বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
বিষণ্নতা কাটাতে সিরাত পাঠতারুণ্য মানুষের জীবনের এক সম্ভাবনাময় সময়কাল। পরিবর্তনের এ সময়ে কারও পরিবর্তন তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে নিয়ে যায়, অথবা জীবনে নিয়ে আসে ঘোর অমানিশা। সংকটময় এ সময়ে বিষণ্নতায় ভুগেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারুণ্যের এমন বিষণœতায় হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত (জীবনালেখ্য, ইতিহাস) এক কার্যকরী প্রতিরোধক। রাসুলের জীবনালেখ্য যেমন ইহজগৎকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে, তেমনি পরকালীন মুক্তির পাথেয় হবে। তাই সব তরুণের উচিত রাসুলের জীবনী অধ্যয়ন এবং জীবনে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
সিরাতে রাসুল কী : সিরাত আরবি শব্দ। অর্থ জীবন-চরিত, আচার-আচরণ ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় সিরাতুর রাসুল বা সিরাতুন নবী বলতে আল্লাহর হাবিব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারকে বোঝায়। ইসলামি জ্ঞানশাস্ত্রে সিরাতুন নবীর এক ব্যাপক ধারা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয় আপনি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।’ সুরা আল কলম : ০৪
মানসিক বিকাশে সিরাত : নবীজীবনের বাস্তবচিত্র ফুটে ওঠা সিরাত অধ্যয়ন তরুণদের জীবন তরীকে নিয়ে যায় প্রশান্তির মহাসাগরে। মানসিক বিকাশের সংকটাপন্ন দূরবস্থা থেকে উত্তরণে তরুণদের উচিত সিরাত অধ্যয়নে মনোনিবেশ করা। সমাজের ক্রান্তিলগ্নে কীভাবে সঙ্গবদ্ধভাবে হিলফুল ফুজুলের মতো সংগঠনে সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করতে হয় তরুণরা সিরাত পাঠের মধ্য দিয়েই তার বাস্তবিক শিক্ষা অর্জন করতে পারে। সিরাত পাঠ তরুণদের সুপ্ত প্রতিভার তেজদীপ্তি সমাজে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অনুপ্রেরণার উৎকৃষ্ট অবলম্বন : মানব জীবনের বিষণœতার বড় কারণ, জীবনে অনুপ্রেরণা না থাকা। অনুপ্রেরণা থাকলে মানুষ সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকে আর সফলতার নাগাল পায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমগ্র জীবনের প্রতিটি অধ্যায় থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। একজন সর্বহারা এতিমকে কীভাবে আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ কৃপায় রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদায় আসীন করেন তার সুদীর্ঘ সিরাত শিক্ষা নেওয়ার মতোই।
নৈতিক শিক্ষা লাভের মাধ্যম : যে সমাজ যত বেশি নৈতিকতাশূন্য, ওই সমাজে তত বেশি অপরাধ প্রবণতা দেখা যায়। নৈতিক শিক্ষার অভাবে তরুণরা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে। এভাবে তারা নিজ জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনকেও দুর্বিষহ করে তোলে। তাই তারুণ্যকে শোভামণ্ডিত করতে সিরাত পাঠের গুরুত্ব অপরসীম। পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে প্রামাণিক ঘোষণা, ‘আসলে আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ সুরা আল আহজাব : ২১
অল্পতুষ্টির শিক্ষা : ‘আরও চাই, আরও চাই’ এমন মনস্কামনা মানবজীবনে বিষণ্নতার বড় কারণ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনজুড়ে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, ইহজগতের প্রাপ্তিতে প্রকৃত সুখ নয় বরং পরকালে জান্নাত প্রাপ্তিতেই প্রকৃত সুখ নিহিত। ছোটবেলায় বাবা-মা, দাদা হারিয়ে রাসুল (সা.) তার দরিদ্র চাচা আবু তালেবের অভিভাকত্বে লালিত হন। চাচার সঙ্গে কষ্ট ভাগাভাগি করেছেন, তবু অভিযোগ করেননি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)কে তৎকালীন কাফেররা কতই না লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন শুধু সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়াতে! কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তা ফিরিয়ে দিয়ে সত্যের ওপর অবিচল থাকেন। তিনি দোজাহানের সর্দার ছিলেন। অথচ জীবনের শেষদিন নিজের মালিকানায় ছিল মাত্র সাত দিরহাম। তিনি তাও দান করে দিয়েছিলেন।
সৃজনশীলতায় সিরাত : সর্বকালীন সৃজনী মেধার অধিকারী ছিলেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)। সময়ে কত জীবনাচার আসে আর সময়েই তার বলুপ্তি ঘটে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক জীবনাচার হিসেবে স্বীকৃত রাসুলের জীবনাচার। কারণ তার শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ)। এ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।’ সুরা আর রাহমান : ১-২
বস্তুত নবী কারিম (সা.) ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনে সবখানেই রাসুলুল্লাহ (সা.) রেখে গেছেন সৃজনশীলতার পরিচয়। এভাবেই তিনি একটি বর্বর সমাজকে পরিবর্তন করেন এক আদর্শ জাতিতে।
ইসলাম শুধু বস্তুগত সুখের নিশ্চয়তাদানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং মানসিক প্রশান্তিরও নিশ্চয়তা দেয়। হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও কীভাবে সফল হতে হয় তা আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় রাসুলের জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৯
বর্ণিত বিষয়গুলোর আলোকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, তারুণ্যের বিষণœতায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত অনবদ্য এক প্রতিরোধক ও মাধ্যম।
ভয়েস/আআ