শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
ইরফান উদ্দিন:
আমরা ২ ভাই ২ বোন।সবার বড় রোকসানা আপা, এরপর আমি (ইরফান), এরপর- জোসনা আক্তার ও সবার ছোট- সালমান।
ছোটবেলা থেকে আমার মা বাবার পরে আমাকে লালন পালনের জন্য সবচেয়ে যিনি কষ্ট করেছেন তিনি আমার আপা। আমার আপা ছোটবেলা থেকে আমাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন -এখনো। বিনিময়ে কখনো কিছু আশা করিনি।
আমার আপাকে নিয়ে আমার প্রচুর স্মৃতি। ছোটবেলায় যখন আপার সাথে স্কুলে যেতাম, আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতো, সাথে করে নিয়ে আসতো। সবসময় চোখে চোখে রাখতো। সেই ভালবাসা কত মহান ও সুন্দর ছিলো- যা লেখায় প্রকাশ করা কঠিন।
আপাকে নিয়ে আরেকটা মজার স্মৃতি মনে পড়লো-সেটি হলো…
আপা আর আমার জ্যাঠা মরহুম বিজিবি আব্দুস শুক্কুরের ছোটকন্যা আমার জ্যাঠাতো বোন আজিজুন নাহার কলি। তারা যখন স্কুল শিক্ষার্থী ছিলো তখন এই দুইজন ছিলো ক্লাসের লিডার।
এই ২ আপাকে ক্লাসের সবাই ভয় পেতো। দুজনই প্রতিদিনই সামনের ব্যাঞ্চটিতে বসতো। যদিও ৭০+ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোল নং ছিলো ৩০ এর দিকে। এই ২ আপা যেদিন ক্লাসে যেতো না সেই দিন তাদের বেঞ্চে কেউ বসতো না। তারা কিন্তু কাউকে মানা করেনি, তবু কেউ বসতো না।
এটাও সত্য যে, এই দুই আপাকে কেউ প্রেম ভালবাসার অফার দিতেও সাহস পাইনি। যদিও দু’জনই ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী আপা ছিলো। এগুলো আমার চোখে দেখা।নিশ্চয়ই আপার মনে আছে। হাহাহা।
আমি ছিলাম তাদের পিচ্ছি গোয়েন্দা। স্কুলে কি করছে না করছে- এসব নিয়ে বাড়িতে প্যাচ লাগিয়ে দিতাম আম্মাকে। ফলে নিয়মিত বকা শুনতে হতো।
স্কুলে পরিক্ষা কেন্দ্রে স্বয়ং মেডামকে বশ করে নকল করতে গেলে আমি ধরিয়ে দিতাম। আমাদের প্রচন্ড ভালবাসার কাতিরে বশ হয়ে থাকা মেডামের নাম ছিলো আনজুমান। আমাদের কর্মকান্ড নিয়ে তিনি অনেক হাসতেন। মনে হতো সবার তুলনায় আমাদের বেশি ভালবাসতেন।
আপাকে সবাই ভয় পেলেও, আমি কাউকে ভয় পেতাম না। বাড়িতে আমিই সব। আমাকে কেউ চোখ রাঙিয়ে তাকালেও- আব্বু বকা দিয়ে দিতো সবাইকে। ফলে আমাকে কিছু বলার সাহস থাকতো না কারো। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমার আপাকে প্রচুর জ্বালিয়েছি। সামান্য এদিক সেদিক হলে রেগে যেতাম। ঝগড়া দিতাম। তবু খুব আদরের ছিলাম।
আপা যখন (অবিবাহিত) বাড়িতে ছিলো, তখন আমি ছোট ছিলাম, তখন বুঝিনি আপার শূন্যতা।
তখন একটা আপন বড়ভাই পাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আল্লাহকে বলতাম- কেন আমাকে একটা বড়ভাই দিলো না আল্লাহ?
এক পর্যায়ে আল্লাহর হুকুমে আমার আপার সাথে বিয়ে হলো উখিয়ার মোস্তাফা কামাল পাশা ভাইয়ার সাথে। ভাইয়ার সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে অনুভব করছি বড়ভাই কি রকম হয়।
আমার এই পর্যন্ত আসার পিছনে ভাইয়ার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা এবং ভালবাসা- আমাকে সবসময় বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস যুগিয়েছে।
এখন আপা ও মোস্তফা ভাইয়ার সংসার আজ ৪ জনে পরিণত হয়েছে। আজ তাদের ২ ছেলে সন্তান। ওয়াসিফ মোস্তফা রোহান ও তাওসিফ মোস্তফা রাইয়ান। সবমিলিয়ে এই পর্যন্ত উপলদ্ধি করেছি- আল্লাহ সত্যিই আমাদের অনেক ভালবাসেন। আলহামদুলিল্লাহ।
আপা জন্মদিন উদযাপন করেন না, তবু এটি একটি বিশেষ দিন হওয়ায় দুই একটা কথা লিখতে খুব ইচ্ছে করছিলো। তাই লিখলাম।
আর আমার মোনাজাতে সবসময় আপা ও আপার পরিবারের জন্য দোয়া করি আল্লাহ আমার সহজ সরল আপাকে সবসময় সুস্থ রাখুক, দীর্ঘজীবি করুক, সবসময় হাসিখুশিতে রাখুক, সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকুক।-শুভ জন্মদিন আপা।
ভয়েস/আআ