আবদুল আজিজ:
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটি, কখনও সাগরে কখনও বালিয়াড়িতে। একটি যে দিকে ছুটছে অন্যরাও সেদিকে ছুটছে। এ যেন সুশৃঙ্খল বিশাল এক লাল বাহিনী। নির্জনে উঁচু বালিয়াড়িতে বসে লাল কাঁকড়ার এ নৈপূণ্যতা দেখতে দেখতে নজর কাড়বে ঢেউয়ের সঙ্গে ডলফিনের লাফালাফি। ক্ষণে ক্ষণেই কানে বাজবে পাখ-পাখালীর কিচিরমিচির ডাক। সঙ্গে রয়েছে রাজ কাঁকড়াসহ নানা সামুদ্রিক প্রাণীর আনাগোনা। পাশেই লাগোয়া প্যারাবন। এখানেই নৌকায় করে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যাবেন সুন্দরবনের প্রকৃতিতে। অপরূপ এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে।
কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এটি। এই দ্বীপেই রয়েছে একসঙ্গে সমুদ্রসৈকত ও সুন্দরবন দেখার সুযোগ। এ দ্বীপের একদিকে প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) ও অন্যদিকে বিশাল বালিয়াড়ির সমুদ্রসৈকত। এটি আবার স্বর্ণদ্বীপ হিসেবেও বিখ্যাত। বিরল প্রজাতির পাখ-পাখালী, বৃক্ষ ও লতাগুল্ম এবং সামুদ্রিক প্রাণীর আধার এই দ্বীপ এখন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয়।
অপরূপ সোনাদিয়া দ্বীপের তিনদিকে নীল সাগর, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন, সব মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে। যা দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমায় এ দ্বীপে। বিভিন্ন অতিথি পাখি ও জলচর পাখিরও দেখা মিলবে সোনাদিয়া দ্বীপে।
যেভাবে যাবেন সোনাদিয়া
দেশের যে কোনও স্থান থেকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। তারপর কক্সবাজার ৬ নম্বর ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে হবে মহেশখালী। তারপর সেখান থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্যে স্পিডবোট পাবেন। ভাড়া পড়বে প্রতিজন ৭৫ টাকা। মহেশখালী ঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১২-১৫ মিনিট। স্পিডবোটে চড়তে ভয় লাগলে কাঠের নৌকাতেও চড়তে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা। সময় লাগবে ৪৫-৫০ মিনিট।
সোনাদিয়া দ্বীপে আছে থাকার ব্যবস্থা
এছাড়া মহেশখালী ঘাটে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারেন গোরকঘাটা বাজারে। ভাড়া লাগবে ২০ টাকা। এরপর আপনাকে যেতে হবে ঘটিভাঙ্গায়, মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙার দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ৩-৪ জন হলে একটা সিএনজি নিয়ে যেতে পারেন ঘটিভাঙ্গা, ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা।
সেখান থেকে আবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সোনাদ্বিয়া দ্বীপে যেতে হয়। ঘটিভাঙ্গা নেমে খেয়া নৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেই সোনাদিয়া দ্বীপ।
তাঁবুতে রাত্রিযাপন
নির্জন সৈকতে মানুষের আনাগোনা নেই। রাতে আরও সুনসান। আছে শুধু ঢেউয়ের গর্জন। সোনাদিয়া সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ায় বালিয়াড়িতে সারি সারি তাঁবু টানিয়ে পর্যটকরা রাত যাপন করেন। বালিয়াড়ির পাশে ঝাউবনের ভেতরেও রাত যাপনের জন্য টাঙানো হয় তাঁবু।
পূর্ব পাড়ার ক্যাম্প ফায়ারের মালিক ইমরুল রাকিব বলেন, ‘পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে রাত যাপনের জন্যে তাঁবু ও ইকো সিস্টেম টংঘর করা হয়েছে। এখানে পর্যটকরা সমুদ্রের তাজা মাছ ও দ্বীপে উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়ার সুযোগ পায়।’
তবে অবশ্যই দ্বীপে রাত যাপনের জন্যে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সোনাদিয়া দ্বীপে শুধু নৌভ্রমণেই পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। তবে দ্বীপে ভ্রমণ ও রাত যাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে সামুদ্রিক প্রাণীর বিচরণ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়। প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে যেন সবাই বিরত থাকে। তাহলেই এ দ্বীপ আকর্ষণ হারাবে না।’
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.