ভয়েস প্রতিবেদক:
ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কক্সবাজারের কাস্টম কর্মকর্তা শাহাজালাল ও তার স্ত্রী-সন্তান সহ নিহত হওয়ায় কক্সবাজারে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর থেকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেমের বাড়িটি একে বারে নীরব। আত্নীয় স্বজন ও গ্রামের পাশ্ববর্তী মানুষের কিছু আনাগোনা রয়েছে। বাড়ির একটু দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের পাশের কবর স্থানে তৈরি করা হচ্ছে ৩ টি কবর। যেখানে শানিত করা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে।
রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিনফ কোজি কটেজ’ ভবনে লাগা আগুনে মারা মারা যাওয়া উখিয়ার উক্ত গ্রামের বাসিন্দা কাস্টমস ইন্সপেক্টর শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলা (৪)।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ ৩ টি গ্রহণ করেছেন নিহত শাহ জালাল উদ্দিনের বড় ভাই শাহজাহান সাজু।
শাহজাহান সাজু হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানিয়েছেন, মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
সন্তান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা পিতা। তিনি কথা বলতেও পারছেন না। নিহতের মামাত ভাই স্কুল শিক্ষক জালাল উদ্দিন জানান, ৫ ভাই এক বোনের মধ্যে শাহ জালাল উদ্দিন তৃতীয়। তিনি ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকুরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে নারায়নগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত তিনি। প্রতিদিন পিতার সাথে ৩-৪ বার ফোনে কথা বলেন। বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসা ওষুধ সেবনের জন্য তাড়া দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর পিতার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন শাহ জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘শাহ জালাল উদ্দিন পিতাকে জানিয়ে ছিলেন, টানা ৩ দিনের ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে খাগড়াছড়ি ভ্রমনে যাচ্ছেন। ঢাকায় শ্যালিকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শাশুড়-শাশুড়ি এসেছেন। তাদের সাথে দেখা করেই বাসে উঠে যাত্রা দেবেন।’
এরপর থেকে আর কোন ফোন পাননি পিতা। পিতা ধারণা করেছিলেন ছেলে, বউ, নাতিনীকে নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছেন। কথাগুলো বলেন, শাহ জালাল উদ্দিনের ছোট্ট ভাই হাশেম বিন লিনকন।
তিনি বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসের ভাইয়ের এক সহকর্মী ফোন করে জানান ফেসবুকে অজ্ঞাত পরিচয়ে যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে যেখানে ভাবী ও মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের বিষয়টি জানেন না। তারপর থেকে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ভাবীর বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন হেলালী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপর প্রশাসনিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করতে আইনগত বিষয় থাকায় রাতে ভাই (সাজু) ঢাকা পৌঁছে মরদেহ গ্রহণ করেছেন। গাড়ি যোগে রওয়ানা হয়েছেন।
একমাত্র বোন তসলিমা আকতার বলেন, ভাইদের মধ্যে অনেকটা পিতার ভুমিকা পালন করতেন শাহজালাল। প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ খবর নিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ফোন করে কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। এখন ভাই নেই....
মামাত ভাই স্কুল শিক্ষক জালাল উদ্দিন জানান, আগামীকাল ৩মার্চ উখিয়ার মরিচ্যা জামে মসজিদ সংলগ্ন কবর স্থানে তাদের দাফন করা হবে।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.