ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
অন্যদিনের মতো নিজেদের পারিবারিক লেদ মেশিনে কাজ করছিলেন সুমন শেখ।
সুমনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ হলেও ব্যবসায়িক কারণে অনেক বছর থেকে পরিবারসহ থাকছেন ময়মনসিংহে। সেদিন কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সুমন। এতে তার দুই চোখে সমস্যা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করেন ময়মনসিংহে। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে ছোট ভাই সুজন তাকে নিয়ে আসেন ঢাকার আগারগাঁওয়ে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে।
চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্ণিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদেরের তত্বাবধানে সুমনের চিকিৎসা চলে প্রায় আট মাস। নিয়মিত চেক-আপের জন্য প্রতি মাসে দুইবার করে সুমনকে আসতে হতো ঢাকায়। ময়মনসিংহ থেকে ছোট ভাই সুজন নিয়ে আসতেন তাকে। চিকিৎসার মাধ্যমে তার বাম চোখের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও ডান চোখ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
চিকিৎসক বলেন, একটা কর্ণিয়া পাওয়া গেলে সুমনের চোখে লাগিয়ে দেবেন। এরপর সুমন আগের মতো দেখতে পারবে।
চিকিৎসকের কথা মতো সুমন সন্ধানীতে একটি চোখের জন্য আবেদন করেন। সেটাও প্রায় দুই-তিন মাস আগের ঘটনা। সুমন আর তার স্ত্রী, পরিবার আশায় বুক বাঁধে। নিশ্চয়ই কোনো একদিন সন্ধানী থেকে ফোন করে জানাবে- একটা চোখ পাওয়া গেছে। দিন যায়, মাসে দুইবার সুজন বড় ভাই সুমনকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। কাঙ্খিত ফোনকল আর আসে না। বরং এ বছরের ১৮ এপ্রিল তাদের পরিবারে নেমে আসে এক ভয়াবহ বিপদ।
ছোট ভাই সুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। যে ছোট ভাই সুমনকে নিয়ে মাসে দুই বার ঢাকায় যেতেন, তরতাজা ২৮ বছরের সেই ভাইটি হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় পড়ে শেষ! শোকের পাশাপাশি পরিবারের সবাই মিলে সুজনের লাশের সামনে বসে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। সুজনের চোখ দুটি তারা সন্ধানীতে দান করে দেবেন।
সেদিন রাতেই ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সুমনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঢাকায় আসেন। সুমনের নিয়মিত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদেরের পরামর্শ মতো তারা ঢাকা মেডিক্যালে চলে যান। সেখানে প্রিয় ছোট ভাইয়ের চোখ দুটি দান করে দেন। তারপর ছোট ভাইয়ের লাশ দাফনের জন্য নেওয়া হয় পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। এদিকে, সুমনের চোখে ছোট ভাই সুজনের চোখ স্থাপনের সব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেন অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের।
পরদিন ১৯ এপ্রিল সকালবেলা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটে সুমনের চোখে ছোট ভাই সুজনের চোখের কর্ণিয়া সংযোজন করেন অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের। খুব যত্ম আর মায়া নিয়ে কাজটি করেন তিনি। তার আন্তরিকতায় সুমনের চোখে কর্ণিয়া সংযোজনের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এরপর সময় যায়। এক সপ্তাহ পরে সুমনের চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়। ধীরে ধীরে চোখ খোলেন সুমন। চারপাশের সুন্দর পৃথিবী দেখেন তিনি।
ভাগাভাগি করে দুজনের দুই চোখ দিয়ে আগের মতো পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখছেন সুমন শেখ। কেবল ছোট ভাইয়ের প্রসঙ্গ এলে, সুজনের কথা মনে হলে, তার নিজের এবং ভাইয়ের দুচোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরে। ছোট ভাইটা কোনোদিন জানতেও পারবে না, তার বড় ভাই সুমন এখন আগের মতো দুই চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। যার একটি চোখ তার নিজের।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.