বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন
সুমাইয়া বিনতে জোয়ান:
মুসলিম পরিবারগুলো বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। যে কারণে দাম্পত্য অবিশ্বাস, বিচ্ছেদ, ডিভোসের্র উচ্চ হার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি বেড়েছে। মুসলিম পরিবারের চলমান দুর্দশার একমাত্র সমাধান ইসলামি পারিবারিক মূল্যবোধ বজায় রাখা।
ইসলাম পরিবারকে শক্ত ভিত্তির ওপর গড়ে তোলে। যা স্থায়িত্ব, ধারাবাহিকতা, নিরাপত্তা, পারস্পরিক ভালোবাসা এবং আন্তরিক ঘনিষ্ঠতা প্রদানে সক্ষম। পরিবারের ভিত্তি মজবুত এবং স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ইসলাম শুধুমাত্র পারিবারিক বন্ধনকে স্বীকৃতিই দেয় না বরং বিয়ের ওপর জোর দেয়, যা শালীনতা, নৈতিকতা, সুখ-সমৃদ্ধি ও মানব প্রকৃতির স্বাভাবিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বৈধ ঘনিষ্ঠতার একটি সুন্দর ও যথাযথ নমুনা।
ইসলামি ব্যবস্থায় বিয়ে ও পরিবার হলো- ফোকাল পয়েন্ট। কোরআন মাজিদের অনেক আয়াত এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হাদিস বিয়েকে একটি নৈতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং একটি ধর্মীয়-সামাজিক প্রতিশ্রুতি বলে ঘোষণা করে। মুসলিম পরিবারের লক্ষ্য অবশ্যই আল্লাহর ইবাদত হতে হবে, কারণ বিয়েকে ইবাদতের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিবারের দায়িত্ব শুধুমাত্র স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা নাতি-নাতনিদের ওপর আবর্তিত হয় না। এটা তাদের সবার প্রতি সবার সম্মিলিত দায়বদ্ধতা এবং এমনকি এর বাইরেও আগের প্রজন্মের পূর্বপূরুষদের অন্তর্ভুক্ত করে।
পরিবারে শুধু ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা করলেই হবে না, যত্ন সহকারে তা লালন করা উচিত। যার ফল হবে, ‘যেমন আপনি বপন করবেন, তেমনি ফল কাটবেন।’ পছন্দ-অপছন্দ, সৌন্দর্য ও অশ্লীলতার ধারণা, সুন্দর-ভালো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা বিশৃঙ্খলতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা অবশ্যই সুন্নতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে, কারণ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তার নিজের ইচ্ছা ও পছন্দ আমি যা নিয়ে এসেছি তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়।’
নবী কারিম (সা.)-এর এই বাণী আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মুসলিম পরিবারসমূহের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এর সদস্যদের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্গত হওয়ার দৃঢ় অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। পরিবার কোনো পৃথক বিষয় নয়, এটি সমাজের অংশ। তাই এটাকে আরও শক্তিশালী করা আবশ্যক। একটি মুসলিম পরিবারকে অবশ্যই অন্যান্য মুসলিম পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে। অভিভাবকদের দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলতে হবে এবং অসুস্থ পরিবেশের সামাজিকতা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সন্তানদেরও একই কাজ করা উচিত। পাশাপাশি, তাদের অবশ্যই আরও ভালো বিকল্প দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে এবং ভালো মুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেয়ে ভালো বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। এগুলো হলো মুসলিম পরিবারকে প্রমোট ও প্রিজার্ভ করার কিছু উপায়।
উপসংহারে, আমি ধর্মতত্ত্ববিদদের কাছে ইসলামের বিষয়গুলো সম্পর্কে ক্রমাগত সচেতন এবং সৃজনশীল থাকার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি। শিক্ষিত মুসলিমদের অবশ্যই চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করা, দেখা, উপলব্ধি করা, জানা, জ্ঞানী হওয়া, যৌক্তিক হওয়া ইত্যাদি ইসলামিক ধারণাসমূহ মুসলিম সমাজে প্রয়োগ করতে হবে এবং পারিবারিক বিষয়েও কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর নীতি অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতে হবে।
ভয়েস/আআ