শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শান্তি ও ভালোবাসার শহর

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
‘মদিনা’ অর্থ মহানগর, যা ‘মদিনাতুর রাসুল’ বা ‘মদিনাতুন নবী’ নামে সমধিক পরিচিত, যার অর্থ রাসুলের শহর বা নবীর শহর। পরবর্তীকালে সেটি পরিচিতি পায় ‘মদিনা মুনাওয়ারা’ তথা ‘আলোক শহর’ বা আলোকিত নগরী হিসেবে। মক্কার ন্যায় মদিনাও পবিত্র নগরী। মদিনা ইসলামের আশ্রয়ের স্থল, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের হিজরতের জায়গা। হজরত রাসুলুল্লাহ ও তার সাহাবিদের ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস মিশে আছে মদিনার ধুলো-কণায়। পবিত্র কোরআনের অর্ধেক নাজিল হয়েছে মদিনায়। অধিকাংশ হাদিসের উৎসও মাদানি জীবনের নানা ঘটনা। সে হিসেবে জিয়ারতে মদিনা ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে আমাদের সাহায্য করে, মজবুত করে বিশ্বাসের ভিত। আর হজের সফর যেহেতু মদিনায় যাওয়ার একটা বিরাট সুযোগ এনে দেয়, বিশেষ করে যারা বহির্বিশ্ব থেকে আসে তাদের জন্য তাই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই বাঞ্ছনীয়। মদিনায় যাওয়া ও নবীজি (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা সওয়াবের কাজ।

ইতিহাসে উল্লেখ আছে, মদিনাবাসীর বিভিন্ন গোত্রের শত শত বছরের সংঘাত নিরসনে এবং সব ধর্ম ও গোত্রের স্থানীয় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে নবুওয়তের ১৩তম বছরে প্রিয় নবী (সা.) আল্লাহর নির্দেশে হিজরত করেন। সবাই তাকে শান্তির দূত হিসেবে মেনে নেয়।

মদিনায় প্রথম নির্মাণ করা হয় মসজিদে কোবা। মসজিদে জুমা হলো এখানকার প্রথম জামে মসজিদ। মদিনার প্রধান মসজিদটি হলো ‘মসজিদে নববি।’ নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে, কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে মুনাফিকি আর দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে।’ মুসনাদে আহমদ

পবিত্র মক্কার পরই এটি শ্রেষ্ঠ স্থান। মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব ৫০ হাজার রাকাতের সমান। মদিনা শরিফ মক্কা শরিফের উত্তর দিকে হওয়ায় মদিনা শরিফের কিবলা দক্ষিণ দিক। মদিনায় প্রিয় নবীজি (সা.)-এর রওজা মোবারক অবস্থিত। মদিনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান এই রওজা শরিফ। হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে তার রওজা অবস্থিত। এরই পাশে একটু পেছনে হজরত আবু বকর (রা.) ও আরেকটু পেছনে হজরত উমর (রা.)-এর কবর। জায়গাটি বর্তমানে মসজিদে নববির অন্তর্গত। রওজা শরিফের ওপর সবুজ গম্বুজ অবস্থিত। রওজা শরিফ জিয়ারতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওজা জিয়ারত করল, সে যেন আমাকে আমার জীবদ্দশায় দর্শন করল।’ -বায়হাকি

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ জামে তিরমিজি

মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের প্রবেশপথকে বাবুস সালাম বলা হয়। মসজিদে নববির পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। রওজা শরিফ ও এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুল (সা.)-এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। এটি দুনিয়ায় একমাত্র জান্নাতের অংশ। এ স্থানে স্বতন্ত্র রঙের ধূসর সাদাটে কার্পেট বিছানো থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমার রওজা ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান।’ এখানে প্রবেশ করা মানে জান্নাতে প্রবেশ করা।

রিয়াজুল জান্নাতে ছয়টি বিশেষ ঐতিহাসিক খুঁটি রয়েছে। প্রথম দিকে নবী কারিম (সা.) একটি খেজুরগাছের খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জুমার খুতবা দিতেন। যখন মিম্বর বানানো হলো, তখন তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় এই খুঁটি বিচ্ছেদযন্ত্রণায় কান্না শুরু করে। মসজিদের সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। নবী কারিম (সা.) মিম্বর থেকে নেমে এসে খুঁটির গায়ে হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিলে সে শান্ত হয়। পরে খুঁটিটিকে দাফন করা হয়। এটির নাম উস্তোয়ানা হান্নানা বা ক্রন্দসী খুঁটি। যেখানে হজরত আবু লুবাবা (রা.)-এর তওবা কবুল হয়, সে খুঁটির নাম উস্তোয়ানা আবু লুবাবা।

ইতিকাফের সময় হজরত আয়েশা (রা.) যে জায়গা থেকে জানালার মধ্য দিয়ে নবীজির খেদমত করতেন, সে স্থানের খাম্বার নাম উস্তোয়ানা আয়েশা। ইতিকাফের সময় নবীজি (সা.)-এর জন্য যেখানে বিছানা পাতা হতো, সেখানকার খুঁটির নাম উস্তোয়ানা সারির। যেখানে দাঁড়িয়ে হজরত আলী (রা.) নবীজি (সা.)কে পাহারা দিতেন, সে স্থান উস্তোয়ানা হারেস বা উস্তোয়ানায়ে আলী। যেখানে বসে নবীজি (সা.) দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন, সেখানকার খুঁটির নাম উস্তোয়ানা ওফুদ।

মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজের ইমামতি করতেন, সেই মিহরাবকে মিহরাবুন নবী বলা হয়। হজরত জিবরাইল (আ.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন, সেটি মিহরাবে জিবরাইল নামে পরিচিত।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION