মাওলানা আবদুল জাব্বার:
অলসতা একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি, যা মানুষকে ধীরে ধীরে অশুভ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। মানুষের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনকে মূল্যহীন করে দেয়। প্রাণবন্ত জীবনের সজীবতা ও কর্মময় জীবনের গতিময়তাকে উদাসীনতায় পর্যবসিত করে দেয়। এ জন্যই একজন প্রকৃত মুমিন অলসতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে।
আল্লাহর কাছে এর কবল থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় চায়। তা ছাড়া অলসতা সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। ইমাম রাগেব (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি অলসতা করেছে সে ধ্বংস হয়েছে। অলস ব্যক্তি মানুষ তো নয়; বরং জীবজন্তুর কাতারেও পড়ে না। সে হলো মৃতদের মতো। যে ব্যক্তি অলসতাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করে এবং অত্যধিক আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁকে পড়ে, সে নিজের শান্তি হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, যদি তুমি চাও কখনো ক্লান্ত হবে না, তাহলে (পরিশ্রম করে) ক্লান্ত হও। যাতে সামনে তোমাকে ক্লান্তি ছুঁতে না পারে।
যে ব্যক্তি নিজের মর্যাদাকে উন্নত করতে চায় তার জন্য করণীয় হলো অলসতা পরিহার করে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। অলসতার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনেও নিন্দা এসেছে। আল্লাহতায়ালা অলসদের তীব্র নিন্দা এবং এই স্বভাবকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! নিজেদের অস্ত্র তুলে নাও এবং পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়ো। আর তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবশ্য বিলম্ব করবে এবং তোমাদের ওপর কোনো বিপদ উপস্থিত হলে বলবে, আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে আমি তাদের সঙ্গে যাইনি।’ সুরা নিসা : ৭১-৭২
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে মুনাফিকদের অলসতাকে তুলে ধরা হয়েছে। মূলত শয়তান চায় সর্বদা মুমিন বান্দার ইবাদতে আলস্য সৃষ্টি করতে। কারণ শয়তান মুমিনের ভালো কাজগুলো সহ্য করতে পারে না। তাইতো সে মানুষের দেহমনে অলসতা সৃষ্টি করে ভালো কাজ থেকে সরিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। হাদিসের ভাষায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, পরে অজু করলে আরও একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর নামাজ আদায় করলে আরও একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিলচিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। সহিহ বোখারি : ১১৪২
এ জন্য নবী কারিম (সা.) অলসতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। দোয়াটি হলো
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হামমি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।’ সুনানে আবু দাউদ : ১৫৫৫
অলসতার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যে ব্যক্তি অলসতার কোনো একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে সেটি তাকে এর নিচের স্তরে পৌঁছে দেবে। এভাবে সে প্রাণশক্তি থাকা সত্ত্বেও মৃত বলে গণ্য হবে। অলসতা মানুষকে এমন অবস্থায় পৌঁছে দেয় যে সে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও জোগাড় করতে পারে না। ফলে মানুষের কাছে হাত পেতে নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে।
ইসলামের শিক্ষা হলো, স্বাবলম্বী হয়ে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা। কর্মময় জীবনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে নবী করিম (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কোনো লোক সকালে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে তা পিঠে করে বহন করে এনে তা থেকে প্রাপ্ত উপার্জন থেকে সে দান-খয়রাত করল এবং লোকদের কাছে হাত পাতা থেকে বিরত থাকল। তার জন্য এটা অনেক উত্তম অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে। আর অন্য লোকের কাছে চাইলে সে তাকে দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। কেননা নিচের হাত থেকে ওপরের হাত (দান গ্রহণকারীর চেয়ে প্রদানকারী) উত্তম। নিজের প্রতিপাল্যদের কাছ থেকে (অর্থ ব্যয় ও দান-খয়রাত) শুরু কর। জামে তিরমিজি : ৬৮০
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.