শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

‘ফ্রি ভিসা’র ভয়াবহ ফাঁদ সৌদিতে

সংগৃহীত ছবি

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

সৌদি আরবে ‘ফ্রি ভিসা’ বলে কিছু নেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তারপরও অর্ধেকেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক ওই কথিত ভিসার অধীনে সৌদি আরবে যান। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি নাগরিকদের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এই টার্ম ব্যবহার করে, যেন সৌদি আরবে পাঠানো শ্রমিকরা অবৈধভাবে কাজ খুঁজে নিতে পারে।

‘ফ্রি ভিসা’র আওতায় যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে যান, তারা বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। চাকরি, খাওয়া-দাওয়া কিংবা বাসস্থানের নিশ্চয়তা থাকে না। শ্রমিকদের অনেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

ফ্রি ভিসা কীভাবে কাজ করে?

সৌদি আরবে প্রত্যেক পরিবার গাড়ি চালানো, বাগান করা এবং রান্না করাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য আট জন পর্যন্ত কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। কিছু কিছু সৌদি পরিবার বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এসব শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। কথিত ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকরা ওই গৃহকর্তাদের অধীনে থাকে। মূলত সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর তাদের নিজের কাজ ও আবাসনের ব্যবস্থা করে নিতে হয়।

প্রবাসী শ্রমিকদের স্পন্সর করার জন্য সৌদি পরিবারগুলোকে ১৫০০-২০০০ ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করে থাকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। কিছু কিছু গৃহকর্তা আবার শ্রমিকদের আয়ের একটা অংশও দাবি করে থাকে। মানে শর্ত থাকে যে এসব শ্রমিক সৌদি আরবে যাওয়ার পর যে কাজই পাক না কেন, আয়ের একটা অংশ স্পন্সরকে দিতে হবে।

এসব শ্রমিক যে কাজই খুঁজে পাক না কেন, তা অবৈধ। কারণ ভিসা অনুযায়ী তাদের শুধু গৃহস্থালি কাজের অনুমতি থাকে।

কথিত ফ্রি ভিসার সংকট

মুন্সীগঞ্জের তুহিন গত বছর সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। ফ্রি ভিসার আওতায় মালি হিসেবে কাজ করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন তিনি।

তুহিন বলেন, ‘ফ্রি ভিসার আওতায় যেসব অভিবাসী শ্রমিক সৌদি আরব গিয়েছেন তাদের কাজ করার ও বেতন পাওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। আমি কিছুটা কাজ পেয়েছিলাম, সেখান থেকে ৭০০ রিয়াল আয় হতো। তবে এরমধ্যে আমার থাকা-খাওয়ার পেছনে ৪০০ রিয়াল খরচ হয়ে যেতো। আর আমাকে নিজের ঘরের বাইরে কাজের অনুমতি দেওয়ায় স্পন্সরকে দিতে হতো মাসে ৩০০ রিয়াল।’

‘আমি তাকে মাসে ৩০০ রিয়াল দিতে রাজি হয়েছিলাম, কারণ তা না করলে তিনি পুলিশকে জানিয়ে দিতেন এবং আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতো। এরপর রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নতুন কাউকে নিয়ে যেতেন। তবে শেষ পর্যন্ত বাইরে কাজ করার সময় পুলিশ আমাকে আটক করে ফেলে এবং দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।’ বলেন তুহিন।

ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে কোভিড-১৯ মহামারি। কারণ, এর কারণে কাজের সুযোগ আরও কমে গেছে। এমন অবস্থায় দৈনন্দিন প্রয়োজন ও খাওয়া-দাওয়ার খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

সৌদি আরবে ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশি শ্রমিক পুনম ভূঁইঞা। সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন তিনি। পুনম বলেন, সৌদি আরবে কাজ জুটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিদিনই তার কাছে অনুরোধ নিয়ে আসেন শ্রমিকরা। ‘সত্যিকার অর্থে শ্রমিকরা বুঝতে পারে না যে সৌদি আরবে কাজের সুযোগ খুব বেশি নেই।’ বলেন পুনম।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্স ইউনিট (আরএমএমআরইউ) এর সভাপতি ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে ফ্রি ভিসা বন্ধ করতে হবে।’ তার প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশ সরকার জনশক্তি রফতানির সংখ্যা বাড়াতে চাইছে। তাহলে কেন এ ফ্রি ভিসা প্রবণতা অব্যাহত থাকবে?’

ড. সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘সৌদি সরকারও এ সমস্যার সমাধানের জন্য সহযোগিতা করছে না। তারা পরিবারগুলোকে আটজন গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে, তাদের অতো বেশি মানুষ লাগুক কিংবা না লাগুক। ফ্রি ভিসা বন্ধের জন্য সৌদি সরকারকে আমাদের চাপ দিতে হবে। কম বেতনে শ্রমিক পাওয়ার জন্য তারা এটাকে ববহার করছে।’

তাসনিম চৌধুরীর অভিযোগ, বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এখন আর যথাযথ ভিসা পাওয়ার চেষ্টাই করছে না। তার আশঙ্কা, ফ্রি ভিসাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের কারণে ভবিষ্যত জনশক্তি রফতানিতে প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে যারা ফেরত এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই ফ্রি ভিসায় সেখানে গিয়েছিলেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সেখানে তাদের কোনও কাজ ছিল না। আবার ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের টাকাও ছিল না তাদের। সে কারণে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরতে হয়েছে।’

শামীম আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সেখানে (সৌদি আরবে) বাংলাদেশি অভিবাসীদের যাওয়ার ক্ষেত্রে একজন স্পন্সর থাকতে হয়। ওই বাংলাদেশি যদি সে স্পন্সরের কাজ না করে অন্য কোথাও কাজ করতে চান, তবে তাকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। স্পন্সর স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগকর্তাকেও সব ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হয়। যদি এ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হয়, তার মানে ওই অভিবাসী শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ করছেন এবং পুলিশ ওই শ্রমিককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে।

বায়রা মহাসচিবের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রি ভিসাকে সবসময়ই নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ, কোনও ধরনের রেমিটেন্স ছাড়াই শ্রমিকদের ফেরত আসাসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে এটি। তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকারকে এ ধরনের ভিসা ইস্যু করা বন্ধ করতে হবে এবং এ ইস্যুতে সৌদি কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে চাপ দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ১ লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন বাংলাদেশি বিদেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবে গিয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৭ জন। সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION