বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল

বিশেষ প্রতিবেদক:

আজ সে ভয়াল ২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা। ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। তবে এখনো অরক্ষিত বাংলাদেশের উপকূল।

জানাগেছে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের দিবাগত মধ্যরাতে কক্সবাজার,চট্রগ্রাম,নোয়াখালী,বরিশাল,পটুয়াখালী,রবগুনা সহ দেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জ্বলোচ্চাস আঘাত হানে। এতে ২ লাখ বনি আদমের প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি নিখোঁজ হয় ১ লাখ আদম সন্তান। ৭০ হাজার গবাদী পশু মারাযায়। ঐ রাতের তান্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে সরকারী হিসেবে রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেবে এ ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হবে বলে জানালেন, কোষ্টাল জার্নালিষ্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আতা উল্লাহ খাঁন।

গরকির ছুবলে ছেলে হারায় মাকে, মা হারা তার প্রিয় সন্তানদের, স্বামী হারায় স্ত্রীকে, স্ত্রী হারায় তার প্রাণের প্রিয়া স্বামীকে। সে ভয়াল রাতের স্মৃতি মনে পড়লে উপকূলবাসী এখনো আঁতকে উঠে। সে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের ৩২ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত। তার সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জোয়ারের সময় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, কক্সবাজারের ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়ি বাধেঁর মধ্যে ৩২ কিলোমিটার ঝুকিঁপুন্য অবস্থায় রয়েছে। তবে পুরো উপকূল জুড়ে সুপার ডাইক নির্মানের জন্য কাজ চলছে বলে ও জানান তিনি।
কুতুবদিয়ার সাংবাদিক নেতা হাসান কুতুবী জানান,তাদের পশ্চিম পাশের বেড়ীবাধঁ ৯১ সালের পর আর কোন মেরমত হয়নি। ফলে ঝুকি রয়েছে বর্ষার জন্য।এসবের সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফলে উপকূলবাসী এখন চরম ঝুকিঁতে রয়েছে।

এদিকে ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ ২৯ এপ্রিল দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে। তার মধ্যে রয়েছে ফাতেহা, কোরআনখানি, মিয়াদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, কাঙ্গালীভোজ, চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠান। কোষ্টাল জার্নালিষ্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ ,২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করে। আজ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, হাতিয়া, আনোয়ারার প্রতিটির মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, ঘরেঘরে চলবে ফাতেহা। ১৯৯১ সালের এ দিনে সব চেয়ে বেশী প্রাণহানী ঘটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা উপ-দ্বীপে। এ ইউনিয়নের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য কামরু নাহার রুবি জানান, এখানে এমন কোন বাড়ী বা ঘর নেই যে বাড়ী বা ঘর থেকে ৫/৬ জন লোক মারা যায়নি। তাই এ দিন টি আসলে এখনো প্রতিটি বাড়ীতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ধলঘাটা তরুন ছ্ত্রা সংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান,১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটার মানুষ বেড়ীবাঁধ নিয়ে কষ্টে আছে।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবু হায়দার বলেন, এসব কিছুর পরও সরকার উপকূলবাসীর জন্য সুপার ডাইকের ব্যবস্থা করবে এবং যে কোন ভাবে তা উপকূলীয় এলাকাকে নিরাপদ করবে এ আসা আমাদের।

কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চোঁখ এখনো ঝাপসা হয়ে আসে। সে রাতের কথা কোণ ভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। তবে উপকূল এখনো অরক্ষিত।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, সরকার কক্সবাজারের উপকূল কে রক্ষায় বিশেষ উদযোগ গ্রহন করেছে। উপকূলবাসীর বাসীর একটাই দাবী তা হলো ঠেকসই বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূল কে সাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষাকরা হয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION