এইচ এম মনিরুজ্জামান:
পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে নৈতিক ধারণার কথা বলা হয়েছে, মানুষের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা করা এমন একটি আচরণ, যা পবিত্র কোরআন এড়িয়ে চলার ওপর জোর দিয়েছে।
যে বিষয়গুলো সমাজের আস্থা নষ্ট করে এবং এর ফলে সমাজের ভিত্তি নষ্ট হয়, তার একটি হলো অন্যদের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা করা। এটা স্পষ্ট যে একজন ব্যক্তি তার মনের মতো আচরণ করে এবং তার আচরণ তার মনে যা ছিলÑ তার একটি চিহ্ন। অতএব, যে ব্যক্তি সর্বদা অন্যের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা করে, তাকে অন্যের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং অন্যের বিশ্বাস তার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়।
পবিত্র কোরআন মানুষের আবেগ এবং মেজাজ জানে, মানুষকে এই কাজ করতে নিষেধ করে; মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘মুমিনরা! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ Ñসুরা হুজুরাত : ১২
বর্ণিত আয়াতে মন্দ সন্দেহকে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একে পশ্চাদপসরণ করার পূর্ব সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে, কেন এই আয়াতে ‘অনেক সন্দেহ’ কথাটি দেওয়া হয়েছে? কারণ একে অন্যের প্রতি মানুষের সন্দেহের বেশিরভাগই খারাপ সন্দেহ।
অন্য আয়াতে, মহান আল্লাহ খারাপ চিন্তাধারার আরেকটি শাখাকে নির্দেশ করেছেন, যা সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি খারাপ চিন্তাভাবনা। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যাতে তিনি কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারী এবং অংশীবাদী পুরুষ ও অংশীবাদিনী নারীদের শাস্তি দেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে। তাদের জন্য মন্দ পরিণাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাদের অভিশপ্ত করেছেন। তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত মন্দ।’ সুরা ফাতাহ : ৬
উপরিক্ত চিন্তা ছাড়াও মানুষের মনে কখনো এমনসব অবাঞ্ছিত চিন্তা উদয় হয়, যা অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনো মানুষের মনে আল্লাহ সম্পর্কে প্রশ্ন-সংশয় আসে, কখনো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে, কখনো কোরআন মজিদ ও হাদিস শরিফ সম্পর্কে, কখনো-বা শরিয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে। এ সময় সঠিক নির্দেশনা না পেলে গোমরাহীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ না করতে ইসলাম পরামর্শ দিয়েছে।
ইসলামি স্কলাররা বলেন, এ সমস্যার সমাধান হলো ভ্রুক্ষেপহীনতা। মন্দ চিন্তা যদি আসে তবে আসুক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাই করবেন না যে, কী চিন্তা আসছে আর কী যাচ্ছে। এ বিষয়ে কোরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা মুমিনদের সান্ত্বনাবাণী শুনিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও।’ সুরা আরাফ : ২০০
অর্থাৎ শয়তানের পক্ষ থেকে যেসব মন্দভাবনা সৃষ্টি হয় এগুলো প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা। এভাবে সে মুমিনদের পেরেশানিতে ফেলতে চায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। এজন্য এসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করে, তখন আপনি নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। যেমন এখন আপনার নামাজের সময়, আপনার মনে যে ভাবনাই আসুক আপনি নামাজে মশগুল হয়ে যান। আপনার এখন কোরআন তিলাওয়াতের সময়, মনে যত চিন্তাই আসুক, আপনি তিলাওয়াতে মশগুল হয়ে যান। এভাবে অন্য কোনো কাজের সময় হয়ে থাকলে তাতে লেগে যান। এটাই সমাধান। তা না করে আপনি যদি চিন্তা দূর করার চিন্তায় পড়ে যান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.