শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিওপি পরিদর্শনে বিজিবি’ র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন রামুতে অটোরিকশা তল্লাশির পর দুই কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ১ ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ আইনের খসড়া অনুমোদন বান্দরবানে কেএনএফের ৫২ সদস্যের ২ দিনের রিমান্ড নাগরিক অধিকারকে আপনারা কুক্ষিগত করে রেখেছেন:রিজভী এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না  পাকিস্তানে বন্ধ টুইটার, কারণ জানাল সরকার জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো নাসির উদ্দিনের মামলায় পরীমনির বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন

শূণ্যরেখার রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিল তুমব্রুতে

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

২০১৭ সালে আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানের সময় ঘরবাড়ি হারিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখা আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। পাঁচ বছর ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) গোলাগুলি ও আগুনের ঘটনায় শেষ আশ্রয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। শূন্যরেখার কাছাকাছি সবকিছু হারিয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে ঠাঁই নিয়েছে কয়েক’শ রোহিঙ্গা পরিবার।

শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে নতুন এই ‘আশ্রয় শিবিরেই’ কথা হয় রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আবদুল মালেকের (৬০) সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘আবার ঘরবাড়ি হারিয়ে পাঁচ বছর আগের সেই জায়গাতেই এসে পৌঁছেছি।’

বিকালে যখন এই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, পাশেই গাছ ও বাঁশ নিয়ে ত্রিপল টানিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করছিলেন রোহিঙ্গাদের আরও কয়েকটি পরিবার। আবার অনেকে আশ্রয়ের একটু জায়গার জন্য বোচকা-পোটলা এদিক-ওদিক ছুটছে। এছাড়াও স্থানীয় বাজারেও অন্যদিনের তুলনায় রোহিঙ্গাদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

আব্দুল মালেক বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা শূন্যরেখায় (জিরো পয়েন্টে) ছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আইসিআরসি আমাদের সুযোগ-সুবিধা দিতো। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আমাদের ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন আমরা মিয়ানমারে ঢুকে যাই। এক রাত থাকার পর আবার বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এই কূলে পার করে দিয়েছে সেই দেশের সরকার। এখন আমরা কোথায় যাবো? এখানে থাকার ব্যবস্থা নেই, নেই খাবার, টয়লেটও। এতে নারী-শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’

ঘরে দেওয়া আগুনে শীতের কাপড়সহ সব পুড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনও খাবারও জোগাড় করতে পারেনি। ঠান্ডায় শিশুরা কাবু হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছোট্ট একটি ভাঙা ত্রিপলের ছাউনিতে বাচ্চাদের নিয়ে তিন পরিবারের ১৯ জন মানুষ গাদাগাদি করে এক জায়গায় থাকছি।’

শুক্রবারও সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ায় গেছে বলেও জানান তিনি।

শূন্যরেখা শিবিরে আগুনে ঘর হারিয়ে পরিবার নিয়ে তুমব্রু বাজারে আশ্রয় খুঁজতে আসা আবু নাসের জানান, ‘শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের মধ্য আমিও ছিলাম। কিন্তু আগুন দিয়ে আমাদের ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিরীহ মানুষ, কোনও পক্ষের না। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, গায়ের পরনের জামা ছাড়া কিছু বের করতে পারেনি। আমার স্ত্রীও অসুস্থ, পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে একটি জায়গা খুঁজছি। এর আগের দিন স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের কাছে একদিন আশ্রয় নিয়েছিলাম।’

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া আব্দুল করিম (৯০) ও আমেনা খাতুন (৭০) দম্পতি। কেমন আছেন জানতে চাইলে বৃদ্ধ করিম বলেন, ‘মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে এসে পৌঁছেছি। এখনও কোথাও স্থায়ী ঠাঁই হলো না। ২০১৭ সালে আগস্টে ঘরবাড়ি হারিয়ে শূন্যরেখায় ঠাঁই হয়েছিল। সেখানে পাঁচ বছর ধরে কোনোভাবে বেঁচে থাকার যুদ্ধটা চলছিল। এখন সেটিও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এখানে স্কুলের বারান্দার কোণায় এক জায়গায় দুজন একসঙ্গে পড়ে আছি, বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছি। শীতের মধ্য খুব কষ্ট হয়। ঠান্ডায় ঘুমাতে না পেরে রাতে বসে থাকতে হয়। তার উপরে নেই খাবারের ব্যবস্থা। এবার বোঝেন, কী অবস্থায় আছি?’

সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তুমব্রু সীমান্তে কোনারপাড়া শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে শুক্রবার সকালেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সীমান্তের আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এর আগে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শূন্যরেখার প্রায় ৫’শ রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে যায়। ফলে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে বেশকিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে শুরু করে।

তুমব্রুর বাজারের দোকানদার নির্মল ধর জানান, ‘গত বুধবার থেকে সীমান্তে থেমে গোলগুলি-আগুন খেলা চলছে। আজকে ভোরেও গোলাগুলি-আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। শূন্যরেখার অনেক রোহিঙ্গা তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে এখন নতুন করে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে ঘরবাড়ি বানাচ্ছে রোহিঙ্গারা। যার কারণে স্কুলের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোলাগুলি-আগুনের ঘটনায় যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ঢুকেছিল, তারাও এপারে আশ্রয় খোঁজছে।’

জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। যাতে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য একাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাজ করছে। তবে কতজন রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সীমান্তের সবাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত আছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার অংশে সে দেশের সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষ চলে। ওই সংঘর্ষে মিয়ানমার অংশ থেকে মর্টার শেল তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ে। সেসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফা প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টারশেল পড়ায় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। তারা জানায়, ভুলবশত মর্টারশেল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়েছিল।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION