আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কেনা পাঁচ হাজার পেজারের (যোগাযোগের ডিভাইস) ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। গতকাল মঙ্গলবার লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার মাস কয়েক আগেই এ কাজ করে তারা। লেবাননের একটি জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র এবং অন্য একটি সূত্র রয়টার্সকে এসব কথা বলেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে লেবাননে হিজবুল্লাহর ব্যবহার করা কয়েক হাজার পেজারে বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল। এতে ৯ জন নিহত এবং আরো ৩ হাজার জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাদের যোদ্ধারা অন্যান্য দিনের মতো আজও গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। লেবাননে গতকালকের গণহত্যার ঘটনায় আলাদাভাবে কঠোর প্রতিশোধ নেবে।’
তবে এই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, পেজারগুলো তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির। এই কোম্পানি থেকে পাঁচ হাজার পেজার কিনেছিল হিজবুল্লাহ।
কয়েকটি সূত্র বলেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে পেজারের চালানটি লেবাননে পৌঁছায়।
তবে গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হসু চিং-কুয়াং বলেছেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজে ব্যবহৃত পেজারগুলো তার কোম্পানি উৎপাদন করেনি। এগুলো তৈরি করেছে ইউরোপীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এটির তাইপেভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলোর ব্র্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি ছিল।
তবে ইউরোপীয় কোম্পানিটির নাম তাৎক্ষণিকভাবে উল্লেখ করেননি কুয়াং। আজ বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পণ্যটি (পেজার) আমাদের নয়। সেখানে (পণ্য) আমাদের ব্র্যান্ডের নামটি বসানো হয়েছে শুধু।’
লেবাননের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র পেজারের এপি ৯২৪ মডেল একটি ছবিতে শনাক্ত করেছে। এটি দেখতে অন্য পেজারের মতোই। তারহীন এই যন্ত্রে বার্তা আসে, তা দেখা যায়; কিন্তু এই যন্ত্রের মাধ্যমে ফোন করা যায় না।
ইসরায়েলি লোকেশন ট্র্যাকিং এড়াতে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যোগাযোগের একটি কম প্রযুক্তির মাধ্যম হিসেবে পেজার ব্যবহার করে থাকেন। হিজবুল্লাহর কার্যক্রম সম্পর্কে জানা আছে-এমন দুটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে লেবাননের জ্যেষ্ঠ সূত্র বলেছে, উৎপাদন পর্যায়েই পেজারগুলোয় পরিবর্তন (মডিফাই) এনেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
সূত্রটি বলেছে, ‘মোসাদ পেজারের ভেতরে একটি বোর্ড ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এই বোর্ডে বিস্ফোরক উপাদান ছিল। এর একটি সাংকেতিক ভাষা গ্রহণের ক্ষমতা ছিল। যেকোনোভাবেই হোক, এটি শনাক্ত করা খুব কঠিন। এমনকি কোনো যন্ত্র বা স্ক্যানার দিয়েও শনাক্ত করা যায় না।’
সূত্রটি জানিয়েছে, মঙ্গলবার তিন হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়েছিল। সেগুলোতে সাংকেতিক বার্তা পাঠিয়ে বিস্ফোরকগুলো সক্রিয় করা হয়েছিল।
অন্য একটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, নতুন পেজারগুলোতে তিন গ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। কয়েক মাসেও হিজবুল্লাহ তা শনাক্ত করতে পারেনি।
লেবাননে হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় হাসপাতালে আহতদের ভিড়ে চিকিৎসকরা প্রচণ্ড চাপে আছেন। বিস্ফোরণে আহতদের বেশিরভাগেরই কোমর, মুখ, চোখ এবং হাতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে, অনেকে হাত হারিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে অন্তত ২০০ জনের অবস্থা গুরুতর।
হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ মিত্র হামাসের মধ্যে গাজা সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে বিস্ফোরণটি ছিল হিজবুল্লাহর ‘সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা লঙ্ঘন’।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সরকারের সাবেক ডেপুটি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অফিসার জোনাথন প্যানিকফ বলেছেন, ‘এটি কয়েক দশকের মধ্যে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থতা।’
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.