ধর্ম ডেস্ক:
মানবচরিত্রে ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। এই গুণ যাদের মধ্যে রয়েছে তারা মহৎ মানুষ। পবিত্র কোরআনে মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করাকে মুত্তাকিদের অন্যতম গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তা (এমন জান্নাত) মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুখে-দুঃখে (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করে আর যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ এরূপ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৪)।
প্রতিশোধ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি : ‘আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করো, তবে ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের কষ্ট দেওয়া হয়। যদি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য উত্তম।’ (সুরা আন নাহল : ১২৬)।
বর্ণিত আয়াতের প্রথমাংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে, কারও আঘাতের মোকাবিলায় তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা জায়েজ; তবে এর সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, ‘ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের কষ্ট দেওয়া হয়।’ অর্থাৎ কারও আঘাতের মোকাবিলায় কথার আঘাত হোক বা শারীরিক আঘাত পাল্টা যে আঘাতটা করা হবে তার মাত্রা প্রথম আঘাতের তুলনায় একটুও বেশি হতে পারবে না।
বলাবাহুল্য যে, এটি এমন এক শর্ত, যা রক্ষা করা নিতান্তই কঠিন। কারণ পাল্টা আঘাতটা সবসময় একটু বেশি মাত্রারই হয়ে থাকে। তাছাড়া রাগের মাথায় এত হিসাব করে কেউ প্রতিক্রিয়া করতে পারে না। বোঝা গেল, শরিয়ত প্রতিশোধ গ্রহণ করাকে যদিও জায়েজ বলেছে; কিন্তু সেটা আদৌ তার চাওয়া বা কাম্য বিষয় নয় অর্থাৎ শরিয়ত মানুষকে ক্ষমার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে আর প্রতিশোধ গ্রহণ করা থেকে নিরুৎসাহিত করেছে। আয়াতের শেষাংশ, ‘যদি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য উত্তম’ থেকে এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। অতএব নিজের হক থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষমা প্রদর্শন করাই ইসলামের শিক্ষা।
ক্ষমা দ্বারা মর্যাদা বাড়ে : যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করবেন, তখন নিজের ভেতরে অপার্থিব একটা প্রশান্তি অনুভব করবেন, সেই সঙ্গে সমাজের মানুষের কাছেও আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম : ২৫৮৮)
নবীজির ক্ষমাশীলতা : আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-কে খেতাব করে বলেছেন, ‘তুমি ক্ষমা অবলম্বন করো, ন্যয়ের আদেশ দাও এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চলো।’ (সুরা আরাফ : ১৯৯)
বাস্তবজীবনে নবী কারিম (সা.) ছিলেন দয়া-মায়া ও ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। তার জীবন ছিল ক্ষমা-উদারতায় ভরপুর। প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ পেয়েও তিনি ক্ষমা ও দয়ার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন জীবনভর। ইসলামের শত্রুদের ক্ষমার অযোগ্য অনেক অপরাধকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন পরম উদারতায়।
ক্ষমার প্রভাবে শত্রু বন্ধু হয়ে যায় : ক্ষমা এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যা ঘোরতর শত্রুকেও আপন বানিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দিয়ে; ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা হামিম আস-সেজদাহ : ৩৪)
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.