শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

‘মব জাস্টিস’ বন্ধ করতেই হবে

পিটিয়ে হত্যা, ফাইল ছবি

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঞা:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মোহাম্মদ মামুন নামের তিন যুবককে গত বুধবার একই দিনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তোফাজ্জলকে মোবাইল চুরির অপবাদে ঢাবি’র ফজলুল হক মুসলিম হলের কিছু শিক্ষার্থী, শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অপরাধে জাবি’র কতিপয় শিক্ষার্থী ও মোহাম্মদ মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে উত্তেজিত জনতা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এসব হত্যাকাণ্ডের খবর ও ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর উত্তেজিত ছাত্র-জনতার আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শত শত ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয় সরকারীভাবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান বারবার ‘মব জাস্টিস’ বন্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কার্যত কোথাও তা বন্ধ হয়নি। কেউ কথা শোনেনি। এর দুটো কারণ আছে— প্রথমত এটিকে ‘মব জাস্টিস’ বলা ও দ্বিতীয়ত একটি ঘটনাও আইনের আওতায় না আসা।

প্রথমটি নিয়ে বলি, ইংরেজি শব্দ ‘মব’ এর বাংলা অর্থ হলো দুষ্কৃতি বা হামলার উদ্দেশ্যে সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতা, উত্তেজিত জনতা, গুন্ডাদল। অন্যদিকে ‘জাস্টিস’ শব্দের অর্থ হলো— ন্যায়সঙ্গত আচরণ বা ব্যবহার; ন্যায়পরায়ণতা; ন্যায়বিচার; অথবা আইন-ব্যবস্থায় যার মাধ্যমে মানুষের বিচার করা হয় এবং শাস্তি দেয়া হয়; উচ্চ আদালতের বিচারক। সংগত কারণেই ‘মব’ এর সাথে ‘জাস্টিস’ যায় না। মব কোন কারণেই জাস্টিস হতে বা করতে পারে না। সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিংবা অন্য কোন অপরাধকে ‘মব জাস্টিস’ বলায় মবরা আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেছে। তারা ভাবছে, ‘আমরা যা করছি তা ন্যায়বিচার হচ্ছে’। এটাকে কেউ অবৈধ ভাবছে না। ফলে দিনে দিনে ‘মব জাস্টিস’ এর নামে সংঘবদ্ধ অপরাধ বেড়েই চলেছে। এটিকে বলা যেতে পারত ‘মব জাজমেন্ট’, ‘সংঘবদ্ধ উত্তেজিত জনতার বিচার’, যাকে বৈধ ভাবার কোন সুযোগ থাকে না।

দ্বিতীয়টি হলো, বুধবারের ঘটনার আগ পর্যন্ত উত্তেজিত ছাত্র-জনতার দ্বারা দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া হাজারো অপরাধের কোন মামলা না হওয়া; একটি ঘটনাও বিচারের আওতায় না আসা।

৫ আগস্টের পরে সবচেয়ে বেশি ‘মব জাজমেন্ট’ এর ঘটনা ঘটেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেশের প্রায় সব যায়গায় ভিসি, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও অনেক সাধারণ শিক্ষক ‘মব জাজমেন্ট’ এর শিকার হয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা অপমান অপদস্থ করে, হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিক্ষকের নিকট থেকে জোরপূর্বক অব্যাহতিপত্র আদায় করে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়। বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা ছাড়া সরকার এইসব বন্ধে কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। জোরপূর্বক আদায় করা এইসব অব্যাহতিপত্রের ভবিষ্যৎ কী, যারা অনিচ্ছায় অব্যাহতি দিয়েছে তাদের চাকরি থাকবে কি না এইসব বিষয়ে সরকার থেকে কোন কিছুই বলা হয়নি। ফলে মবরা ধরেই নিয়েছে, কোনক্রমে কাউকে অব্যাহতিপত্র রেখে অফিস থেকে বের করে দিতে পারলেই হল। ফলে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই অপরাধ ঘটেই চলেছে।

দেশে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, বিচারবিভাগ কাজ করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে, তাছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। তারপরও কেনো ‘মব জাজমেন্ট’ চলবে? এই প্রশ্ন এখন সবার।

লেখক: শিক্ষক ও লেখক

ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশরূপান্তর অনলাইন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION