মুহাম্মদ ইকরামুল ইসলাম:
ইসলামে বিয়ে একটি ইবাদত। মানববংশ বিস্তারের সূচনাপর্ব। জৈবিক চাহিদা পূরণ, চরিত্র সংরক্ষণ, অশ্লীলতা ও ব্যভিচারমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের জীবনে পূর্ণতা আসে, পরিপূর্ণতা ও পরিশুদ্ধতা আনে ইমানে। এটি মানুষের জীবনে স্বস্তি, প্রশান্তি ও নিরাপত্তা এনে দেয়। আল্লাহতায়ালা বিয়েকে তার নিদর্শনাবলি হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘এবং তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদের। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ সুরা রুম : ২১
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, তারা যেন অবশ্যই বিয়ে করে। কেননা, তা দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান পবিত্র রাখে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজাই তার কাম-উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ সহিহ্ মুসলিম : ৪৪৯
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন বিয়ে করে তখন সে তার ইমানের অর্ধাংশ হাসিল করে ফেলে। সুতরাং সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।’ মিশকাতুল মাসাবিহ : ২৯৬২
অনেক আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে একটি দাম্পত্য জীবনের পথচলা শুরু হয়। সুখ-শান্তি, দুঃখ ও কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে একে অপরের পাশে থাকার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে, জীবনের গতিপথ অনেক সময় কণ্টকাকীর্ণ হয়। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কের এই টানাপোড়নের ইতি টানতে অনেকে বিয়ে বিচ্ছেদের মতো পঙ্কিল পথ বেছে নেয়। আবার কাউকে প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুবরণ করে প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে পাড়ি দিতে হয় অনন্তকালের পথে।
একজন তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্ত কিংবা বিধবা নারী যখন নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে যাবে, সেক্ষেত্রে ইসলামি আইনে স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কিছু বিধান রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা অবশ্য কর্তব্য।
বিধবা, বিয়ে বিচ্ছেদজনিত কারণে স্বামী পরিত্যক্ত স্বাধীন নারী, কিংবা স্বামীর সঙ্গে বৈধপন্থায় বিয়ের চুক্তি বাতিলকারী নারীদের জন্য পুনরায় বিয়েতে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং এমন নারীদের বিয়ের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে পুনরায় বিয়ের জন্য কিছু সময়সীমার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। এ জাতীয় নারীদের ওই সময়ের মধ্যে পুনরায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ, সেই নির্ধারিত সময়সীমাকে ইসলামি আইনের পরিভাষায় ‘ইদ্দত’ বলে। ইদ্দত পালনে সতর্কতামূলক অবস্থান অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, (উম্মতকে বলে দিন) তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দিতে চাও, তখন তাদের তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোনো সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে।’ সুরা তালাক : ১
অবস্থাভেদে ইদ্দতের সময়সীমা ভিন্ন ভিন্ন হয়। তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইদ্দতকাল বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছায়নি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’ সুরা তালাক : ৪
‘আর তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েজ (মাসিক ঋতুকাল) পর্যন্ত।’ সুরা বাকারা : ২২৮
‘মুমিনরা, তোমরা যখন মুমিন নারীদের বিয়ে করো, অতঃপর তাদের স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদের ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নেই। অতঃপর তোমরা তাদের কিছু দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে।’ সুরা আহজাব : ৪৯
বিধবা নারীর ইদ্দত পালন প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদের ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ সুরা বাকারা : ২৩৪
বিধবা নারী গর্ভবতী হলে তার ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। হজরত মিসওয়াক ইবনে মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সুবাইয়া আসলামিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সন্তান প্রসব করেন। তিনি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বিয়ের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বিয়ের অনুমতি দেন। অতঃপর তিনি অন্যত্র বিয়ে করেন।’ মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩১৮৫
ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজিক জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় বিধান ও অনুশাসন মেনে চলার জন্য যতটুকু জ্ঞান ও দীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, এতটুকু অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত আবশ্যক। সুতরাং কোনো বিষয় ভালোভাবে না জেনে সে বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ইসলাম কখনোই অনুমতি দেয় না। অজানা বিষয় বিজ্ঞজন থেকে জেনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
বিয়ে ও তালাক এবং তালাকপ্রাপ্তা ও বিধবা নারীর পুনর্বিবাহ; এগুলো মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ ও খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এসব বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে-চিন্তে। সতর্ক ও সাবধান থেকে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।সূত্র: দেশ রূপান্তর।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.