ভয়েস প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের উপকুলীয় এলাকা দিয়ে চোরাইপথে মিয়ানমারে জ্বালানি তেল পাচার করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন চোরাইপথ ও নানান কারসাজিতে মাছধরার ট্রলারে করে ড্রাম ভর্তি হাজার হাজার লিটার অকটেন দীর্ঘদিন ধরে পাচার হয়ে আসছে। চোরাই পথে মিয়ানমার সীমান্তে এই অকটেন পৌঁছাতে পারলেই ক্রয় মূল্যে চাইতে ৩-৫ গুণ মূল্যে বেশি পাওয়া যায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
গত ২৩ মার্চ চোরাই পথে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্য মজুদ করে রাখা বিপুল পরিমাণ অকটেন তেল উখিয়া ভূমি কর্মকর্তার নেতৃত্বে জব্দ করে উখিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। চোরাইপথে তেল পাচারকারী চক্রের মূল হোতা ও এনজিওকর্মী উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন ওরফে পেটুয়া হোসেনের ছেলে ছাবের আহাম্মদ তার ভাড়া বাসায় গুদামজাত করে রেখেছিল জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ এই অকটেন তেল গুলো। এসময় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাবের আহমদ সহ চারজনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উখিয়ার সহকারি ভুমি কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। এসময় পুলিশ আসার খবর পেয়ে শাটার নামিয়ে দিয়ে জড়িত সবাই পালিয়ে যায়। গুদামঘরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ২৭(সাতাশ) টি নীল রংয়ের প্লাষ্টিকের কন্টেইনার। প্রতিটিতে ৪০ লিটার করে ১০৮০ লিটার অকটেন রয়েছে। যার তেলের বাজার মূল্য এক লক্ষ চল্লিশ হাজার চারশত টাকা। আভিযানিক দলে থাকা এসআই শাহজাহান জব্দকৃত তেল গুলোর (একাধিক সাক্ষীর সম্মুখে) জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে তার হেফাজতে থানায় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, চক্রের মূল হোতা ছাবের আহাম্মদ একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলের সক্রিয় সদস্য। উখিয়ার উত্তর সোনারপাড়া এলাকার মোঃ হোসেন প্রকাশ পেটুয়া হোসেনের ছেলে ছাবের আহাম্মদ, ফয়সাল, পিতা মৃত সৈয়দ আলম, উত্তর সোনারপাড়া, মোহাম্মদ আলম পিতা-নুরুল আলম, পূর্ব সোনারপাড়া, উত্তর সোনারপাড়া ৩নং ওয়ার্ড, ১নং জালিয়াপালং এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে কাশেমসহ আরো একাধিক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারী শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে জ্বালানী তেল পেট্রোল/অকটেন/ডিজেল ইত্যাদি অবৈধভাবে সংগ্রহ করে অধিক লাভের আশায় চোরাচালানের মাধ্যমে সাগরপথে মিয়ানমারে পাচার করে আসছে।
সূত্র মতে, চলিত বছরে টেকনাফ-মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ও কক্সবাজারের নাজিরার টেক, চৌফলদন্ডী ব্রিজ ঘাট এলাকা থেকে ফিশিং ট্রলারে করে সাগর পথে বেড়েছে তেল পাচার। একই সাথে বেড়েছে মানব পাচারের মতো ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, এনজিও চাকরির আড়ালে ছাবের আহম্মদ তেল পাচারসহ আরো অসংখ্য অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে। তার সাথে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের সাথে সু সম্পর্ক থাকায় কেউই মুখ খুলতে নারাজ। উখিয়া থানা পুলিশ গত কিছুদিন আগে তার ভাড়াবাসা থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা তেল উদ্ধার করলেও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। যে কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি এলাকাবাসীর।
উখিয়ায় তেল পাচার ও মানব পাচারে শক্তিশালী সিন্ডিকেটে কাজ করছে চিহ্নিত একটি চক্র। এদের মাঝে এনজিও কর্মী ছাবের অন্যতম। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে। তারা একেকজন একেক দেশে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি কোস্ট ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও থেকে ছাবের আহমদকে বহিস্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উখিয়াতে ডজন খানেক মানব পাচারকারী দলের সদস্য সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালয়েশিয়াগামী যুবক-যুবতী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে রাখেন। পরে সুযোগ বুঝে দালাল চক্রের সদস্যরা ফিশিং ট্রলারে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে লোকজন। ইতিপূর্বে কয়েকটি চালান সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে। একই সাথে দেশের সম্পদ তেল পাচার করছে এই চোরাকারবারিরা।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শামীম হোসেন জানান, উক্ত তেল জব্দ করার ঘটনায় ছাবের সহ চারজনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। উক্ত মামলার আসামি সহ উপকুল এলাকায় জ্বালানী তেল পাচারকারীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.