ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
মিয়ানমারে আগামীকাল রবিবার (৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশটিতে নিজেদের নাগরিকত্ব ফেরত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতিগত নিধনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা। তারা বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের উচিত নির্বাচনের আগে আমাদের (রোহিঙ্গা) নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।
ক্ষমতাসীন বিতর্কিত নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের হওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর দেশটিতে এটিই প্রথম নির্বাচন।
তবে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠির মাধ্যমে কক্সবাজারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১৪টি সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে জানানো হয়েছিল।
মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান হ্লা থেইনের কাছে লেখা ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের (ইউইসি) উচিত সাধারণ নির্বাচনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া।
এ বিষয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, ‘মিয়ানমারে রবিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশটির নাগরিক হয়েও আমাদের জনগোষ্ঠী এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তার চেয়ে কষ্টের কী আর হতে পারে! এমন নিষ্ঠুরতার শিকার আর কোনও জাতি আছে বলে আমার মনে হয় না।
চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১৪টি সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে একটি চিঠিতে দাবি জানানো হয় নির্বাচনের আগে আমাদের (রোহিঙ্গা) নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে।’
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মিয়ামারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালত বিচারকদের পাশাপাশি দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূতেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে চিঠিতে।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে আমরা যাতে অংশ নিতে পারি সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল চাপ প্রয়োগ করবে, এমনটাই আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, যদিও ইউইসি ও মিয়ানমার সরকার এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গারা নির্বাচনে অংশ নিতে বা ভোট দিতে পারবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু ২০১০ সালের নির্বাচনেও আমরা অংশ নিয়েছি, ভোট দিয়েছি। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় রেজিস্ট্রেশন কার্ড (এনআরসি) এবং পরবর্তীতে সরকারের দেওয়া হোয়াইট কার্ড দেখিয়ে ভোট দিতে পেরেছি আমরা। তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গা বা মুসলিমদের কোনও দল থেকে প্রার্থী হতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শরণার্থীরা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শূন্য রেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘এবারও রোহিঙ্গারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই নীল নকশা তৈরি করে রেখেছে বর্মীরা।’
এদিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরদিন গত ২ জুলাই ইউইসি ঘোষণা করে, বিদেশে বাস করা মিয়ানমারের নাগরিকরা এ বছরের সাধারণ নির্বাচনে অগ্রিম ভোট দিতে পারবেন। ২০১০ ও ২০১৫ সালের নির্বাচনেও প্রবাসীদের ভোটদানের ব্যবস্থা করেছিল মিয়ানমার। এর আগে ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, “নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছে।”
বিশ্লেষক ও রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণ করার পর তাঁরা একটি রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠীতে পরিণত হন। মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শুরুর আগে যাদের পূর্বপুরুষেরা সেখানে ছিলেন, বর্তমানে তারাই শুধু নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। এছাড়া দেশটির ১৩৫টি নৃগোষ্ঠীকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এর মধ্যে নৃগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছে। এ জাতীয় দাবির কারণেই বারবার তাদের বিতাড়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার।
সর্বশেষ ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমার আর্মির নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর গণধর্ষণ-গণহত্যা চলাকালে নতুন করে আট লাখেরও বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এরপরও ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে আছেন, তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি জনগোষ্ঠীর।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারি এবং নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন-এই দুই কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনাও এগোচ্ছে না বলে গত মাসে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.