ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পর গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানী ছেড়েছে মানুষ। দ্বিগুণ ভাড়া, তীব্র যানজট ও উপচে পড়া ভিড় চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে তাদের। গতকাল বাস-ট্রেন ও নৌপথে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত।
রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ বাসই বর্ধিত ভাড়ার দ্বিগুণ আদায় করেছে যাত্রীদের কাছ থেকে। তাছাড়া সরকারের নিয়ম অনুযায়ী পাশের সিট খালিও রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা জানিয়েছেন, দ্বিগুণ ভাড়া দেয়ার পরও টিকিট পাওয়া যায় না। আশরাফুল আলম নামের এক যাত্রী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার ভাড়া ২৫০ টাকা। এখন টিকিট কাটতে হয়েছে ৫০০ টাকা দিয়ে। পাশের সিটেও যাত্রী ছিল।
লক্ষ্মীপুরগামী ইকোনো বাসের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এক সিট ফাঁকা রাখার নিয়ম বেশির ভাগ বাস মালিকই মানছেন না। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের থেকে ভাড়া কিছুটা কম রাখছেন। তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ হিসেবে ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরের ভাড়া ৬০০ হলেও তারা ৫০০ টাকা রাখছেন। তাই যাত্রীরা এক সিট খালি রাখার বিষয়টি নিয়ে তেমন আপত্তি করছেন না।
এদিকে বেশি ভাড়া দিয়েও সময়মতো বাস পাচ্ছেন না যাত্রীরা। সময়মতো বাস না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের। তাদেরই একজন আলিফ। তিনি সকাল ৯টায় গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছে অপেক্ষা শুরু করেন। অবশেষে বেলা ১টায় বগুড়ার বাসে উঠতে পারেন তিনি। আলিফ জানান, প্রথমে কয়েকটা বাসে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় ইচ্ছা করেই সেগুলোতে ওঠেননি তিনি। অনেক সময় পরপর বাস আসে, ফলে সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো যাত্রীতে বোঝাই হয়ে যায়। যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্বে নিয়ম মেনে চলেন না। অনেক যুদ্ধের পর বেলা ১টার বাসের টিকিট পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে তীব্র যানজট ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে বহুগুণ। গতকাল ভোর থেকে সাভারে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে বাড়াইপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত আরিচামুখী লেনে আট কিলোমিটার ও গেন্ডা থেকে হেমায়েতপুর ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা যানজট ছিল। পাশাপাশি টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে আশুলিয়া বাজার থেকে ধউর তিন কিলোমিটার ও জিরাব থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা থেকে আরিচাগামী লেনে যানজটের ফলে গাবতলী এলাকা থেকে সাভার পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। এছাড়া সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে নবীনগর-বাইপাইল পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। সেই সঙ্গে তীব্র গরমে দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে আটকে থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায়ও গতকাল প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরের পর শুরু হওয়া এ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ ও গাড়িচালকরা। জানা গেছে, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঊষা জুট মিল পর্যন্ত সড়কের দুপাশে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ। চালকরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী পরিবহনের অতিরিক্ত চাপ ও পথচারীরা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করায় প্রতিবারই ঈদের আগে ও পরে এ জায়গায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
একই চিত্র ছিল ঢাকা সদরঘাটেও। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ছিল চরম উপেক্ষিত। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানিয়েছেন, দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে কেবিন ও চেয়ার পেতে রাখা হয়েছে। হাতিয়ার যাত্রী মুহসিন আল জাবির বণিক বার্তাকে বলেন, হাতিয়ার লঞ্চগুলোতে ডিলাক্স কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ১০০ টাকা। সে কেবিন পেতে তাকে ২ হাজার ৫০০ টাকা গুনতে হয়েছে। বরিশাল-চাঁদপুরে লঞ্চেও দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মানতেও দেখা যায়নি যাত্রীদের। চাঁদপুরের নিয়মিত যাত্রী শাহীন বণিক বার্তাকে বলেন, কেবিন তো পাওয়া যাচ্ছেই না, কেবিনের সামনের চেয়ার পর্যন্ত ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন নজির আগে কখনো দেখিনি।
যদিও বিধিনিষেধ শিথিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যাত্রী ও লঞ্চ মালিকদের জরিমানা করা হবে। তবে দ্বিতীয় দিনে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের দ্রুতযান এক্সপ্রেসসহ বেশকিছু ট্রেনেও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। যদিও ট্রেনের টিকিট কাটতে হচ্ছে অনলাইনে, কিন্তু রেলওয়ের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। ঈদ যত এগিয়ে আসবে, এ অবস্থা তত বাড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিয়মিত ট্রেন যাত্রীরা। সূত্র:দৈনিক বণিকবার্তা।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.