ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
‘পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬’ এর ২৮ (১) ধারা অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পারিশ্রমিক, সুযোগ-সুবিধা এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলি পরিচালনা বোর্ড নির্ধারণ করে থাকে। এমনকি এমডিকে অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া আছে বোর্ডকে।
কিন্তু সেই পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অবমাননা করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের আগস্টে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে ও সদস্যদের না জানিয়ে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠান তিনি। শুধু তাই নয়, বোর্ডের বাতিল করা সিদ্ধান্তকে গ্রাহ্য না করে এবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনলাইনে অফিস করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন ওয়াসার এমডি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার শিল্প ও বণিক সমিতি, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একজন করে প্রতিনিধি ওয়াসা বোর্ডের সদস্য হয়ে থাকেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এলাকাধীন পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী নারীসহ দুই জন সদস্য হবেন, সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য ও পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের সদস্য হবেন। সদস্যদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন।
ওয়াসা বোর্ড সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাইয়ের বোর্ড সভায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান পানির দাম ২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাব আমলে নিয়ে বোর্ড চলতি মাসে পাঁচ ভাগ ও আগামী জানুয়ারি মাসে ১৫ ভাগ দাম বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়েছিল, পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিন্তু তাকসিম এ খান বোর্ডকে না জানিয়ে গত ৪ আগস্ট পানির দাম ২৫ ভাগ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। এ ঘটনায় ওয়াসার বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা ক্ষুদ্ধ হন।
সেই রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি আবারও বোর্ডের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৭ জুলাইয়ের বোর্ড সভায় ওয়াসার এমডি যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করার অনুমতি চেয়েছিলেন। বোর্ড সেই অনুমতি না দিয়ে তাকে ছয় সপ্তাহের ছুটি মঞ্জুর করে।
কিন্তু তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে লেখা অনুমতির আবেদনে উল্লেখ করেন— ‘আমার বহিঃ বাংলাদেশ অবস্থানকালীন সময়ে আমি অন ডিউটি থাকবো।’
শুধু তাই নয়, তিনি আরও লিখেছেন— ১০ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বোর্ড তাকে যে ছুটি দিয়েছিল, তিনি জরুরি দাফতরিক কাজের জন্য যেতে পারেননি। এরপর তিনি ছুটির কথা উল্লেখ না করে লিখেছেন, ‘আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা যাত্রার তারিখ থেকে ছয় সপ্তাহের বহি:বাংলাদেশ (যুক্তরাষ্ট্র) গমনের জন্য অনুমতি প্রয়োজন।’
মন্ত্রণালয়কে পাঠানো দুটি আবেদনের অনুলিপি এই প্রতিবেদক দেখেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনি বিভিন্ন সময়ে যেখানে আটকে যান, সেখানে তিনি বিভিন্ন আইন দেখান। কখনও ওয়াসার আইন দেখান, কখনও সরকারি আইন দেখান। এসব ঘটনার পর ওয়াসার যে আইন রয়েছে, সেটি উনি মানছেন কিনা, সে ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।’
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘তার (ওয়াসার এমডি) যে কর্মকাণ্ড তাতে জানি না অন্যরা বিব্রত হচ্ছেন কিনা, কিন্তু আমি খুবই বিব্রত। একটা সিদ্ধান্ত হচ্ছে— সেই সিদ্ধান্তকে বাইপাস করে তিনি অন্যটি করছেন। এটি তিনি করতে পারেন না। আমার মনে হয়, বোর্ড সদস্যদের এ ব্যাপারে শক্ত করে কথা বলা উচিত। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ওয়াসা বোর্ডের যে সভা রয়েছে, সেখানে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে, তিনি একটি মিটিং এ আছেন বলে কেটে দেন। পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এখানে একটা ভুল হয়েছে। তিনি প্রথমে পাঁচ দিন থাকবেন কোপেনহেগেনে। ওখানে থাকার সময় দায়িত্বরত থাকবেন। কারণ, ওখানে একটি সেমিনার আয়োজন করবেন। আগের চিঠি বদলে দেওয়া হয়েছে। তারিখ বদল করে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটা উনি বলেছেন।’
বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এ ধরনের চিঠি লেখা আইনের লঙ্ঘন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা বলছে যে, তার ভুল হয়ে গেছে। এখন ঠিক করে নিয়েছেন। যদি তাই হয়, তাহলে তো আর অসুবিধা নেই।’
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.