ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
পুরাতন মোবাইল কিনে বিপদে পড়ার কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু একদম নতুন মোবাইল দোকান থেকে কিনে বাসায় না ফেরতেই গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখে পড়ছেন- এমন বিষয়টি একদম নতুন। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভিকটিম ক্রেতারা সেই মোবাইল ফেরত দিয়ে গেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে।
রাজধানীর ফার্মগেটে বসবাসকারী ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদ। মোবাইল মার্কেট হিসেবে পরিচিত মোতালেব প্লাজার একটি দোকান থেকে 'ভিভো ওয়াই ২০' মোবাইল সেট কিনেন। মোবাইলে সিম বসাতে না বসাতেই গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে ফোন করা হয়। চোরাই মোবাইল কিনেছেন এমন কথা বলে ফোনটি মামলার আলামত হিসেবে জমা দিয়ে আসতে বলেন তাকে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশিক মোবাইল কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পারেন। পরে মোবাইলটি গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে দিয়ে আসেন।
গত সপ্তাহে ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম জানতে পারে, মগবাজারে চোরাই মোবাইল বিক্রেতা সিন্ডিকেট এক পার্টির জন্য অপেক্ষা করছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ১১ টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন প্যাকেট করা অ্যান্ড্রয়েড ফোনসহ চারজন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে এই ঘটনায় রমনা মডেল থানায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পেনাল কোড ৪১৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার আসামিরা হলেন মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম সবুজ এবং পলাতক হাসমত আলী।
এর আগে এই চক্রই কৌশলে চোরাই মোবাইল সংগ্রহ করে মোতালেব প্লাজায় বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে। পরবর্তীতে পুলিশ সেসব দোকানে অভিযান চালিয়ে মোবাইলগুলো জব্দ করে।
জানতে চাইলে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মামলাটি নিয়ে কাজ করছি। পলাতক হাসমত আলীসহ এই চক্রের আর যারা যারা আছেন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
চোরাই মোবাইল যেভাবে আসে সিন্ডিকেটের হাতে
আসামিদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, তারা দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই মোবাইল কিনে থাকেন এবং সেগুলো রাজধানীসহ মোবাইলের ভালো বিভিন্ন ভালো মার্কেটে বিক্রি করেন।
সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের উপজেলায় শোভন ইলেকট্রনিক্স নামের একটি দোকানের তালা ভেঙে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫ টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন চুরি হয়। মগবাজারে উদ্ধারকৃত মোবাইলের আইএমইআই নাম্বারে সঙ্গে টাঙ্গাইলের দোকান থেকে চুরি হওয়া ওই ৩৫ মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার মিলে যায়। আশিক মাহমুদের ফোনও তার মধ্যে একটি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরও জানায়, ৩৫ টি মোবাইলের মধ্যে ঢাকাতে ২০ টি এবং ঢাকার বাইরে অন্য শহরেও বিক্রি করা হয়। দুই হাত বদল করে মোবাইলগুলো তাদের কাছে এসে পৌঁছায় । আশিক মাহমুদের মতো একই প্রক্রিয়ায় শরীয়তপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর থেকে আরও বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করেছে ডিবি। যেগুলো ওই চুরি হয়ে যাওয়া ৩৫ মোবাইলের আইএমইআই তালিকাভুক্ত মোবাইল সেট।
শোভন ইলেকট্রনিক্সের মালিক শোভন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার দোকানের তালা ভেঙে ৩৫টি মোবাইল চুরি হয়। এ ঘটনায় আমি থানায় মামলা করেছি। সবগুলো মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার আমার কাছে লেখা ছিল। শুনেছি ঢাকাতে কিছু ফোন উদ্ধার হয়েছে।
মোবাইল চুরি চক্রের মূলহোতার ৯৯৯ এর ফোন
গ্রেফতার তিন আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশকে জানায়। মোবাইল চুরির মূলহোতা পলাতক আসামি হাসমত আলী। সেই তাদের কাছে চোরাই মোবাইল বিক্রি করে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চুরির সদস্যও সে। তার নামে সারাদেশে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় হাসমতকে সর্বশেষ শনাক্ত করা হয় টাঙ্গাইল জেলায় সদরে একটি তিন তলা বাড়িতে। একাধিক বিয়ে করা হাসমতের এক স্ত্রী থাকেন সেখানে। মধ্যরাতে বাড়ি ঘিরে রেখে ডিবি পুলিশ অভিযানে গেলে। হাসমতই পুলিশকে ডাকাত দল হিসেবে আখ্যায়িত করে ৯৯৯ এর মাধ্যমে লোকাল থানাতে ফোন দেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় বাড়ির ছাদ দিয়ে পাশের বিল্ডিং দিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা পুলিশের পরামর্শ
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, যেহেতু চারদিকে নানা রকম প্রতারণা করে মানুষ ঠকানো হচ্ছে। সেহেতু নতুন মোবাইল কেনার সময় নতুন মোবাইলের সঙ্গে মানি রিসিট সংগ্রহ করতে হবে। মানি রিসিট এর তারিখ অবশ্যই রাখতে হবে। বিক্রেতার স্বাক্ষর থাকবে। তাছাড়া বিক্রেতা যে মানি রিসিট দিবে, সেখানে ফোনের মডেল, কালার, আইএমইআই নাম্বার উল্লেখ করে নেওয়া ভালো।সুত্র: বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/ জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.