আবদুল আজিজ:
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দেখা মিলেছে ভয়ংকর দানব। দেখতে ভয়ংকর হলেও ভয়ের কিছুই নেই। কারণ, এটি মানুষের প্লাষ্টিক বর্জ্যরে তৈরী দানব। পরিবেশ বিধ্বংসের প্লাষ্টিক দূষণের বার্তা দিতে এই দানব তৈরী করেছে বিদ্যানন্দন ফাউন্ডেশন। যা দেখে মানুষের মাঝে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে তৈরী করা হয়েছে এই প্লাষ্টিক দানব। যা আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদ্বোধন করা হয়।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে তৈরী করা বিশ্বে সর্ববৃহৎ প্লাস্টিকের রোবট দানবটি রক্ত-মাংসহীন হলেও দানবটির হিং¯্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। আর সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ দূর থেকে প্রথম দর্শনে ভয় পেলেও কাছে যেতেই কেটে যাবে সেই ভয়। এটি আসলে ভাস্কর্য, যা তৈরি করা হয়েছে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সৈকত উপকূল থেকে সংগৃহিত ১০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। আয়োজকরা বলছেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সচেতন করার পাশাপাশি সমুদ্রের দূষণ প্রতিরোধে তাদের এই কার্যক্রম।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নামতেই চোখে পড়ছে বিশাল আকৃতির আকাশছোঁয়া দানবের। যার উচ্চতা ৬২ ফুট। এবার দানবটি এসেছে ভয়ংকর মূতিরূপ ধারণ করে, তার সঙ্গে বিস্তৃত বালিয়াড়ির সৈকতে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরও দুটি ছোট আকৃতির দানব। যাদের উচ্চতাও ১৫ ফুট। এগুলো আসলে রক্ত-মাংস ও প্রাণহীন ভাস্কর্য, যা তৈরি করা হয়েছে সৈকত উপকূল থেকে সংগ্রহ করা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। ব্যবহৃত হয়েছে ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক।
কক্সবাজার সমিতিপাড়ার বাসিন্দা রাবেয়া বেগম, ফাতেমা ও রমিজ উদ্দিন জানান, ‘ খাদ্যের বিনিময়ে সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাষ্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করছেন এই প্রতিষ্ঠানটি। একারণে, প্রতিদিন আমরা প্লাষ্টিকের বর্জ্যরে বদলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করছি। বর্জ্যরে বদলে এসব পণ্য পেয়ে খুশি এখানকার সাধারণ মানুষ।’
প্লাষ্টিকের তৈরী ভয়ংকর দানবটি উম্মুক্ত করার পর থেকে এটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সৈকত ভ্রমনে আসা পর্যটকরা। দানবটি উম্মুক্ত করার পরপরই প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত দানবের বিষয়ে পরিবেশ দূষণের ধারণা পাচ্ছেন। সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলছেন, ‘এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারছেন। এ ধরণের প্রদর্শনী ও কার্যক্রমের জন্য আয়োজকদের প্রশংসা করেছেন তারা।
সুগন্ধা পয়েন্টে ঘুরতে আসা বরিশালের পর্যটক দম্পতি শহিদুল ইসলাম ও বৃষ্টি আকতার জানান, ‘এটি নি:সন্দেহে পরিবেশ দূষণের একটি জনসচেতনতা তৈরী করবে। কারণ, প্রতিদিনই কক্সবাজার ভ্রমনে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। এসব পর্যটকরা নিজের অজান্তে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা এদিক-ওদিক ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে প্লাষ্টিক বর্জ্য সাগরে মিশে গিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে দাড়িয়েছে।’
বিদ্যানন্দন ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন ও বিদ্যানন্দন ফাউন্ডেশনের কক্সবাজার অঞ্চলের সেচ্ছ্বাসেবক মুহাম্মদ মোবারক জানান, ‘প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে হাজারো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ, হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকাও। মূলত, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সচেতনতার পাশাপাশি সমুদ্রের দূষণ প্রতিরোধে এমন প্রদর্শনীর কথা বলছে তারা।
প্লাষ্টিক দানবটি উদ্বোধনের পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘প্লাষ্টিক সৃষ্ট দানব মুলত: মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তৈরী করা হয়েছে মানুষের অবয়ভ দানব। এই দানবের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ জানবে। ’
এর আগে ২০২২ সালে সর্বপ্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ৩৫ ফুট উচ্চতার প্লাস্টিক দানব নির্মাণ করা হয়েছিল। এছাড়া দানবটির প্রদর্শনীর পাশাপাশি সৈকতের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে প্লাস্টিক এক্সেস সেন্টার। যেখানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে স্থানীয়রা নিত্যপণ্য এবং পর্যটকরা পাচ্ছেন নানা উপহার সামগ্রী। প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এটাকে বলা হচ্ছে, সমুদ্র সৈকত থেকে সংগৃহিত প্লাস্টিকবর্জ্য দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ববৃহৎ রোবট দানব।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.