মীযান মুহাম্মদ হাসান:
বয়সে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান শিক্ষা। তিনি সারা জীবনে এই শিক্ষা সমাজে বাস্তবায়ন করেছেন। অতীতের তুলনায় বর্তমান সময়ে আমাদের মুসলিম সমাজে যা অনেকটা ভাটা পড়ে যাচ্ছে। আমাদের এ দিকে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষাকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আমরা এই বিষয়ে উন্নতি করতে পারব।
ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষার প্রচলন আদিকাল থেকে সমাজে প্রচলিত আছে। আমরা যদি অতীতে ফিরে যাই, প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হওয়ার আগে এমন শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র দেখতে পাব, যা আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা-ভক্তি ও নম্র-ভদ্রতা বজায় রাখতে শেখায়। অর্থাৎ উস্তাদ বা গুরুর তত্ত্বাবধানে ছাত্র-শিষ্যের ঘরোয়া পদ্ধতির শিক্ষা-দীক্ষার প্রচলনটা চোখে পড়বে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিও কিন্তু তাই বলে। বাদশাহ আলমগীর ও তার পুত্রকে নিয়ে রচিত প্রসিদ্ধ কবিতাটিও আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয়। বরং এর সঙ্গে ওস্তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। তার সেবা-যতœ করাও একজন ছাত্রের দায়িত্ব।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা হজরত খিজির এবং হজরত মুসা (আ.)-এর ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। ওস্তাদের সঙ্গে শিষ্যের আচরণ কেমন হবে, সেই আদব-কায়দা উঠে এসেছে আয়াতে। ‘হজরত মুসা (আ.) তাকে (খিজির) বললেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন, এ শর্তে আমি কী আপনার অনুসরণ করব? তিনি (খিজির) বললেন, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবেন না! আর যে বিষয় আপনার জানা নেই, সে বিষয়ে কীভাবে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন? (সুরা কাহাফ ৬৬-৬৮)
ঠিক এভাবেই হজরত মুসা (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা শিক্ষা দান করেছেন অজানা বিষয়ের জ্ঞান সম্পর্কে। এখান থেকে সূক্ষ্ম একটি বিষয় উঠে এসেছে যে, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের আচরণ কেমন হবে? ছাত্র হিসেবে চূড়ান্ত ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আর কোনো শিক্ষকের সব কাজই হয়তো বা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভালো ও কল্যাণকর মনে হবে না। এটাই স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যেও যে কল্যাণ ও রহস্য লুকিয়ে আছে তা হজরত মুসা ও খিজির (আ.)-এর এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। এজন্য শিক্ষক, বয়সে বড়, মুরব্বি এবং এ জাতীয় লোকজন সম্মানিত। তাদের সম্মান দিয়ে কথা বলা, আদবের সঙ্গে কথা বলা, আগে সালাম দেওয়া এবং বাবার বয়সী বা বৃদ্ধ লোককে শ্রদ্ধা করা জরুরি। এগুলো পারিবারিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত বিষয়ও বটে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। হাদিসে এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলমানকে সম্মান করা, কোরআনের ধারক-বাহক (তথা হাফেজ-আলেমদের) সম্মান করা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ৪৮৪৩)
আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বেয়াদবি ও বড়দের প্রতি অশ্রদ্ধা ইত্যাদির ভয়াবহ অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এখন। এমনকি শিক্ষক ও মা-বাবার প্রতি তরুণ প্রজন্মের অভক্তি, অশ্রদ্ধা ও অসম্মান বেড়ে চলছে। তাদের ভুল খুঁজে বের করা, দোষ ধরা এবং কোনো কাজের অহেতুক সন্দেহ ও সমালোচনা করা ইত্যাদি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। ছেলে-মেয়ের আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষার অভাব পূরণ করতে হবে। তাদের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন বড়দের সম্মান রক্ষা করেন এবং মুরব্বিদের সঙ্গে আন্তরিকতা পূর্ণ ব্যবহার করেন, এসব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.