ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেশের অন্যান্য খাতের মতো হোটেল শ্রমিকদের মতো নয় নিয়োগ-ভাতা-ছাঁটাই পদ্ধতি। এই খাতে মালিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়, ইচ্ছা অনুযায়ী হয় বেতন-ভাতাও। আবার ছাঁটাইয়েও একচেটিয়া ক্ষমতা মালিকপক্ষের। তাদের মর্জির ওপরই নির্ভর করে হোটেল শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা। তাই প্রায়ই উদয়াস্ত পরিশ্রম করলেও ন্যায্য মজুরি ভরসা যেমন নেই, তেমনি নেই চাকরি টিকে থাকার নিশ্চয়তাও। শ্রমিকরা বলছেন, হোটেল মালিকদের কম মুনাফা হলে তাদের বেতনও কমিয়ে দেন, কিংবা ছাঁটাই শুরু করেন। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মুনাফা হলেও তাদের আর বেতন বাড়ে না। করোনাকালে সেই সংকট বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। তাই এই শ্রমিকদের একমাত্র সঙ্গী ‘নীরব কান্না’। কিন্তু সেই কান্না শোনারও কেউ নেই বলেও তারা আক্ষেপ করেন।
বাবা স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার ফারুকের। থাকেন রাজধানীর চানখারপুল এলাকায়। কাজ করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল ক্যান্টিনে। বাবুর্চি হিসেবে কাজ করে মাসে পেতেন সাড়ে ৬ হাজার টাকা। খাবার ফ্রি। কিন্তু করোনায় ক্যান্টিন বন্ধ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। বাবা বয়োবৃদ্ধ।
ফারুক বলেন, ‘এখন কোনো কাজ নেই। যখন যেটা পাই, সেটাই করি। বাড়ির মালিকের কাছে দেনা হয়ে গেছি প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বাচ্চাদের জন্য একটা ভালো খাবার কিনতে পারি না। বাবা অসুস্থ। আর জিনিসের দাম অনেক বেশি। খুব কষ্টে আছি ভাই। ইউনিভার্সিটি কবে খুলবে, জানাইয়েন ভাই। অথবা কোনো একটা কাজ পাইলেও জানাবেন দয়া করে।’
সুমন কাজ করেন রাজধানীর একটি ছোটখাটো হোটেলে। বাবা নেই। মা ও বোনকে নিয়ে সংসার। নিজে যা উপার্জন করেন, তাতে সংসার চলে না। মা অন্যের বাসায় কাজ করে খাবার, বাসা ভাড়ার খরচ জোগাতেন।
এই হোটেল শ্রমিক বলেন, ‘আগে মা বাসায় কাজ করতেন। এখন করোনার কারণে অন্যের বাসায় কাজ করতে পারেন না। হোটেলেও বেচা-বিক্রি আগের মতো নেই। আগে দৈনিক মজুরি দিতো ৪০০ টাকা। মাঝে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু করেছি। তবে, দৈনিক মজুরি আগের চেয়ে ১০০ টাকা কম দেওয়া হয়। তবু পরিবারের জন্য কিছু তো একটা করতে হবে।’
হোটেলে কর্মচারী তালহা বলেন, ‘আগে হোটেলে চাকরি করে যে টাকা পেতাম, তা দিয়েই সংসার চালাতে কষ্ট হতো। এখন তো আরও কম পাই। আর জিনিসের দামও আগুন। পরিবার নিয়ে একটু ভালো কিছু খাবো বা করবো, তা শুধু সখই আছে। পূরণ হওয়ার মতো অবস্থা নেই।’
মাসুদ নামের আরেক হোটেল কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের দিকে কে তাকাবে? না সরকার, না হোটেল মালিকরা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু। রাত পর্যন্ত চলে। দিনশেষে মজুরির মাত্র ৪০০ টাকার কাছাকাছি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। পরিবারের জন্য খরচ করতেই পুরো টাকা চলে যায়। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কোত্থেকে খরচ জোগাবো, ভেবে কুল পাই না।’
হোটেল মালিক জায়েদ মোল্লা বলেন, ‘আগের মতো বেচা-বিক্রি নেই। কর্মচারী আগে বেশি ছিল। এখন ছাঁটাই করেছি। দুই-একজন রাখছি। বেচাবিক্রি না থাকলে কিভাবে কী করবো?’
আরেক হোটেল মালিক সাহেদ হোসেন বলেন, ‘আমার প্রয়োজন যতজন, ততজন রেখেছি। কাউকে তাদের চাহিদার চেয়ে কম টাকা দেই না। আপনি গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, আমার একটা কর্মচারীও অখুশি নেই। অন্তত আমার ওপর। কারণ তারাও মানুষ, আমিও মানুষ। হোটেল মালিকদের সবারই এমন সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।’
ঢাকা মহানগর হোটেল শ্রমিক নেতা আল আমিন বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী হোটেলের কর্মচারীরা সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও কিছুই তারা পাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘হোটেলমালিকদের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের কোনো নিয়োগপত্র বা পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না। মালিকেরা তাদের মতো সব চালায়। সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও হোটেল শ্রমিকদের শামিল করা আবেদন জানাই।’
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.