ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
নারী অধিকার আন্দোলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোর বার্তা। নারীর পক্ষে কথা বলতে হলে পুরুষের বিপক্ষে বলতে হবে এমন ধারণা বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে নারীবাদ আন্দোলন সম্পৃক্তরা বলছেন, কৌশলগত কারণেই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও করণীয় নির্ধারণে নারীর পাশে সমানভাবে পুরুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বছরের নারী দিবসে জাতিসংঘের স্লোগান ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’। নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়ে একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আরও বেগবান হোক, এই কামনা নিয়ে নির্ধারণ হবে আগামীর পথচলা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য এবার— ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।
নারী-পুরুষের সমতায় এখনও বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন ২০২১-এ দেখা গেছে, নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ৬৫তম। ২০২০ সালে বাংলাদেশের এ অবস্থান ছিল ৫০তম।
মূলত চারটি প্রধান সূচকের ভিত্তিতে বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন তৈরি হয়। ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর পরিমাপ করা হয়। চারটি সূচকের মধ্যে তিনটি সূচকেই আগের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ পিছিয়েছে। অর্থাৎ এসব সূচকে দেশে লিঙ্গবৈষম্য বেড়েছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে নারীর হয়ে, নারীর সঙ্গে অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি। নারী আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এটি কোনোভাবেই পুরুষ জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করে অর্জন সম্ভব নয়।
নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক বলেন, ‘যখন থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম নারীপক্ষ দিলাম, তখন থেকেই একটি প্রশ্ন শুরু হলো- তোমরা কি পুরুষের বিপক্ষে? নারী এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে, অনেকগুলো সূচকে। সেই পিছিয়ে থাকাটা কমাতে নারীর পক্ষে আলাদাভাবে দাঁড়ানোর দরকার ছিল। পুরুষ-নারীর মধ্যে যে পার্থক্যটা দেখা যায় সেটা স্বাভাবিক নয়। ইতিহাস ও সমাজ গড়ে দেওয়া পার্থক্য এটি। যা বিলুপ্ত করা নারী-পুরুষ উভয়েরই দায়িত্ব। এ বৈষম্য দূর হলে নারী যেমন উপকৃত হবে, পুরুষও হবে। একটা সম্পর্ক সমতাভিত্তিক হলে সবার জন্য ভালো। তিনি আরও বলেন, ভুলে গেলে চলবে না, এর মধ্য দিয়ে পুরুষকেও মানুষ হিসেবে বাঁচবার সুযোগ করে দেওয়া হয়। কেননা পুরুষ হিসেবে তাকে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়, যেটা তার ওপর বোঝা। নারীমুক্তির সঙ্গে পুরুষের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এটা বুঝতে পারা খুব জরুরি। পুরুষ যদি সমর্থন না করে, খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারবো না। পুরুষ-নারী উভয়ের প্রতি আমার আকুতি— যে নারী লড়াই করছে তাকে বিচার করবেন না, পাশে দাঁড়ান। সেটা না পারলে চুপ করে থাকুন। নারীকে নারী হিসেবে চিনুন, বুঝুন, সম্মান করুন।’
‘আমরাই পারি’ প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘এই পক্ষ-বিপক্ষ বিষয়টা অবচেতনে চলে আসে। নারীর পক্ষে কিছু করতে চাইলে বেশিরভাগ সময় পুরুষের বিপক্ষে কাজ করা হচ্ছে কিনা সে প্রসঙ্গ চলে আসে। এটা আন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রক্রিয়া। বিষয়গুলো যে নারী বনাম পুরুষ নয়— সেটা চাপা পড়ে যায়। লড়াইটা মুখোমুখি করে দেওয়ার প্রবণতা থেকেই এটা করা হয়। অথচ আন্দোলন থেকে পুরুষও লাভবান হবে। কিন্তু বিষয়টা এমনভাবে সাজানো হয়— যাতে পরস্পরের প্রতিযোগী মনে হয়। তিনি সমালোচনা করে বলেন, শুরুর দিকে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলার সময় পুরুষ বিযুক্তভাবে করা হয়েছে। সেসব কাজে পুরুষের সুবিধার ব্যাখ্যা দেওয়া ছিল না। বিষয়টা ঠিক পুরুষের মতো হওয়া নয়, নারী যেটা করতে চায় সেটা করার স্বাধীনতা পাওয়া। এই বেসিক জিনিসের বোঝাপড়া হতে এখনও বাকি।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.