শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানে সাসপেন্স। নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। কি হতে যাচ্ছে দেশটিতে! ইমরান খানকে কি আবার গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে সরকার! সেনাবাহিনী কি ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে? লন্ডন সমীকরণ কি বলছে? ইত্যকার আলোচনা মুখে মুখে। কমপক্ষে তিন দিন হলো লাহোরে জামান পার্কে ইমরান খানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে বিপুল পরিমাণ পুলিশ। চারদিক অবরুদ্ধ। বাতাসকেও ঢুকতে হলে যেন হিসাব দিয়ে যেতে হবে। এমন কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য থেকে ইমরান খান একের পর এক টুইট করে চলেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, তাকে আরও একবার গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সেনাবাহিনী কঠোর বার্তা দিয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাবধান করেছেন।
বলেছেন, আর কোনো সহিংসতা সহ্য করা হবে না। পাকিস্তানের রাজনীতি কেমন যেন গোলমেলে হয়ে গেছে। একদিকে সরকার। অন্যদিকে ইমরান খান। মাঝখানে বিচারবিভাগ, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী। সবকিছু একসঙ্গে মিলে এক উদ্ভট পরিস্থিতি। পাঞ্জাব প্রদেশ সরকার আলটিমেটাম দিয়েছিল ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার বাসভবনে থাকা ‘সন্ত্রাসীদের’ ধরিয়ে দিতে। সেই সময় পেরিয়ে গেছে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল দুটায়। এরপর ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যেকোনো সময় অভিযান চালানো হবে বলে পাকিস্তানি মিডিয়া খবর দিতে থাকে। বিষয়টা যেন যুদ্ধের ময়দানের মতো। কি হচ্ছে, কি হবে, আগেভাগে বলা যায় না। যেকোন মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যাচ্ছেও তাই। সর্বশেষ জানানো হয়েছে, ইমরান খানের অনুমতির পর আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর তার বাড়িতে মিডিয়ার উপস্থিতিতে অভিযান চালানো হবে। সঙ্গে থাকবে ক্যামেরা, যাতে পরে কেউ কোনো অভিযোগ করতে না পারেন। পাঞ্জাব সরকার বলেছে, তারা ইতিবাচক পরিবেশে সেখানে সার্স অপারেশন চালাবে। প্রদেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী আমির মীর বৃহস্পতিবার বলেছেন, আইন প্রয়োগকারীরা পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বাসভবনে জুমার নামাজের পর তার অনুমতি সাপেক্ষে ‘সন্ত্রাসীদের’ ধরতে ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অভিযান চালাবে। এতে তত্ত্বাবধান করবেন লাহোরের কমিশনার।
ইমরান খানকে ৯ই মে গ্রেপ্তার করার পর পাকিস্তানজুড়ে যে সহিংসতা হয়, তার সঙ্গে জড়িতদের সামরিক আইনে বিচার করবে সরকার। ওই সহিংসতায় জড়িত ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী ইমরান খানের বাসভবনে আত্মগোপন করে আছেন বলে সরকারের দাবি। এদেরকে সরকার সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছে। তথ্যমন্ত্রী আমির মীর বলেন, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মোহসিন নাকভি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করেছেন। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইমরান খানের টিমের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে জুমার নামাজের পর তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। প্রতিনিধি দল তার কাছে তার বাসায় সার্স অপারেশনের অনুমতি চাইবেন। এ জন্য ৪০০ সদস্যের একটি পুলিশি টিম থাকবে। অনুমতি সাপেক্ষে তারা সার্স অপারেশন চালাবে।
এর আগে ইমরান খান আইন প্রয়োগকারীদেও অনুরোধ করেছেন তার বাসায় সার্স অপারেশন চালাতে। তবে সেক্ষেত্রে তাদেও সঙ্গে থাকতে হবে বৈধ সার্স ওয়ারেন্ট। মন্ত্রী আমির মীর বলেন, যদি ইমরান খান তল্লাশির অনুমতি না দেন, তাহলে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করবো।
ওদিকে ইমরান খান অন্য রকম এক ভয় করছেন। তিনি মনে করছেন আগে কিছু লোককে তার বাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে পারেনি বলে পুলিশ অভিযান চালায়নি। তারা চেয়েছে কিছু লোককে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে পরে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখাতে। আর মন্ত্রী এখন বলছেন সবই করা হবে ক্যামেরার উপস্থিতিতে। তার এমন দাবিকে কৌতুক হিসেবে অভিহিত করেছেন মন্ত্রী আমির মীর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই মন্ত্রী আরও জানান, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তারা তাকে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করতে বলেছেন। এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণার জন্য তাকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।
ভয়েস/জেইউ।