ভয়েস প্রতিবেদক:
উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তজুড়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আরাকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর চলমান যুদ্ধে গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে সীমান্ত। রাতভর মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে রাতভর গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
রবিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার ও টেকনাফের সীমান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের বাসিন্দারা ভয়ভীতির মধ্যে আছেন। বেশ কিছুদিন পর আমাদের সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, রহমত বিল, আনজুমান পাড়া, বালুখালী, নরবনিয়া ও দামংখালী এলাকায় বেশি গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। সীমান্তে যুদ্ধবিমান দেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের দীর্ঘ বিরতির পর আবার লড়াই চলছে। সীমান্তের কাছে গুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রাতে সীমান্তের ওপার থেকে কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। অনেক সময় ধরে যুদ্ধবিমান দেখা গেছে। মূলত রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। সীমান্ত পিলার বিআরএম-১৮ থেকে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এবং শূন্য লাইন থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভেতরে বলিবাজার এলাকায় এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
উখিয়া সীমান্তের বসবাসকারী মো. ইমরান বলেন, ‘রাতে সীমান্তে বিকট শব্দে ঘুমাতে পারেনি। তবে সকাল থেকে কোন ধরনের গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। আমরা আতঙ্কে রয়েছি। কারণ, আরকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যের পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সীমান্তে পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যাবে। তবে সে দেশে নির্বাচন চলছে, সেটি শেষ হলে খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। সে কারণেও মানুষের মাঝেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
জানতে চাইলে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু জানান, ‘রাতে হঠাৎ বড় ধরনের বোমার মতো বিকট শব্দ হয়। ফলে সীমান্তের মানুষ সবাই ফোনে ভীত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। আমি বলেছি, নিরাপদে থাকার জন্য। আমার সীমান্তের মানুষ নির্ঘুম রাত পার করেছে।’
এদিকে নতুন করে শুরু হওয়া গোলাগুলিতে আবারও দুঃস্বপ্নে ফিরেছে সীমান্তের মানুষ। গত এক মাসেই অন্তত চার থেকে পাঁচবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন গ্রামে।
এ বিষয়ে হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আজমত উল্লাহ বলেন, ‘রাতে যুদ্ধবিমান ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আমাদের বাড়িঘরের দরজা-জানালা কেঁপে ওঠে। ভয়ে আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। এমন বিকট শব্দ আগে শুনিনি। সারারাত আমরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।’
উখিয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (৬৪ বিজিবি) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন বলেন, ‘হোয়াইক্যং বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকার নিকটবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সীমান্ত পিলার বিআরএম-১৮ থেকে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এবং শূন্য লাইন থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভেতরে বলিবাজার এলাকায় এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে সে দেশের অভ্যন্তরের ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমামুল হাফিজ নাদিম বলেন, ‘ওপারে গোলাগুলি ঘটনায় সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তে আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর টানা ছয় ঘণ্টা গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের সময় ওপার থেকে ছোড়া গুলি এসে স্থানীয় বসতঘরে পড়ে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরাংশে বলিবাজার, সায়েরবিল এবং নাফ নদের তোতার দ্বীপকেন্দ্রিক এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.