ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে পড়েছে শিক্ষা খাত। তবে অ্যাসাইনমেন্ট, ওয়ার্কশিট ব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস এবং বিটিভির দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার ঘাটতি কমাতে পেরেছে দেশের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাতৃভাষা শেখা থেকে বঞ্চিত মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা শিশু।
ইউনিসেফ এবং তাদের অংশীদার বেসরকারি সংস্থাগুলো ২৮ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাম্পে সাড়ে ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। ব্র্যাক, কোস্ট, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, জেসিএফ, মুক্তি, পরিকল্পনা এবং ডব্লিউভিআইসহ অংশীদার সংস্থা ইউনিসেফ ক্যাম্পে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু অতিমারির কারণে ২০২০ সালের মার্চে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার কোনও সুযোগই পায়নি।
ইউনিসেফ আরও জানায়, ২০২০ সালের মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর গত বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এসময় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আবারও বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রায় দুই বছর মাতৃভাষাসহ প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুরা।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর একটানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। করোনার সংক্রমণ কমে আসলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ বন্ধের পর কয়েক মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলেও রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এরপর করোনার সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও প্রাথমিক স্তরের শ্রেণি পাঠদান শুরু করা যায়নি। আগামী ২ মার্চ থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ পাবেন। এই পরিস্থিতিতে মার্চ থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুযায়ী ১০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে পাইলটিং করার কথা ছিল। করোনার কারণে এটা পিছিয়ে গেছে। এলসিগুলো খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেগুলো পিছিয়ে যায়। আবার যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান শুরু হবে তখন পাইলটিং শুরু হবে। আর একই কারণে ইউনিসেফের নেতৃত্ব যে লার্নিং সেন্টার ছিল সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
ভাসানচরে মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, এরা মুসলমান, সে কারণে তারা নিজেরা মাদ্রাসা বা হেফজখানা টাইপের করেছে। এটাতে দাতা সংস্থা বা বাংলাদেশ সরকারের কোনও অর্থায়ন নেই। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের একটি সময় ফেরত যেতে হবে। সে কারণে আমরা সতর্ক থাকি মিয়ানমারের কারিকুলাম যাতে পড়ানো হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে।
ইউনিসেফ জানায়, লার্নিং কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করা হয় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জন্য শিক্ষার জন্য। শুধু শিক্ষার প্রবেশাধিকার পূরণের জন্য নয়। চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে এবং তাদের সহিংসতা, শোষণ এবং অপব্যবহারের সংস্পর্শে কমিয়ে আনতে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণেই রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শিক্ষার জন্য মিয়ানমার কারিকুলামের পাইলট হিসেবে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে বার্মিজ এবং ইংরেজিতে পড়ানো হচ্ছে। মূল বিষয় হচ্ছে বার্মিজ, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক অধ্যয়ন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার বিষয় তুলে ধরে ইউনিসেফ জানায়, ইউনিসেফ ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হবে। লার্নিং কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাপ্রোচ এবং মিয়ানমারের কারিকুলামে শিশুদের দক্ষতা এবং বয়সের ওপর নির্ভর করে শিক্ষা দেওয়া হবে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাদের মাতৃভাষা এবং ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন থেকে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতন চালালে ওই বছর আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় আসতে শুরু করে। ২০১৭ সালের সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে। তবে জন্মহার বেশি হওয়ায় গত তিন বছরের বেশি সময়ে ব্যাপকহারে বেড়েছে তাদের সংখ্যা।সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
ভয়েস/ জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.