ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন নিয়ে অস্বস্তিতে আছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের ভেতর বিরূপ আলোচনা তৈরি হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এ দুটি আন্দোলন অনেকটা নিজেদের ডেকে আনার মতোই ঘটনা। দুটি ইস্যুতেই সরকারের আরও কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল। ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা, সুবিধা-অসুবিধা বোঝানোর পথ অনুসরণ করা যেত।
গত ১ জুলাই থেকে যারা সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন তাদের জন্য সরকার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয় স্কিম’ চালু করেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া শিক্ষকরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ স্কিমটি প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। গত ১ জুলাই থেকে তারা আন্দোলনে রয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা শুরু করেছেন কোটা আন্দোলন। ২০১৮ সালে বাতিল করা কোটাব্যবস্থার মুক্তিযোদ্ধা অংশের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরিপত্র বাতিল করায় মুক্তিযোদ্ধার কোটার ৩০ শতাংশ আবার বহাল হয়েছে। তাই ব্যবস্থাটি সংস্কার করে কোটা আরও কমিয়ে আনার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাহী আদেশে কোটা বাতিল ব্যবস্থা করেছেন। সেটা নিয়ে আদালতে যাওয়ার পথ কেন তৈরি হলো তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব তাদের।
দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্মিলিতভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতেন। তারা বলেন, এ দুটি বিষয়ে মূলে গিয়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে ঘোষণা এলে আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকত না বলে তারা মনে করেন। তারা বলেন, এখন ঢাকা ছাড়িয়ে বাইরের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করেছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদের অন্তত ১৫ নেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বলেছেন। তারা দাবি করেন, ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন জ্বলে ওঠার রসদ জুগিয়েছে সরকার, এটিই দলের ভেতর অস্বস্তির কারণ। সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক চর্চা না থাকায় নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হয় সরকারকে।
তারা আরও বলেন, অগোছালো কিছু সিদ্ধান্ত ছাত্র ও শিক্ষকদের রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিয়েছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বয়সসীমা নিয়ে আন্দোলন চলে আসছিল। এরই মধ্যে কোটা নিয়ে আন্দোলন শুরু করার ইস্যু তুলে দেওয়া হয়েছে ছাত্রদের। পেনশন ও কোটা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে না হলে ছোট ছোট পরিসরে আলোচনা করা ও জনমত সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া যেত।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোটা আন্দোলনটা হলো আদালতের বিচারাধীন ব্যাপার। এখানে আদালতের ওপর সরকারের প্রভাব বিস্তার করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘সরকারকে আলাদা করে বা অন্যান্য রাজনীতিবিদের ওপর দোষ চাপানোর কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন নিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শিক্ষকরা সম্মানীয়। আমরা তাদের সম্মান করেই কথা বলব নতুন পেনশন নীতি জাতীয়ভাবে করা হয়েছে। এটা তো শিক্ষকদের অসম্মানের উদ্দেশ্যে করা হয়নি। সরকারের একটা ভালো উদ্যোগ জাতীয় পেনশন নীতি। সরকার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই হয়তো কাজটা শুরু করেছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধিতা যারা করার তারা করছেন।’
অনেকেই অনেকভাবে বিরোধিতা করছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার, গুজব অনেক কিছুই আছে। তারপরও যদি শিক্ষকদের কোনো বিষয় থাকে, সেটা নিয়ে আলাপ করার সুযোগ তো শেষ হয়ে যায়নি।’
গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র বলছে, দলীয় সরকার দেশ চালালেও আওয়ামী লীগ নীরব দর্শক হয়ে আন্দোলন দেখছে। ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে বসা, আলোচনা করা ও তাদের বোঝানোর কোনো উদ্যোগে সম্পৃক্ত নেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানে বিচক্ষণ, উপযুক্ত ছাত্রনেতার অভাব রয়েছে। তিনি এটাও মনে করেন, প্রশাসন সুকৌশলে সরকারকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টারও ফল এসব আন্দোলন।
দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একটি অংশ দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেন, দুটি আন্দোলনই বেশ জ¦লে উঠেছে।
রাজনৈতিক পদক্ষেপ না থাকার কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কোনো কাজ নেই, বলার মতো কোনো বক্তব্যও নেই।’ তবে মায়া বলেন, আন্দোলন সবার ভেতরে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে। রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেই কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কী করার আছে।’
এ আন্দোলনের সুযোগ সরকারই করে দিয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। নাম প্রকাশ না করে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই অবাক হয়েছেন এ আন্দোলনে।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক চর্চা না থাকা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় নানা সংকট বিরাজ করছে, এটি তার একটি খণ্ড চিত্র।’
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংকট সমাধানে খামখেয়ালিপনা রয়েছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতার দাবি, অনেক সংকট সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলন চলছে, কিন্তু এ নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় বৈঠক আহ্বান করেনি। দলীয় ফোরামে বসে কীভাবে আন্দোলন সামাল দেওয়া যায় সে ব্যাপারে কোনো মতামত, কৌশল গ্রহণের চিন্তাও নেই। তিনি বলেন, ‘দল কেন? দলের কাজ কী? কিছুই জানি না।’
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পদক্ষেপ না থাকার ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘ইউএনও, এসিল্যান্ড এসব সরকারি কর্মকর্তা আছেন তো! তারা এখন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, কোটা আদালতের বিষয়, এখানে সরকার ও আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে বসা, তাদের কথা শোনা ও আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।
ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.