ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ চাকরিতে থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে নিজে ও তার পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট, কোম্পানির শেয়ার ও ব্যাংক হিসাবে অর্থসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে তার বেশকিছু সম্পদের ওপর ‘ক্রোক’ ও ‘ফ্রিজের’ নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এর ধারবাহিকতায় বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান জোরদার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু বিচার বা অনুসন্ধান শুরুর আগেই তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করায় দেখা দিয়েছে নতুন এক শঙ্কা। তবে আইনজীবীরা জানান, বেনজীর আহমেদ যেখানেই থাকুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা বিচার চলতে কোনও বাধা থাকছে না।
দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২১ এপ্রিল দুদকে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অভিযোগ করা হয়, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। তিনি ৩০তম পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেছেন এবং ৩৪ বছর ৭ মাস পর অবসরে গেছেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন, যা তার বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসম।
অভিযোগটি পাওয়ার পর দুদক গত ২২ এপ্রিল থেকে বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র দাবি করছে, অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত বা বিচার শুরুর আগেই বেনজীর আহমেদ নগদ অর্থসহ দেশ ছেড়েছেন। তাই বেনজীর আহমেদকে বিচারের মুখোমুখি করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে দুদকের প্যানেল আইনজীবী মো. আসিফ হাসান বলেন, পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়ায় বিচার হয়ে থাকে, তার ক্ষেত্রেও সেভাবে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সেক্ষেত্রে দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালিত হবে বা মামলা হওয়ার পর তদন্ত হতে থাকবে। তদন্ত হওয়ার পর প্রতিবেদন আসবে এবং এর রিপোর্ট যদি তার বিপক্ষে আসে, তাহলে মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়া হবে। তিনি তখনও হাজির না হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরপরও তিনি আদালতে হাজির না হলে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচার শেষে রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে আইন অনুসারে তাকে আদালতে হাজির হতে হবে। দুদক আইন বা ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলেও জানান এই আইনজীবী।
দুদকে আসা অভিযোগের ধারাবাহিকতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ জুন এবং আগামী ৯ জুন তার পরিবারের সদস্যদের দুদকে ডাকা হয়েছে।
এখনি ‘চূড়ান্ত মন্তব্য’ না করে অনুসন্ধানের জন্য আগামী ৬ ও ৯ জুন ‘অপেক্ষা’র কথা জানালেন দুদকের প্রধান কৌশলী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুদকের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বেনজীরের বিরুদ্ধে আসার পরে জব্দের আদেশ পাওয়া গেছে। দুই দফায় সম্পদ জব্দের আদেশ হয়েছে, গত ২৬ ও ২৯ মে। এখন পর্যালোচনার বিষয় যে, তার বিদেশ যাত্রা রোধ করা যাবে কিনা। এরইমধ্যে তো আমরা গণমাধ্যমে শুনেছি, কেউ বলছে গত ১২ মে, কেউ বলছে গত ৪ মে, কেউ বলছে আরও আগে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কাজেই বিষয়টির জন্য আমাদের আগামী ৬ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
বেনজীর পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানী কার্যক্রম গুরুত্ব এবং দ্রুততার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর একটা অ্যাসেসমেন্ট চলছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কোনও অ্যাকাউন্ট আছে কিনা, সেখানেও কোনও টাকা গেছে কিনা এবং যে টাকাগুলো উনার অ্যাকাউন্ট জব্দের সময় পাওয়া গেছে, আসলেই তার আগে কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়েছেন কিনা, উঠিয়ে থাকলে সেই টাকা কোথায় গেছে, ক্যাশ নিয়ে গেছেন, না অন্য ব্যাংকে গিয়েছে?—এসব বিষয়গুলো এখন গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়ে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহের জন্য জানানো হয়েছে। সেই বিষয়টির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। অর্থাৎ যে অনুসন্ধান (দুদকের) চলছে, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত গতিতেই চলছে। অনুসন্ধান শেষ হলে পুরো চিত্রটি পাওয়া যাবে।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে সম্প্রতি দুই পর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্টের পাশে আরও ৮০০ বিঘা জমি কিনেছে তার পরিবার। এ ছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলের ২ লাখ শেয়ারও রয়েছে তাদের। ঢাকার বসুন্ধরায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটও রয়েছে বেনজীরের পরিবারের। এসব সম্পত্তি অবৈধ টাকায় কেনা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সেসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ২০ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন বেনজীর আহমেদ। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, তার পরিবারের যে সম্পদ রয়েছে, তা বৈধ এবং এর হিসাব ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ রয়েছে। অবৈধ যেসব সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, তা কেউ প্রমাণ করতে পারলে ওই ব্যক্তি বা গ্রুপকে সেই সম্পত্তি তিনি বিনা পয়সায় লিখে দেবেন বলেও ভিডিওতে দাবি করেন।
ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.