মুফতি আহমাদ মুস্তাকীম:
ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিশেষ গুরুত্ব অনেক। ইসলাম সব মানুষকে সমান মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছে, যা বিশেষভাবে সংখ্যালঘুদের অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার এবং সমতার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হলো।
সংখ্যালঘুদের অধিকার : ইসলাম ধর্মে সংখ্যালঘুদের প্রতি ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমরা নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লাভ করে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে যারা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের বাসস্থান থেকে বের করেনি। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা ৮)
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা সেসব অমুসলিমদের সঙ্গে সদাচরণ করতে পিছিয়ে না থাকে, যারা তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা বা যুদ্ধে লিপ্ত নয়। এটি ইসলামের উদারতা ও সহনশীলতার নির্দেশ দেয়। হজরত রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (সহিহ বুখারি) এই হাদিসে স্পষ্টভাবে জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেশীর অধিকার : ইসলামে প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক নির্দেশনা। প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগ বেশি হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না। পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী ও সাথীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সুরা নিসা ৩৬) এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করার জন্য, যা ইসলামের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এতই উপদেশ দিয়েছেন যে, আমি মনে করেছিলাম প্রতিবেশীও উত্তরাধিকারী হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি ৬০১৫) এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি এর মাধ্যমে একে পারিবারিক অধিকার বলেও মনে করা হয়েছে।
সমতা : ইসলাম সব মানবজাতির মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ নির্বিশেষে সবাইকে সমান মর্যাদা প্রদান করে। একজনের ওপর আরেকজনের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করা হয় শুধুমাত্র তাকওয়া বা আল্লাহভীতি দিয়ে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাবান যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা হুজুরাত ১৩) এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, জাতি-বর্ণের পার্থক্য মানবজগতের একটি বৈচিত্র্য, যা পরিচয়ের জন্য। এতে কোনো মর্যাদাগত ভেদাভেদ নেই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের রব একজন, আর তোমাদের পিতা একজন। আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং অনারবের ওপর আরবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তবে কেবল তাকওয়ার মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠত্ব হতে পারে।’ (মুসনাদ আহমাদ ২৩৪৮৯) এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের মধ্যে সমতার ঘোষণা করেছেন, যা ইসলামের মর্মবাণী। ইসলাম হিংসা-বিদ্বেষ সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি আলোকিত সমাজের শিক্ষা দিয়ে থাকে। মোটকথা, ইসলাম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার, প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ ও সমতার মতো মূলনীতির মাধ্যমে এ বিষয়গুলোকে শক্তিশালী করেছে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.