সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
তাকওয়ার গুণ মানবজীবনে ধারণ এবং চর্চা সমাজে বিরাজমান যাবতীয় অবিচার, অনাচার, অত্যাচার, মারামারি, হানাহানি, প্রতারণা, অনৈতিকতা, অপ্রাসঙ্গিকতা, পাশবিকতা ও অনৈসলামিক জীবনাচার দূরীভূত হয়ে অনাবিল সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার সমাজ বিনির্মিত হবে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাকওয়ার বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা সকল যুগের মানব সম্প্রদায়কে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ প্রদান করে বলেন, ‘আমি তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাবদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, তোমাদেরকেও এ নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে।’ সুরা আন নিসা : ১৩১
নিম্নে সংক্ষেপে তাকওয়ার কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
ব্যক্তি ও সমাজজীবন সহজ হয় : তাকওয়া অবলম্বন করলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বিষয়গুলোকে আল্লাহতায়ালা সহজ করে দেবেন। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।’ সুরা আত তালাক : ৪
বরকত, কল্যাণ ও রিজিক লাভ : তাকওয়া অর্জনকারীর জন্য আসমান থেকে বরকত, কল্যাণ ও রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। কোরআন মাজিদের ভাষায়, ‘যদি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ইমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশম-লী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।’ সুরা আরাফ : ৯৬
ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপত্তা লাভ : মহান আল্লাহর বাণী, ‘যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করতে পারবে না।’ সুরা আলে ইমরান : ১২০
মহৎ কাজের দায়িত্বশীল হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন : তাকওয়ার এ বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে মহান মনিবের বন্ধু হওয়ার গৌরব লাভ করা যায় এবং মহৎ কাজের দায়িত্বশীল হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা যায়। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘তারা উহার (মসজিদে হারাম) তত্ত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকিগণই ইহার তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা জানে না।’ সুরা আল আনফাল : ৩৪
কল্যাণকর জ্ঞান হাসিল : তাকওয়াবান ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দেন।’ সুরা আল বাকারা : ২৮২
শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে হেফাজত : ‘যারা তাকওয়ার অধিকারী হয় তাদের শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়।’ সুরা আরাফ : ২০১
ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জন : ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন।’ সুরা আনফাল : ২৯
আল্লাহর ভালোবাসা মেলে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ সুরা ইমরান : ৭৬
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ : ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকিদের সঙ্গে থাকেন।’ সুরা আল বাকারা : ১৯৪
মুত্তাকিদের আমল কবুল হয় : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ সুরা আল মায়েদা : ২৭
তাকওয়া উত্তম সম্পদ : ‘এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ
পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।’ সুরা আল বাকারা : ১৯৭
আল্লাহর রহমত লাভ : তাকওয়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহতায়ালার রহমত নসিব হবে। কোরআন মাজিদের ভাষায়, ‘আর আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি উহা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় ও আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে।’ সুরা আরাফ : ১৫৬
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুসংবাদ : ‘যারা ইমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে।’ সুরা ইউনুস : ৬৩-৬৪
জান্নাত লাভ : মুত্তাকিদের জন্য মহান রবের পক্ষ হতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ সুরা আলে ইমরান : ১৩৩
আল্লাহর প্রতিনিধি দলের মর্যাদা লাভ : ‘সেদিন মুত্তাকিদের দয়ালুর (আল্লাহর) প্রতিনিধি হিসেবে উঠানো হবে।’ সুরা মরিয়ম : ৮৫
জান্নাতের উত্তরাধিকারী : ‘এ সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকিদের।’ সুরা মরিয়ম : ৬৩
তবে তাকওয়ার সুফল পেতে আমাদের যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে সচেষ্ট হতে হবে, তেমনি সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে, সব বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য এবং সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিজেদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় রাখো এবং প্রকৃত ইমানদার হলে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো।’ সুরা আনফাল : ০১
তাই ইবাদতের ক্ষেত্রে সব প্রকার শিরক-বিদআত মুক্ত থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে জীবনের সব স্তরে তাকওয়া অবলন্বন করা জরুরি। কেননা তাকওয়ার এ গুণাবলি মানুষকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করে এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। মহান আল্লাহর কাছেও তাকওয়ার গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি তাকওয়াবান।’ সুরা আল হুজুরাত : ১৩
ভয়েস/আআ