ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সারাবছরই পর্যটকের আনাগোনা থাকে। এতে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেও বাড়ছে উটকো ঝামেলা। পর্যটক নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই স্থানীয়দের। অনেক পর্যটক এসব এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজেন ভারতীয় পণ্য, কেউ খোঁজেন মাদক। তাদের প্রশ্ন শুনে শুনেও ক্লান্ত সীমান্তের মানুষরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যটকরা মনে করেন, সীমান্তে বাড়ি থাকা মানেই তিনি মাদক কিংবা চোরাচালানে যুক্ত।
বেনাপোল ও পুটখালী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী প্রায় সকল বাড়ির মানুষের অভিজ্ঞতা একই। ২৬ মার্চ শুক্রবার সকালে সীমান্তবর্তী গাতিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পর্যটক বাংলাদেশ ঘেঁষা ভারতীয় গ্রাম তেরঘর দেখতে এসেছেন। বাঁশের বেড়ায় ঘেরা তেরঘর দেখা শেষে গাতিপাড়ার বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় ঢুঁ মারেন তারা।
সীমান্তবর্তী মানুষের জীবন যাপনের কথা জানার পর প্রায় সবারই এক প্রশ্ন, ভারতীয় কোনও পণ্য আছে কিনা? এর মধ্যে অতিউৎসাহী কেউ আবার মাদকও খোঁজেন।
শাকিল, সবুজ, রিপনসহ আরও কয়েকজন তরুণ খুলনা থেকে বেনাপোল এসেছিল ঘুরতে। তেরঘর দেখার পর তারা ঢোকে গাতিপাড়ার এক বাড়িতে। তাদের উটকো সব অনুরোধে বিরক্ত হয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা কোহিনুর বেগম বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
কোহিনুর বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার আদি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট এলাকায়। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নদীয়ার ফুপুর বাড়িতে ওঠেন। ওই ফুপুই তাকে গাতিপাড়ায় বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে কোহিনুর বেগমের আর রানাঘাট যাওয়া হয়নি। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সীমান্তে বসবাসের অনেক জ্বালা আছে। যে কথা বলবো তাতেই দোষ।’
২০০৮ সালে তেরঘর ও গাতিপাড়ার মাঝে বাঁশের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই দুই গ্রামের মানুষ সবাই সবাইকে চেনেন, জানেন। তেরঘরের কারও বিপদ হলে বাংলাদেশিরাই এগিয়ে আসেন। ওখানে কেউ অসুস্থ হলে ইছামতি পাড়ি দিয়ে ভারতের হাসপাতালে যাওয়ার চেয়ে বেনাপোলের হাসপাতালেই দ্রুত আসা যায়।
গাতিপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন। ২৬ মার্চ জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সীমান্তে পরিবর্তন এসেছে অনেক। আগে উভয় দেশের বেশিরভাগ সীমান্তই অরক্ষিত ছিল। এখন সবসময় টহল থাকে। বিজিবি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাই চোরাচালানও কমেছে। আগে ইছামতি দিয়ে গরু আসতো। এখন আসে না।’
পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সীমান্তে পর্যটকরা এসেই ভারতীয় পণ্য খোঁজেন। কেউ কেউ এমন সব প্রশ্ন করেন, যাতে মানুষ বিরক্ত হয়।’ বেড়াতে আসা সবাইকে পর্যটকসুলভ আচরণ করার অনুরোধ করেন তিনি।
একসময় তেরটি ঘর ছিল বলে এর নাম তেরঘর। এখন ঘর আছে সাতটি। বাসিন্দাদের সবাই দরিদ্র। নৌকা বা ভেলায় চড়ে ভারতের মূল ভুখণ্ডে পা রাখতে হয় তাদের। ইছামতিতে মাছ ধরেই জীবন চলে। গ্রামে কোনও স্কুলও নেই। এখানকার যে ক’জন শিক্ষার্থী আছে, তাদের পড়তে যেতে হয় ভারতের বনগাঁ ও কল্যাণীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে।
বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, ‘তেরঘরের মানুষ ভারতীয় হলেও তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ সব বাংলাদেশিদের মতো। তাদের বিপদে মানবিক কারণে বাংলাদেশিরাই এগিয়ে যায়।’
ভয়েস/ জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.