রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০৬ অপরাহ্ন
মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান:
দুনিয়ার বুকে অত্যন্ত বরকত ও মর্যাদাপূর্ণ শহর হলো মদিনাতুর রাসুল বা রাসুলের শহর। যা মদিনা শরিফ নামে সমধিক পরিচিত। যাকে আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় নবীর আশ্রয়স্থল হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সেখানেই শায়িত রয়েছেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
মদিনার পূর্ব নাম ছিল ইয়াসরিব। নবী কারিম (সা.)-এর হিজরতের পর এ নগরীর নাম রাখা হয় মদিনা। হজরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভি (রহ.) ‘জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব’ গ্রন্থে মদিনার ছাপ্পান্নটি নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। ইমাম নুর উদ্দিন সামহুদি তার ‘ওয়াফাউল ওয়াফা’ গ্রন্থে বলেন, মদিনা মুনাওয়ারার পঁচানব্বইটি নাম রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ নাম মদিনা।
মদিনা শব্দের অর্থ শহর। যা কোরআন মাজিদে চারবার এসেছে। সুরা তওবা, আয়াত : ১০১ ও ১২০; সুরা আহজাব, আয়াত : ৬০ এবং সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ৮। আর হাদিসেও এই নামটির ব্যবহার সর্বাধিক। মদিনার আরেকটি প্রসিদ্ধ নাম ‘তাবাহ’। মুসলিম শরিফে বর্ণিত আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনাকে ‘তাইবাহ’ নামেও অভিহিত করেছেন। তাবাহ ও তাইবাহর অর্থ উত্তম। মদিনার উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি নাম হলো আদ-দার, আল-হাবিবা, দারুল হিজরা, দারুল ফাতহ ইত্যাদি।
মক্কা নগরী যেমন মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী, মদিনা শরিফও তেমন নিরাপত্তা ও সম্মানের অধিকারী। মদিনাবাসীর বরকতের জন্য রাসুল (সা.) দোয়া করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘মদিনার এখান থেকে সেখান পর্যন্ত হারাম বা মহাসম্মানিত। এখানকার কোনো গাছ কাটা যাবে না, এখানে কোনো অসংগত কাজ করা যাবে না। যে ব্যক্তি এখানে তা করবে তার প্রতি আল্লাহর সব ফেরেশতা এবং সব মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে।’ সহিহ বোখারি : ১৮৭০
আল্লাহতায়ালা রহমতের ফেরেশতা দ্বারা মদিনাকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন। এমনকি কেয়ামতের পূর্বে সংঘটিত দাজ্জালের ফেতনা থেকেও আল্লাহতায়ালা মদিনা শহরকে রক্ষা করবেন।
মদিনা শরিফের মসজিদে নববি হলো নবী কারিম (সা.)-এর হাতেগড়া মসজিদ, যা বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতের। সেখানে রয়েছে ‘রিয়াজুল জান্নাত’ বা জান্নাতের বাগান। নবী কারিম (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা নিঃসন্দেহে সুন্নত ও পুণ্যময় কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওফাতের পর হজ করল, অতঃপর আমার কবর জিয়ারত করতে এলো সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।’ বায়হাকি : ৩৮৫৫
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল তার জন্য আমার সুপারিশ আবশ্যক হয়ে গেল।’ দারা কুতনি : ১৯৪
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বস্তুত আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসুলও যদি তাদের ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত।’ সুরা আন নিসা : ৬৪
এক বেদুঈন পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি শুনতে পেয়ে দ্রুত মদিনা রওনা হলেন এই উদ্দেশ্যে যে, নবী কারিম (সা.)কে বলে তিনি তার পূর্ববর্তী সব গোনাহ আল্লাহর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেবেন। বেদুঈন লোকটি মদিনা এসে জানতে পারলেন, কিছুদিন হলো নবী কারিম (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি নবী কারিম (সা.)-এর রওজায় কাঁদতে কাঁদতে এই বলে ফরিয়াদ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) আমি পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি শুনতে পেয়ে অনেক আশা নিয়ে আপনার খেদমতে এসেছি, আপনার শাফায়াতের মাধ্যমে আমি আমার সব গোনাহ আল্লাহর কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেব বলে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি আপনাকে পেলাম না, তাই অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে আপনার দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছি। এ বলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবী কারিম (সা.)-এর দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন। হজরত আতবি (রা.) নামের একজন সাহাবি নবী কারিম (সা.)-এর রওজা প্রাঙ্গণে ঘুমিয়ে ছিলেন। নবী কারিম (সা.) তাকে স্বপ্নে ডাক দিয়ে বললেন, ওহে আতবি! আমার এক উম্মত অত্যন্ত নিরাশ হয়ে ভগ্ন হৃদয়ে আমার দরবার থেকে ফিরে যাচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি তার পেছনে যাও এবং তাকে গিয়ে বল, নবী কারিম (সা.) তোমার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তোমার জন্য শাফায়াত করেছেন। তুমি সন্তুষ্টচিত্তে বেহেশতের সুসংবাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। -তাফসিরে ইবনে কাসির
ভয়েস/আআ