর তত্পরতা সর্বত্র দিনদিন প্রসারিত হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে দখলবেদখল করেই চলছে । মাছের ঘের,বালু বাণিজ্য,খাসজমি , পাহাড় নদীদখল নিয়ে এই শ্রেণি উদ্ভব স্বাধীনতা ভোগ করছে। অনেকে এরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত পালিত।বড় বড় রাজনীতিবিদের ক্যাডার।এই কি স্বাধীনতা?মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? যদি তাই হয়ে থাকে,তখন শুধু বলার থাকে, হায় স্বাধীনতা! তুমি কি সেই গণমানুষের চাওয়া স্বাধীনতা?এমন স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে নিয়ে দেশ স্বাধীন করে নাই।তাই আইনের বিধিবিধান প্রতিষ্ঠিত না হলে অর্থবহ স্বাধীনতা অধরা রয়ে যাবে।আইনবিদদের অভিমত,”যেখানে আইন নাই, সেখানে স্বাধীনতা নেই “।

শিল্পী হায়দার হোসেনের জীবনমুখী একটি গানের কলি ,
“কি দেখার কথা কি দেখছি
কি শোনার কথা কি শুনছি
ত্রিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতা টা কে খুঁজছি”।
(পঞ্চাশ বছর পরে ও)

দেশের মানুষ সমষ্টিগত ভাবে সংগ্রাম করেছিল শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য।কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে পরাজিত গোষ্ঠী এবং সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট সরকার সমষ্টিগত সকল চেতনা ভেঙে পেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো পথে চলা শুরু করে। ব্যক্তিগত উন্নতির স্বপ্নই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়।ধনীর সংখ্যা বাড়তে থাকে অপরদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও উর্ধ্বমূখী হয়ে যায়। সমাজ এবং রাষ্ট্রে এ-ই বৈষম্য সৃষ্টির কারণ চিহ্নিত করা গেলেও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। রাজনীতিজ্ঞদের অভিমত, “শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায় নাই ,তার একটি পর্যায় অতিক্রম করছি আমরা”। তাই , মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়িত করতে হলে শোষিতের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। অনিয়ন্ত্রিত অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয় নাই, তাই নয়,কিন্তু সফলতা আসে নাই, কারণ এই শক্তিটি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যাধি হিসেবে বিভিন্ন ছদ্মাবরণে ঝাঁকিয়ে বসেছে।এটাই পুঁজিবাদ। এই পূঁজিবাদ ব্যাধিটিই স্বাধীনতার চেতনা বেড়ে উঠার প্রতিবন্ধকতা।

স্বাধীনতা মানে যার যা ইচ্ছে তাই করা নয়।নিজে স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে অন্যের স্বাধীনতার বিঘ্ন সৃষ্টি হলে তা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। নিজের সাথে অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আর শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাই অর্থবহ স্বাধীনতা নয়।দীর্ঘদিন উপনিবেশীক শাসনের ফলে আমাদের চিন্তা চেতনায় নতজানু মানষিক প্রবৃত্তির ছায়া স্থান করে নিয়েছে।তাই বঙ্গবন্ধু মুজিবের ভাষায়,
“বৈষম্য ও উপনিবেশীক আমলের ধ্যান ধারণা থেকে মুক্তি,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়ার মধ্যেই প্রকৃত স্বাধীনতা”।গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সম্বলিত রুপই স্বাধীনতা।সুশাসন ও ন্যায়বিচার সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণেই প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে নাগরিক।মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা, “গণতন্ত্রের চর্চা, মানুষের মৌলিক অধিকার, থাকবে না দূর্নীতি, জুলুম এবং ধনী গরীবের বৈষম্য তাইই স্বাধীনতা”।সততা,নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমেই স্বাধীনতা। শুধু ক্ষমতার স্বাধীনতা নয় স্বাধীনতাকে উপভোগ্য করতে বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথই বাংলাদেশে মানবমুক্তির পথ, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে।

বদরুল ইসলাম বাদল
সদস্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION