ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
পুরান ঢাকা এলাকা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করতে হাজী সেলিমের বাসায় গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিসহ অত্যাধুনিক কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমে রয়েছে আধুনিক ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার), ৩৮টি ওয়াকিটকি, ড্রোনসহ বিভিন্ন ডিভাইস। রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) নিরাপত্তায় নিয়োজিত এলিট বাহিনীর কাছে যেসব সরঞ্জাম থাকে, সেরকম সরঞ্জাম পাওয়া গেছে এখানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় এই কন্ট্রোল রুম ব্যবহার করা হতো বলে র্যাবের ধারণা। বিদেশি অস্ত্র, হ্যান্ড কাফ ও মদও জব্দ করেছে র্যাব।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১টা থেকে পুরান ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের চকবাজারের ২৬ দেবীদাস লেনের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ইতোমধ্যে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
‘কন্ট্রোল রুমের’ বিষয়ে র্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, হাজী সেলিমের আট তলা ভবনের তিন ও চার তলা থেকে এসব সরঞ্জামসহ তারা অবৈধ একটি বিদেশি পিস্তল ও একনলা বন্দুক জব্দ করেছেন। কালো ৩৮টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ওয়াকিটকির প্রতিটি চার কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কাভার করতো। এ ধরনের ওয়াকিটকি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করা নিষেধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, এছাড়া ওই বাসায় একটি ড্রোন, রাউটার, একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার বা ভিপিএস পাওয়া গেছে। এই ভিপিএস দিয়ে মূলত তার পুরো নেটওয়ার্কে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতো, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ট্র্যাক করতে না পারে। সাধারণত ভিপিএস ব্যবহারের অনুমোদন পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা। বিটিআরসি এই অনুমোদন দেয়। তবে হাজী সেলিম কোনও অনুমোদন নেননি।
বাসা থেকে আরও উদ্ধার করা হয়েছে- সাত বোতল বিদেশি মদ ও ১২ ক্যান বিয়ার।
এক জোড়া হ্যান্ডকাফও উদ্ধার করেছে র্যাব। র্যাবের ধারণা, এই হ্যান্ডকাফ পরিয়ে হাজী সেলিমের লোকজন র্যাব ও ডিবি পরিচয় দিয়ে মানুষকে ধরে নিয়ে যেত।
র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদ তাদের হেফাজতে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৬ অক্টোবর) হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুন্নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে সোমবার ভোরে মামলাটি করেছেন। মামলায় তিন জন নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলো, ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই তিন জন। গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে ঘটনার পরই গ্রেফতার করা হয় বলেও জানান তিনি।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে দুই-তিন জন ব্যক্তি নেমে ওয়াসিম আহমেদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ধানমন্ডি থানা পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি থানায় নিয়ে যায়।
ওয়াসিফ আহমদ এজাহারে অভিযোগ করেন, রবিবার (২৫ অক্টোবর) নীলক্ষেত থেকে বই কিনে মোটরসাইকেলে করে তিনি মোহাম্মদপুরে তার বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে তার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। ওয়াসিফ আহমদ মোটরসাইকেল থামিয়ে গাড়িটির গ্লাসে নক করে নিজের পরিচয় দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চান। তখন এক ব্যক্তি বের হয়ে তাকে গালিগালাজ করে। তারা গাড়ি নিয়ে কলাবাগানের দিকে যায়। মোটরসাইকেল নিয়ে ওয়াসিফ আহমদও তাদের পেছনে পেছনে যান। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে গাড়িটি থামলে ওয়াসিফ তার মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান। তখন তিন-চার জন লোক গাড়ি থেকে নেমে বলতে থাকে, ‘তোর নৌবাহিনী/সেনাবিহিনী বাইর করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বাইর করতেছি। তোকে আজ মেরেই ফেলবো’−এই কথা বলে তাকে কিলঘুষি দিতে থাকে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে এবং হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.